কবিতা

শুনি ভাঙনের শব্দ

খ্রীষ্টফার পিউরীফিকেশন

চারদিক এখন

কী এক দুর্মর ভয়াল

পালাবদলের করাল গ্রাসে নিপতিত।

দিনরাত কেবল আলো আঁধারির

চোখ ধাঁধানো বিরামহীন তোলপাড়!

অসহায় মানুষের নেই স্বস্তি।

স্বপ্নবাজদের স্বপ্ন ভঙ্গের মর্মন্তুদ নিকেশ।

সব হিসেবকেই ঠেলে দিচ্ছে

উন্মাতাল প্রপাতের গ্রাসের পরিসীমায়।

কী এক নারকীয় চিত্র এই!

এখানে এখন,

নান্দনিক বলে কিছুই নেই।

সুশীল স্নিগ্ধ নিরবচ্ছিন্ন

সেই শ্যামলিমার পরম্পরা নেই।

সবকিছুই ধ্বস্ত! খণ্ডিত! মৃত!

এখন শুদ্ধ অবয়বে

প্রকৃতির সেই মায়াবী আঁচল

বিরান হয়ে আছে।

মানুষ ছুটছে।

ছুটছে ইত্যাকার প্রাণীও।

ভয়াল তাণ্ডবের শিকার

ফ্যাকাশে আকাশ।

বিবর্ণ বনানী।

মরা নদী।

পাখির পালক উড়ছে দিগ্‌বিদিক।

জ্বলন্ত সূর্যের প্রলম্বিত দ্রাঘিমায়

অদৃশ্য অণুজীব, ধাবমান পঙ্গপাল

মানুষের সমাবেশে

প্রাণঘাতী গতিতে ছুটেই চলছে।

মাথার ওপর টাঙানো

নির্ভরতার রঙিন শামিয়ানা

ভেদ করে অনায়াসে আছড়ে পড়ছে

অদৃশ্য দুর্বৃত্ত কাপালিক!

সমূহ অনুভবে জীবনের অনুষঙ্গে

হানছে আঘাত মুহুর্মুহু।

মুহূর্তেই ফুসফুসে উল্লাসে ঝাঁপিয়ে পড়ছে।

মানুষ চিৎকার করে বলছে,

আমরা বাঁচতে চাই!

চাই না আমরা মারি!

দেখতে চাই না মৃত্যুর মিছিল!

শরিক হতে চাই না আর

শ্বাসরুদ্ধ দিব্যরথে চড়ে

অকাতরে মৃত্যুর হাতে সমর্পিত হতে।

কোথায় আমাদের সৃষ্টিকর্তা?

কোথায় আমাদের বিধাতা?

আর কত নীরব হয়ে

নিজস্ব সৃষ্টির এমন সকরুণ দুর্দশা চিত্র

উপভোগ করবেন?

আর কত শুনতে হবে আমাদের

প্রমত্তা প্রলয়ের মুখে

নান্দনিক এই জগতের

অপ্রতিরোধ্য ভাঙনের শব্দ!

ভুলতে পারিনি

দেওয়ান নাসের রাজা

তীব্র অসুখেও ত্রস্ত কাছে যাইনি

ভাবতে পারো ছিলাম বেখবর, সবকিছু ভুলে।

অ্যাম্বুলেন্সে এবং হাসপাতালে তুমি একাকিনী

খরস্রোতা নদী, গাঙচিল এবং বৃষ্টি সাক্ষী

আমি তোমাকে ভুলতে পারিনি।

তোমার পাশে থাকা সুহৃদ, পরম স্বজন

খবরাখবর পেতে উদ্বিগ্ন সবাই যখন অধীর

মেঘের আকাশ ব্যথায় ধূসর, কিছুটা মলিন

সেদিনের অপারগতা তবু ক্ষমা করো, বন্ধু

আমি তোমাকে ভুলতে পারিনি।

অতলান্তিক থেকে উত্তাল ঢেউয়ের কান্না

এবং উড়ে যাওয়া নিঃসঙ্গ পাখির কান্না

সেদিন আমি শুনেছি

তোমার অসুখে দিগ্ভ্রান্ত পথিক

এদিকওদিক করেছে ছোটাছুটি

তোমার অসুখে ম্লান মুখে অফিস করেছে জেসমিন

আর আমার মন খারাপ ছিল

সেদিনও ছিল একটানা বৃষ্টির দিন।

দুঃসংবাদ শুনে মন খারাপ ছিল ডাক্তার, নার্স, সহকর্মীদের এবং জনতার

মনঃকষ্ট নিয়ে অনেকেই দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষায় তবু অধৈর্য হয়নি

এবং যুবক যুবতীরা চুম্বন করেনি সেদিন

এবং আকাশ ভাসিয়ে সোনালি রৌদ্র ওঠেনি।

অন্যের বারান্দায় আজও নিমগ্ন বসে তুমি

অসীম ব্যথা নিয়ে দিনরাত তাই বৃষ্টি দেখেছি

আমার খুব মন খারাপ, আর

সেদিন থেকেই শুরু আকাশের কান্নার দিন।

নির্বাসন নেব

নিঘাত কারিম

মুঠো মুঠো স্বপ্ন সুখ ভরে নেব এই পরানের গহিনে

শিশির ভেজা ঝালরে নেব হীরক চূর্ণ প্রেম

কোনো এক প্রাগৈতিহাসিক প্রহরে লিখে নেব

চাঁদ আর চকোরের ইতিহাস

যাকে জোছনা ছুঁতে পারেনি

বৃক্ষপল্লবছায়ে দারুচিনির ঘ্রাণে ভেসে যাব রজতধারায়

বৃষ্টি যাকে ভেজাতে পারেনি

আকণ্ঠ ডুবে যাব ধ্রুপদি আকাশের সন্ধ্যাবিরে

স্নান করে নেব ধোঁয়াশা কুহেলিকার ধূপে

কেশবিন্যাসে জড়িয়ে নেব মেঘের প্রলেপ

কস্তুরি সুগন্ধ ভরিয়ে নেব মৃগনাভ থেকে

সমুদ্রের এক নির্জন দ্বীপে পাহাড়ের মৌনতায়

জোনাকির আলোয় নির্বাসন নেব

আমি নির্বাসন নেব

রাত্রির গভীরে কোনো এক আরণ্যক ঠিকানায়।