করবী

অলংকরণ: মাসুক হেলাল
অলংকরণ: মাসুক হেলাল

আমার পূর্ব পুরুষদের মধ্যে কেউ কোনো দিন সরকারি বা আধা সরকারি চাকুরে ছিলেন না। কারণ আমাদের রক্তে শুধু ব্যবসা আর ব্যবসা। সাত পুরুষ ধরেই আমরা জাত ব্যবসায়ী। ব্যবসা ছাড়া আমরা কিছু বুঝি না, দেখিও না। সন্তানদের স্কুল-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াই বটে, কিন্তু সেটার উদ্দেশ্য নেহাত সামাজিকতা রক্ষা করা ছাড়া আর কিছুই না। তবে ব্যবসাপাতি যাই করি না কেন, তা মন দিয়ে করি। ভালোবাসা আর সততার সঙ্গেই করি। বাংলাদেশে আমার বাবার ইট-সিমেন্টের ব্যবসা ছিল। বাবা এই ব্যবসা করে বিশাল নাম করেছিলেন। পরবর্তীকালে তিনি আরও অনেক ব্যবসা খুলেছিলেন যার অন্যতম সহযোগী ছিলাম আমি। এরপর আমি নিউইয়র্কে চলে আসি। কিন্তু নিউইয়র্ক শহর তো আর বাংলাদেশ না। বিষয়টা বুঝতে আমার খুব বেগ পেতে হলো না। এখানে কাজ না করলে জীবন চালানোই কঠিন। বউ সংসার নিয়ে চলব কীভাবে?
আগেই বলেছি ‘কাজ’ করা আমাদের রক্তে নেই। নিউইয়র্ক শহরে দেখি শুধু বিভিন্ন রঙের মানুষ আর মানুষ। সেই বিভিন্ন রঙের সঙ্গে মিলেছে আমাদের বাংলাদেশ থেকে আসা বাদামি বর্ণের মানুষও। আমি লক্ষ্য করে দেখলাম, মানুষগুলো সকাল-বিকাল পাগলের মতো কাজ করছে, টাকা কামাই করছে অথচ তাদের মনে কোনো শান্তি নেই। কেন শান্তি নাই? বিষয়টি নিয়ে এত গভীরভাবে ভাবার কিছু নাই। আমি ব্যবসায়ী মানুষ। আমার চোখকে ফাঁকি দেওয়া কঠিন। মাঝে মাঝে আমি নিজেও আমার চোখকে ফাঁকি দিতে পারি না। চোখ ঠিকই ধরে ফেলে। আমি চিন্তা করে দেখেছি, এই বাঙালি কমিউনিটিতে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো বিয়ে সংক্রান্ত। কেউ তাদের ছেলের জন্য উপযুক্ত মেয়ে খুঁজে পাচ্ছেন না, কেউ আবার তার মেয়ের জন্য ছেলে পাচ্ছেন না। ছেলে থাকেন নিউইয়র্কে অথচ তিনি বিয়ে করবেন বাংলাদেশে গিয়ে। অথবা মেয়ে থাকেন আমেরিকায়, তিনি উপযুক্ত ছেলে খুঁজে পাচ্ছেন না। কত রকমের যে ঝামেলা তার কোনো সীমা-পরিসীমা নেই। এসব ভাবতে ভাবতে মাথায় বুদ্ধিটা খেলে গেল। ঘটকালি ব্যবসা করলে কেমন হয়? বাংলাদেশে