ওমিক্রন-আতঙ্কে আমাদের করণীয় কী

করোনাভাইরাস
প্রতীকী ছবি

ভারতে ঘাপটি মেরে থাকা করোনার ডেলটা ধরন কুম্ভ মেলার সুযোগে বিশ্বব্যাপী তাণ্ডব চালিয়ে এখন যৌবন হারিয়ে বেশ শান্ত হয়ে এসেছে; বিশ্বব্যাপী স্বাভাবিক অবস্থাও হাতছানি দিচ্ছে। তবে এর শঙ্কা আমাদের কখনো পিছু ছাড়েনি। এটি আবারও সংকট সৃষ্টির আশঙ্কা তৈরি করেছে। অতি সম্প্রতি দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রাপ্ত করোনার নতুন ধরন বি.১.১.৫২৯ ওমিক্রন নাম ধারণ করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক পঞ্চম ভিওসি, অর্থাৎ ৫ নম্বর ভেরিয়েন্ট অব কনসার্ন বা বদ ধরন হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।

আলফা, বেটা, গামা আর ডেলটার চেয়ে ওমিক্রনের দ্রুত সংক্রমণ ছড়ানোর সক্ষমতা আর টিকা ফাঁকি দেওয়ার প্রবল আশঙ্কার মধ্যে বিশ্বব্যাপী সতর্ক অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সুনির্দিষ্টভাবে ওমিক্রনের আচরণ কতটা ভয়াবহ হতে পারে, ডেলটার চেয়েও বদ হতে পারে কি না, তা জানতে হলে আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে।

করোনার এই ধরনে ব্যাপকভাবে মিউটেশন ঘটেছে, ৫০টি মিউটেশনের দেখা মিলেছে। চিন্তার কারণ হচ্ছে স্পাইক প্রোটিনে সংঘটিত মিউটেশনের সংখ্যা এযাবৎ প্রাপ্ত ভিওসিগুলোর মধ্যে সর্বাধিক; স্পাইক প্রোটিনের জিনে ৩২টি মিউটেশন পাওয়া গিয়েছে। স্পাইক প্রোটিন ভাইরাসটির সংক্রমণ আর টিকার মাধ্যমে প্রতিরক্ষাব্যবস্থায় মূল ভূমিকা পালন করার কারণে এ অংশে ব্যাপক পরিবর্তন ভাবনার কারণ তো বটেই। স্পাইক প্রোটিনে অধিক মাত্রার মিউটেশন সংক্রমণ আর টিকা প্রতিরক্ষায় কতটা ঝামেলা বাধাতে পারে, তা জানতে হলে বিজ্ঞানীদের আরও কিছুদিন সময় দিতে হবে।

করোনাভাইরাসের নতুন একটি ধরন শনাক্ত হওয়ার পর বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে
ছবি: রয়টার্স

কোভিড ব্যবস্থাপনায় বিশ্ব নানাবিধ ভুলভ্রান্তির মধ্য দিয়ে সংকট অতিক্রম করেছে। ভুল থেকে শিক্ষা নেওয়া জরুরি। ওমিক্রন সম্পর্কে আরও সুনির্দিষ্ট বৈজ্ঞানিক তথ্য-উপাত্ত আসার আগপর্যন্ত আমাদের কঠোর সতর্কতার মধ্যে থাকতে হবে। ওমিক্রন যাতে ছড়াতে না পারে, নিশ্ছিদ্র ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে। কানটি জায়গামতো আছে কি না, তা দেখার পাশাপাশি চিলের দিকেও সতর্ক নজর রাখতে হবে।

ওমিক্রনের প্রথম দেখা মেলে ১১ নভেম্বর বতসোয়ানাতে। দক্ষিণ আফ্রিকায় এ পর্যন্ত বেশ কিছু পজিটিভ কেস পাওয়া গেছে এবং একজন যাত্রীর মাধ্যমে হংকং পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। বেলজিয়ামে ওমিক্রনে আক্রান্ত একজন যাত্রী মিলেছে, যিনি মিসর ও তুরস্কে ছিলেন, দক্ষিণ আফ্রিকাতে নয়। ইসরায়েলেও দেখা মিলেছে ওমিক্রনের। অর্থাৎ ওমিক্রনের প্রাথমিক গ্লোবাল ওরিয়েন্টেশন হয়ে গেছে। দক্ষিণ আফ্রিকায় কোভিডের সংক্রমণ কমই ছিল, হঠাৎ বাড়তে শুরু করেছে।

ইউরোপের অনেক দেশ, আমেরিকা, কানাডা ও জাপান ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা, বতসোয়ানা, লেসোথো, জিম্বাবুয়ে, নামিবিয়ার ওপর।

বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ২০২০ সালের মার্চ-এপ্রিলে ইতালি থেকে করোনা আমদানির বিষয়টি আমাদের মাথায় রাখতে হবে। এ মুহূর্তে কোভিড নিয়ন্ত্রণে আমাদের লজিস্টিক প্রথম সময়ের চেয়ে অনেক উন্নত। ভুল করা যাবে না, বিমানবন্দরে কঠোর নজরদারি প্রয়োজন। প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে আকাশ, স্থল আর জলপথে ওমিক্রনের প্রবেশ ঠেকাতে হবে। এ মুহূর্তের কঠোরতা আমাদের নিরাপত্তার জন্য জরুরি। সময় গেলে সাধন হবে না।

কোভিডের আগ্রাসনে সংকটে নিপতিত বিশ্ব অর্থনীতি নতুন আপদ ওমিক্রনে শঙ্কিত। সিঙ্গাপুর, হংকংসহ বিশ্বের অনেক দেশের শেয়ারবাজারে অস্থিরতা লক্ষণীয়। বিজ্ঞানীরাও চিন্তিত, ভেরিয়েন্ট অব কনসার্নকে টপকে গিয়ে ভেরিয়েন্ট অব হাই কন্সিকুয়েন্সের উৎপত্তি হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে যাবে।

ওমিক্রন কতটা ভয়ংকর হতে পারে, মাসখানেকের মধ্যে আমাদের পরিষ্কার ধারণা হয়ে যাবে। আর তাই এই মাসখানেক কঠোর সতর্কতা দিন শেষে আমাদের নিরাপদ রাখবে।

লেখক: কলামিস্ট এবং মাইক্রোবিয়াল বায়োটেকনোলজিস্ট, কানাডার একটি বহুজাতিক করপোরেটে পরিচালক পদে কর্মরত