দক্ষিণ কোরিয়ার দক্ষিণ জল্লা প্রদেশ দেশটির দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে অবস্থিত। এখানকার সমুদ্রে ছোট-বড় অনেক দ্বীপ রয়েছে। দ্বীপগুলো কখনো সেতু দিয়ে, কখনোবা ফেরি দিয়ে একটা আরেকটার সঙ্গে সংযুক্ত। কিন্তু দক্ষিণ কোরিয়ার এ অঞ্চলের দ্বীপগুলো বা সমুদ্র বা বেলাভূমি পর্যটকদের কাছে খুব বেশি পরিচিত নয়।
২০১৯ সালে দক্ষিণ জল্লার প্রাদেশিক সরকার চিন্তা করল, এ অঞ্চলগুলোকে পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় করতে কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এই অঞ্চলের অনেক দ্বীপ নিয়ে একটি জেলা হলো সিনান। এই জেলার ‘বানওয়াল দ্বীপ’—যার অর্থ হলো ‘অর্ধচন্দ্রাকৃতি দ্বীপ’—সৌন্দর্যে অনন্য। একই বছরের আগস্ট মাসে দক্ষিণ জল্লার প্রাদেশিক সরকার এবং সিনান জেলা পাশাপাশি ছোট দুটি দ্বীপকে (বানওয়াল ও বাকজি দ্বীপ) একত্রে ‘পার্পল আইল্যান্ড’ বা বেগুনি দ্বীপে রূপান্তর করার কাজ শুরু করে।
প্রাথমিক ধাপে এ দুটি দ্বীপকে এক করার জন্য অত্যন্ত আকর্ষণীয় একটি ‘পার্পল ব্রিজ’ নির্মাণ করা হয়, যার মধ্য দিয়ে হেঁটে দ্বীপের সৌন্দর্য উপভোগ করা যায় এবং সমুদ্রে জোয়ার-ভাটার দৃশ্য দেখা যায়। তার সঙ্গে চার হাজার ল্যাভেন্ডারগাছ রোপণ করা হলো। বেগুনি রঙের ল্যাভেন্ডার ফুল অত্যন্ত আকর্ষণীয়। এ ছাড়া বেগুনি রঙের অন্য অনেক ফুলগাছও রোপণ করা হলো দ্বীপটিতে। ধীরে ধীরে দ্বীপটি হয়ে উঠল সৌন্দর্যে ভরপুর।
এখানে প্রতিটি বাড়ির ছাদের রং, রাস্তাঘাটের রেলিং, টেলিফোন বুথ, ব্যক্তিগত ও পাবলিক গাড়ি, মোটরমাইক, পাবলিক টয়লেট, ডাস্টবিন থেকে শুরু করে সব স্থাপনার রং বেগুনি করার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে কর্তৃপক্ষ। বেগুনি দ্বীপটিতে যেতে প্রায় পাঁচ কিলোমিটারের একটি ঝুলন্ত সেতু পার হয়ে যেতে হয়। সেতুটিতে রাতের বেলা বেগুনি রঙের সৌন্দর্য খেলা করে।
২০১৯ সাল পার হয়ে ২০২০ সাল আসার পর করোনার প্রভাবে সারা বিশ্বের মতো কোরিয়ার ভ্রমণপিপাসু মানুষ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা পেলেন। ইচ্ছা হলেই যেকোনো দ্বীপে বা সমুদ্রে বা বনে-জঙ্গলে যেতে পারছেন না। কিন্তু কর্তৃপক্ষ এ বর্ণিল দ্বীপে নিষেধাজ্ঞা দেয়নি এখনো।
করোনার প্রভাব, নতুন এবং সিউল থেকে দূরবর্তী হওয়ায় এখনো সেখানে লোকসমাগম খুব বেশি হয়। কিন্তু দ্বীপটির সৌন্দর্য ও ব্যবস্থাপনার দিকে খেয়াল করলে বলা যায়, অদূর ভবিষ্যতে এটি মানুষের ভ্রমণতালিকার ওপর দিকেই থাকবে।
দ্বীপটি যদিও প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবস্থিত, কিন্তু উন্নত যোগাযোগব্যবস্থার কারণে সিউল থেকে দ্রুতই পৌঁছে যাওয়া যায়। অল্প টাকার বিনিময়ে রাত্রিযাপনেরও ব্যবস্থা রয়েছে সেখানে। দক্ষিণ কোরিয়া ঘুরতে এলে এটিকে ভ্রমণতালিকায় রাখা যায় নিঃসন্দেহে।
লেখক: কৃষি ও জৈবপ্রযুক্তি গবেষক