এলেনের রাজকন্যা

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

১৬ বছর আগের কথা। দূর এক শহরে ফেব্রুয়ারির এক রাতে ঊর্ধ্বশ্বাসে এক যুগল ঘর থেকে বেরিয়ে আসে। হাতে সময় নেই। হাসপাতাল যেতে হবে। সে এক শীতের সন্ধ্যা। আকাশ থেকে ক্ষীণ চাঁদের আলো পথপাশে তরু শ্রেণির শীর্ষে তখনও অনেকটা নিষ্প্রভ।
তড়িঘড়ি করে দ্রুতপায়ে তারা ছুটে চলে হাসপাতাল কক্ষে। এ অস্থিরতায় নিজেদের পায়ের শব্দ ছাড়া আর যেন কিছুই তাদের কানে বাজে না। যথাসময় চিকিৎসক আসেন। আসেন নার্স। প্রথম শিশুর জন্ম, মনে অজানা আশঙ্কার শেষ নেই। হাসপাতাল কক্ষে বসে অপেক্ষা যেন আরও সংশয়ের। সময় বয়ে যায় অনেক। অবশেষে সব অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে হঠাৎ যেন এক আশার সঞ্চার হয়। এক মৃদু কান্নার শব্দে আনন্দের জোয়ার বয়ে যায় সে কক্ষে। এ যে এক রাজকন্যার জন্ম!
আনন্দের ঢেউ বয়ে যায় মা-বাবার মনে। বাড়িতে ফেরার পর কল্পনাদীপ্ত বাবার মন তখন ছুটে চলে দিগন্তের সীমানায়। আকাশে যেন বাতাসের মৃদু গান শুনতে পান বাবা। অনন্তযৌবনা এক নদীর দুকূল হতে যেন শুনতে পান ঢেউয়ের মাতন। এ এক বিস্ময়কর অনুভূতি!
শ্রদ্ধা, বিনয় আর লজ্জাই এ রাজবাড়ির ভূষণ। এ অনুশাসনের প্রতি গভীর আস্থা রেখেই রাজকন্যা বড় হতে থাকে দিন দিন। শুধু তা-ই নয়, তার ছোট বোন শুহার প্রতি আদর আর ভালোবাসাও মা-বাবার চোখে তাকে আরও গুণান্বিত করে তোলে। ছোট বোনের সঙ্গে বয়সের ব্যবধানে স্বল্পতা থাকলেও সেখানে তার চলন যথার্থই বড় বোনের মতো।
সত্যি বলতে কি, এ রাজকন্যার সৌন্দর্যের খ্যাতি এলেন শহরের অনেক ললনার মর্মবেদনার কারণ। রূপেগুণে অতুলনীয়া এমন সুন্দরীর দেখা খুব কমই মেলে। একদিনের কথা। এক বকুল ফোটার মৌসুমে বাবা তাকে নিয়ে গেলেন সিপ্রা নদি পাড়ে। সংগ্রহ করলেন অনেক বকুল ফুল। সাধ্যমতো পুরস্কৃত করতে চাইলেন তাকে। রাজকন্যা সব পুরস্কারের প্রতি অনাগ্রহ প্রকাশ করলেন। শুধু আগ্রহ প্রকাশ করলেন মানুষ আর মানবতার প্রতি। জ্ঞানপিপাসা তাকে নিয়ে গেল খ্যাতির চূড়ায়। ভাষার প্রতি এল অনেক দখল। অনেক বই পড়ে শেষ করল। তার পছন্দনীয় লেখকের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন স্তিভেন কিং এবং ওমর খৈয়াম। একদিন সবাইকে অবাক করে দিয়ে লিখে ফেলল তার ছোটগল্পের বই। প্রথম প্রকাশনা হলো যখন সে চতুর্থ শ্রেণিতে অধ্যয়নরত। পড়াশোনার পাশাপাশি আবার রপ্ত করল বেহালা।

এমনি করে দিন যায়। যায় মাস। বছর গড়িয়ে আসে। বসন্তে আসে নবজীবনের উত্তরণ। শরৎ আসে। আসে শীত। শুভ্র তুষার মেলায় ঢেকে যায় রাজকন্যার প্রাসাদ। আসে নতুন বছর। আজ সে ষোড়শী।
মা-বাবার সংসারে নিমেষেই যেন ১৬ বছর কেটে যায়। এক অশান্ত ঢেউ বয়ে যায় তাদের মনে। কন্যা বেড়ে উঠেছে। জীবনের বাকি দিনগুলোতে তবুও তাদের কন্যা তাদের প্রাণে অম্লান এবং চিরসবুজ হয়ে থাকবে। আশীর্বাদ আর রাজমুকুট পরার সময় যেন ঘনিয়ে আসে। আজ ১৬ বছর বয়সেই তার পরিকল্পনা প্রয়োজন। এক অবসরে পরিকল্পনার প্রয়োজনে এ যুগল পার্কে কিছু সময় কাটায়। এখানে বসেই তারা রাজকীয় অতিথিবৃন্দের তালিকা তৈরি করে। যথারীতি বিরাট এক ভোজের আয়জন করা হয়। সুস্বাদু খাবারের তালিকায় থাকে পোলাও, কোরমা, কালিয়া, কোপ্তা, আরও কত কী!
বাবার অশান্ত মন কল্পনায় উদ্দীপ্ত হয়ে ওঠে। মনে হয় রাজকন্যার জন্য কে যেন এক অদৃশ্য হাতে মণিমুক্তায় খচিত এক মুকুট এনে দেয় তাঁর হাতে। এ মুকুট পরিধানেই সব সংশয়ের পরিত্রাণ। এ মুকুটে আছে ঐশ্বরিক শক্তি। এ মুকুট যেন অশুভ শক্তি আর শত্রুর জন্য বিপৎসংকেত। মায়ের মনও কল্পনায় উদ্দীপ্ত। এক রাজার কুমার তার স্বপ্নে দেখা রাজ কন্যার খোঁজে যখন দুর্বার বেগে ঘোড়া ছোটাবে, তাকে নিশ্চয়ই এলেন শহরে এসে থমকে দাঁড়াতে হবে! বলতে ভুলি না যেন রাজকন্যার নাম সাব্রিনা। প্রণয়সূত্রে আবদ্ধ এ রাজকন্যা এলেনের রানি হয়ে তার দেশ শাসন করবে বহু বছর। আর মানবতার সেবায় তার নাম লেখা হবে ইতিহাসের পাতায়।
(ডালাস, টেক্সাস, যুক্তরাষ্ট্র ৷ ই–মেইল: bhsattar@yahoo. com)