সারা জীবন ইট-সিমেন্ট জোড়া দিয়ে বড় বড় বাড়ি বানিয়েছি, নিউইয়র্কে না হয় মানুষের সঙ্গে মানুষের আত্মা জোড়া দিয়ে নতুন কিছু বানাই! এই ভাবনা থেকেই নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসে ‘ঘটক তারা ভাই’ সাইনবোর্ড দিয়ে একটি ব্যবসা খুলে বসেছি।
বুঝতেই পারছেন ঘটকালি ব্যবসা। প্রথম প্রথম গ্রাহক পেতে অসুবিধা হতো, কিন্তু এখন আর তা হয় না। ‘ঘটক তারা ভাই’ এখন একটি ব্র্যান্ডের নাম। নিউইয়র্ক থেকে বোস্টন, ওকলাহোমা, টেক্সাস, শিকাগো সর্বত্রই আমাকে খুঁজে পাবেন। তা ছাড়া অসংখ্য দেশি-বিদেশি বিবাহযোগ্য ছেলেমেয়েদের তথ্য ও ছবি নিয়ে আমার কাছে রয়েছে, ‘তারা ভাই ডট কম’ নামের অসাধারণ একটি ওয়েবসাইট। বিবাহযোগ্য ছেলেমেয়ে কি ঘরে বসিয়ে রাখা যায় বলুন? তাহলে তারা ভাই আছে কোনো দুঃখে? আমার সম্পর্কে এতগুলো কথা আপনাদের সামনে আগে থেকে বলে নেওয়ার পেছনেও আমার একটা ব্যবসায়িক ধান্দা আছে। ধান্দাটা কী জানেন? কে জানে অদূর ভবিষ্যতে আপনাদের মধ্য থেকে কেউ কেউ হয়তো এই তারা ভাইয়ের খোঁজ নিলেও নিতে পারেন।
এবার তারা ভাইয়ের সঙ্গে পরিচিত হওয়া যাক। ভদ্রলোকের পুরো নাম সাইফুর রহমান। ডাক নাম তারা। চুল বেশির ভাগই পাকা। শরীর স্বাস্থ্য ভালো। এই ডিসেম্বরে বয়স ৬৫ বছর হবে। নিউইয়র্কে তিনি বাঙালি কমিউনিটিতে ‘ঘটক তারা ভাই’ নামেই পরিচিত। স্ত্রী নেই, দুই ছেলে আর এক মেয়ে নিয়ে তাঁর সংসার। দুই ছেলেকে নিউইয়র্কেই বিয়ে দিয়েছেন। ছেলেরা দুজনই এখন তাদের নিজেদের ব্যবসাপাতি নিয়ে ব্যস্ত। ঘরে বিবাহযোগ্য মেয়ে। নাম করবী। জ্যাকসন হাইটসের অফিসে প্রায় প্রতিদিনই তার কোনো না কোনো মক্কেল লেগেই থাকে। আজকেও তারা ভাই অনেক ব্যস্ত। বেশ পরিপাটি হয়ে এক ভদ্রমহিলা এসেছেন সেই নিউজার্সির ট্রেনটন শহর থেকে। ছেলেকে বিয়ে করাবেন। কিন্তু মনের মতো মেয়ে খুঁজে পাচ্ছেন না। তারা ভাই যদি একটা গতি করে দিতে পারেন। তারা ভাই এসব কাজ সব সময়ই খুব সততা আর পেশাদারির সঙ্গে করে থাকেন। এবারও তাই করলেন। তিনি ভদ্রমহিলাকে প্রশ্ন করলেন, ‘কেমন মেয়ে চাই? আপনার চাহিদা কী?’
