একগুচ্ছ কবিতা

অলংকরণ: মাসুক হেলাল
অলংকরণ: মাসুক হেলাল


জবাবদিহিতা

ওভাবে তাকালে; হয়তো মুগ্ধ হতে!
মুগ্ধতা দেখতে পেতাম, তোমার চোখে
তবুও তাকাইনি!
তোমার দৃষ্টি, পুরো পৃথিবী জুড়ে; বিছিয়ে দেওয়া গালিচা
দাঁড়িয়ে থেকেছে নীরব; চলে যাওয়া পথে
বিদায় সংবর্ধনা জানাতে।
ফিরে আসিনি তোমার মুঠো ভরা জারুল ফুলগুলো নিতে,
পিছু ফিরেও আর দেখিনি তোমাকে।
হয়তো কাঁদছিলে নিভৃতে,
হয়তো চেয়েছিলে নিতে; আত্মহননের পথ,
তবুও চাইনি কেউ আমার জীবনে জড়াক।
আমার স্পর্শ পেতে; ছড়িয়ে দেওয়া তোমার হাত
আর শার্ট ভিজে যাওয়া কান্নার দাগ
দৃষ্টিগোচর হয়েছিল ঠিকই,
তবুও তোমার স্পর্শের বাইরেই থেকেছি।
আমি চাইনি ঘর বাঁধতে, আর তাই চাইনি
শারীরিক সম্পর্কে জড়াতে।
মানসিক সম্পর্ক থেকেও দূরে থেকেছি ঠিক এই ভেবে,
যা প্রাপ্য; তা-ই-তো পাব! এর বেশি চেয়ে আর কী হবে?
যা এখন কেউ দেবে, তা যদি দিয়ে চিরতরে সরে যায়?
তাহলে তো আমার এ হাসি ফুৎকারে নিভে যাবে!
আর সে আমাকে যত টুকুন দিল, তার ভাগ পড়ে যাবে কমতিতে,
সে দেওয়ায় অপূর্ণতা থেকে যাবে তার; জীবন সঙ্গীকে।

প্রাপ্তিতে অপ্রাপ্তি যোগ

কত কিছুই তো পেলে!
গাড়ি বাড়ি, টাকা কড়ি,
ব্যাংক ব্যালেন্স, জমিদারি।
সুন্দরীদের ঘিরে থাকার ফুর্তি!
পদবি, পদের আহামরি।
কামনার খোরাক মাংসের পরতে পরতে,
যেখানে যত টুকুন মেলে; লাভ আর লোভের ফুরসত।
এত পেয়েও; পেলে কী সেই আসল?
সব পেয়েও; কিছুই পেলে না!

অবজ্ঞা

হৃদয় ভেঙে গেছে সেই কবে!
ফাটল বেয়ে বয়ে চলা; রক্ত-জলের নির্যাস
অনুভূতি মৃত্তিকায় ফুটিয়ে গেছে কতক আশ্চর্য ফুল,
তোমার কোচর থেকে; ঝরে পড়েছিল; তাদের পরাগ মুকুল,
যা আমাকে দিতে না চেয়েও, অবহেলা ভরে দিয়েছ।

বিশুদ্ধ জলে যার অরুচি

নর্দমার জলে স্নান করা যার রুচি,
তার কী আর চলে; বিশুদ্ধ জলে?
নাক ডুবিয়ে পান করা তার মতি,
নোংরার ঘ্রাণ পেলে।

বিশ্বাসে আপন পর

বিশ্বাসের তরী ভাসিয়ে; বহুদূর এসে জেনেছে—
ভুল করে; একক নৌপথে সে পাড়ি জমিয়েছে,
জলের স্রোতে সত্য ছিল, গতির আবেগে ছিল যদিও সারল্য,
এসবের অর্থ নাকি স্রেফ বোকামো!
এক নৌকোরই স্বাদ নেওয়া নাকি উচিত বহু নদীর,
এক বইঠারও দক্ষতা অর্জন জরুরি।
হরেক জলযানে চড়ে, অনেক জলপথে তাই
নাবিক হয় জলচারী।
মানুষ যা চায় তা বিশ্বাসের গুনেই পায়,
আসল প্রাপ্তিতে তো নগদ ফাঁকি!
বিশ্বাস করলাম তাই সাথে আছি,
যেখানে যাই, থাকি কাছাকাছি।
বিশ্বাস হারালে, পাশে থেকেও; নই কেউ কারও
রাখীবন্ধনও পারে না রাখতে তারে; বাঁধন দিয়েও।
সম্পর্কে ‘আপন’ তখন নাম সম্বোধন
পাশাপাশি শুয়েও তুমি দূর, তুমি পর,
ঘর আর আমার নয় ঘর...।

নিবেদিতা পুণ্যি সঞ্চারিণী: দাম্মাম, সৌদি আরব।