‘এই দরুন দেখতে শুনতে ভালো হতে হবে। গায়ের রং অবশ্যই ফরসা। স্লিম, ভালো বংশ আর শিক্ষিত। এইতো।’ বলেই ভদ্রমহিলা চায়ের কাপে চুমুক দিলেন।
তারা ভাই পেশাদার মানুষ। তিনি ভদ্রমহিলাকে আশ্বস্ত করলেন এই বলে, তার ‘চাহিদা’ অনুযায়ী একটি মেয়ে শিগগিরই তিনি জোগাড় করে দেবেন। ভদ্রমহিলা চোখে কালো সানগ্লাস পরে কায়দা করে শাড়ির আঁচল ঠিক করে ঘটক তারা ভাইয়ের অফিস থেকে বিদায় নিলেন। কিন্তু ভদ্রমহিলা চলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তারা ভাইয়ের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়তে শুরু করল। তিনি বিড় বিড় করে ভদ্রমহিলার কথাগুলো নিজেই বলতে থাকলেন, ‘স্লিম, ভালো বংশ, অবশ্যই ফরসা’। তিনি অবাক হয়ে লক্ষ্য করলেন, সব অভিভাবকই তাদের সম্ভাব্য পুত্রবধূকে ফরসা, স্লিম আর ভালো বংশীয় দেখতে চান। তারা কখনো জানতে চান না, মেয়েটা কেমন অথবা তার রুচির সঙ্গে ছেলেটার রুচি মিলবে কিনা। মেয়েটি সৎ কিনা অথবা তার ব্যক্তিত্ব কেমন, এসব কেউ দেখতে চায় না। হায়! মানুষ যখন চাঁদে যাচ্ছে তখন আমাদের এই বঙ্গদেশীয় সমাজ ভাবছে মেয়েটা ফরসা কিনা! কিন্তু ঘটক তারা ভাই এসব নিয়ে খুব গভীরে যেতে চান না। কেন যাবেন? তাঁর কাজ হলো অর্ডার অনুযায়ী সাপ্লাই দেওয়া। তিনি সেই কাজটিই নিষ্ঠার সঙ্গে করে যাচ্ছেন। কিন্তু ঘটক তারা ভাইয়ের মনটা আজ কেন জানি খারাপ হয়ে গেল। তিনি অফিসে তালা ঝুলিয়ে বাড়ির দিকে পা দিলেন।
বাড়ির কলিং বেল টিপতেই তারা ভাইয়ের মেয়ে করবী দরজা খুলে দিল। মেয়েটা তার বাবার হাত থেকে ছো মেরে ব্যাগটা তুলে হাসিমাখা মুখে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘কী বাবা! আজ আবার মন খারাপ কেন? পাত্রপক্ষ সুন্দরী পাত্রী খুঁজছে বুঝি?’ মেয়েটি তার বাবার পেটের সব কথা যেন শুনতে পায়। তারা ভাই চেয়ারে হেলান দিয়ে মেঝের দিকে তাকিয়ে থাকেন। বেশ বোঝা যায়, তাঁর মনটা খুব বিষণ্ন হয়ে আছে। মেয়েটা এবার বাবার গা ঘেঁষে বসল। বাবা, ‘তুমি কি আমাকে নিয়ে খুব ভাবো?’ তারা ভাই এবার মুখে জোর করে হাসি ফুটিয়ে উত্তর দিলেন, ‘আরে দুর বোকা মেয়ে। তোকে নিয়ে আমি কী ভাবব? তোর মতো এত প্রতিভা আমি খুব কম মেয়ের মধ্যেই দেখেছি। শুধু আমার মেয়ে বলে বলছি না, তোর মতো সুন্দর…’ করবী বাবাকে মাঝ পথেই থামিয়ে দিল। ‘হয়েছে হয়েছে। অনেক বক বক হয়েছে। এবার একটু বিশ্রাম নাও। আমি তোমার প্রিয় ডালপুরি ভেজে নিয়ে আসছি।’ ঘটক তারা ভাই সোফায় বসে চোখ বুজলেন।
এবার করবীর সঙ্গে একটু পরিচিত হওয়া যাক। বয়স ২৮ বছর। গায়ের রং কালো। ছেলেবেলায় জলবসন্ত হওয়ার কারণে মুখে সেই দাগ এখনো স্পষ্ট। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় যেমন শিক্ষিত তেমনি তিনি স্বশিক্ষায় সুশিক্ষিত। অন্য আর সাধারণ দশজন বাঙালি মেয়ের মতোই একজন সাধারণ মেয়ে। বাঙালিদের সংজ্ঞায় তিনি না সুন্দরী, আর না আছে তার বিশেষ কোনো জ্ঞান। করবী সাহিত্য ভালোবাসেন, রান্না করতে ভালোবাসেন, ঘর গোছাতে ভালোবাসেন। সিনেমা দেখেন। এ নিয়েই তার প্রতিদিনের জীবন।
কিন্তু করবীর এই সহজ সরল জীবন এই বাজারে বিক্রি হওয়া এত সহজ না। অন্তত ঘটক তারা ভাই তা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছেন। এখানে সবাই সুন্দরী মেয়ে খোঁজে। একজন মেয়ে যে সবার আগে মানুষ, এই সত্য কথাটি এ পর্যন্ত কারও মুখে তিনি শোনেননি। মেয়ে যেন একটা পণ্য। তাকে সুন্দরী পরির মতো হতেই হবে। তবে এই নিয়ে করবীর মনে কোনো দুঃখ নেই। বরং দুঃখ হয় তার সহজ সরল বাবাকে নিয়েই। বাবা এত ছেলেমেয়েদের বিয়ে দিচ্ছেন অথচ নিয়তির কি পরিহাস! তিনি তাঁর নিজের মেয়েকে কোথাও বিয়ে দিতে পারছেন না!
জ্যাকসন হাইটসে ‘ঘটক তারা ভাই’ দপ্তরে এক অচেনা যুবক কোনো রকম আগাম অ্যাপয়েন্টমেন্ট না নিয়েই তারা ভাইয়ের টেবিলের ঠিক অপর প্রান্তেই বসলেন। অবশ্য এই দৃশ্য তারা ভাইয়ের কাছে নতুন কিছু নয়। অনেক ছেলেমেয়ে তাদের ভবিষ্যৎ সোলমেট খুঁজতে নিজেরাই চলে আসেন। ছেলেটির পরিচয় জানা গেল। তাঁর নাম আকাশ। এখানে বিশ্ববিদ্যালয় পাস করে ফিন্যান্সিয়াল অ্যানালিস্ট হিসেবে কাজ করছেন। প্রায় দুই সপ্তাহ আগে তার মা নিউজার্সির ট্রেনটন থেকে এসেছিলেন পাত্রীর খোঁজে। তিনি তাঁরই ছেলে। তিনি নিজে এসেছেন সরাসরি কথা বলতে। তরুণটিকে অনেক খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখলেন ঘটক তারা ভাই। বাহ! বেশ শিক্ষিত, আধুনিক এবং কী সুন্দর তার কথাবার্তা! এসব ভাবনার মধ্যে আবার তিনি একটু বিরক্তও হলেন। অথচ এই আধুনিকতার পেছনে এই ছেলেটার কতই না অন্ধকার মন মানসিকতা! পাত্রী অবশ্যই যেন ফরসা হয়, পরির মতো সুন্দর হয়, স্লিম হয়—কত কি তাদের আবদার! একটু বিরক্ত হয়েই তারা ভাই বললেন, ‘দেখুন, আপনার মা আপনার হবু পাত্রীর বিষয়ে যে চাহিদা দিয়ে গেছেন, আমি সেভাবে কাজ করছি। তেমন কোনো তথ্য পেলে আমি অবশ্যই আপনাকে জানাব।’ আকাশ এবার মাথা নিচু করে তারা ভাইকে প্রশ্ন করলেন, ‘আমি আপনাদের ওয়েবসাইট ঘেঁটে একটি মেয়ের সন্ধান পেয়েছি। আপনি কী এ বিষয়ে আমাকে সহযোগিতা করতে পারেন?’
অবশ্যই । এটাইতো আমার ব্যবসা। বলুন দেখি কত নম্বর মেয়েটার কথা বলছেন?
আকাশ একটা নম্বর দিল। ২২৯৯৫৪।
তারা ভাই নম্বরটি বিড় বিড় করে উচ্চারণ করতে করতে কম্পিউটারে তথ্যটি দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার মুখটা গম্ভীর হয়ে গেল। তিনি আরও গম্ভীর কণ্ঠে বললেন, ‘আপনার নম্বর ঠিক আছে তো? ২২৯৯৫৪? নাকি কোনো ডিজিট ভুল করেছেন?’
আকাশ বললেন, ‘না না, এটিই ঠিক নম্বর। মেয়ের নাম করবী। ঠিকানা...।’
এবার তারা ভাই বিরক্ত হলেন। বললেন, ‘আপনি এই মেয়েকে কেন বাছাই করলেন? আপনি মেয়েটার জীবনবৃত্তান্ত ঠিকমতো পড়েছেন? সেখানে স্পষ্ট লেখা আছে, মেয়েটির গায়ের রং কালো, মুখে বসন্তের দাগ। শিক্ষিত, বয়স ২৮। অথচ আপনারা চাচ্ছেন সুন্দরী, স্লিম, ফরসা মেয়ে ...।’ কথা বলতে বলতে তারা ভাই রেগে গেলেন। রেগে গেলে তিনি কাঁপতে শুরু করেন। এবার আকাশ চেয়ার থেকে উঠে তারা ভাইয়ের হাত ধরে চেয়ারে বসালেন। বললেন, ‘কিছু মনে করবেন না। আমার মা আমার ভবিষ্যৎ স্ত্রী কেমন হবে সে ব্যাপারে যে চাহিদা দিয়ে গেছেন, সে জন্য আমি খুব লজ্জিত। আমি মনে প্রাণে সে ধরনের কোনো মানুষ নই। আমি চাই, আমার জীবন সঙ্গী এমন একজন মানুষ হবেন, যিনি সৎ আর খুব সাধারণ—এই ঠিক আমার মতোই। আমি সাধারণ জীবনেই বিশ্বাস করি। দেখুন, করবী তার তথ্যে নিজেকে কালো, বেটে, মুখে বসন্তের দাগ—সব তথ্য দিয়েছেন। ভাবতে পারেন একজন মানুষ কতটুকু সৎ হলে সে নিজের সত্য কথা এভাবে বর্ণনা দিতে পারে? আমাকে দয়া করে করবীর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিন। প্লিজ!’
ঘটক তারা ভাই আজ মনে প্রাণে খুবই আনন্দিত! আজ এত ভালো লাগছে কেন? আহা! আকাশটাও কত নীল! তিনি জ্যাকসন হাইটস থেকে এক কেজি চমচম করবীর জন্য কিনে বাড়ির পথ ধরলেন। ঘরে ঢুকতেই মেয়েটা প্রতিদিনের মতো ছোঁ মেরে বাবার ব্যাগটা হাত থেকে নিয়ে নিল। হাতে চমচমের প্যাকেট আর বাবার মুখে হাসি দেখে করবীর চোখে মুখেও দুষ্টুমির হাসি খেলে গেল, ‘কী বাবা! ঘটনা কী? হাতে মিষ্টি আবার মুখেও হাসি? পাত্র-পাত্রীর কি সত্যি সত্যি মিল হচ্ছে বুঝি?’
মেয়ের কথায় হাসলেন ঘটক তারা ভাই। দুই হাত দিয়ে মেয়েকে তার পাশে বসালেন। বললেন, হ্যাঁরে মা, মানুষ এখনো আছেরে মা। এই দেখ আজ কী ঘটনা ঘটল...’ এই বলে ঘটক তারা ভাই তার মেয়ে করবীকে সব কথা খুলে বললেন। তারা ভাইয়ের কথা শুনে এবার করবীর মুখটা খুব গম্ভীর হয়ে গেল। তারা ভাই তাতে খুব অবাক হলেন। কোথায় মেয়েটা খুশি হবে তা না, সে কিনা আরও গম্ভীর হয়ে গেল! এবার মুখ খুলল করবী।
‘বাবা, আমারও খুব ভালো লাগছে যে তুমি আজ একজন যথার্থ ভালো মানুষের সাক্ষাৎ পেয়েছ। ছেলেটা করবীকে পছন্দ করেছে, তার সততাকে ভালোবেসেছে—সবই ভালো খবর। কিন্তু বাবা, তুমি কি তোমার মেয়ের কাছে কখনো জানতে চেয়েছ, সে কি ধরনের ছেলে পছন্দ করে? তার পছন্দ কী? করবী বলে চলে, তোমার পছন্দের পাত্র আমার সঙ্গে দেখা করতে চায়। আমি অবশ্যই তার সঙ্গে দেখা করব। কিন্তু তিনি শুধু আমাকে পছন্দ করলেই চলবে না। আমারও তাঁকে পছন্দ হতে হবে। যদি আমাদের দুজনের পছন্দ এক হয়—তাহলেই আমরা একটা সিদ্ধান্ত নেব। তাই নয় কি?’
সেদিন করবীর এমন কঠিন চেহারা ঘটক তারা ভাই কখনো দেখেননি। শুধু মেয়েকে গর্বের সঙ্গে বুকে জড়িয়ে বললেন, ‘তাই হবে মা। সব মেয়েরাই যদি তোর মতো হতো!’