ইতিহাসের ভয়াবহতম মহামারিতে বিপর্যস্ত দেশের অর্থনীতি বেগবান করতে মার্কিন সরকার ইতিহাসের সবচেয়ে বড় প্রণোদনা ঘোষণা করেছিল। এর ফলে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বিপর্যস্ত মার্কিন অর্থনীতি। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের মধ্যে যারা নিয়মকানুন মেনে ব্যবসা করেন, তাঁরা সরকারি সুযোগ গ্রহণ করে আবার ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। প্রান্তিক ব্যবসায়ীদের কাছে এখন পর্যাপ্ত অর্থের প্রবাহ। যারা সতর্কভাবে সরকার ঘোষিত অর্থের সঠিক ব্যবহার করতে পারবেন, তাঁদের পেছনে তাকানোর প্রয়োজন হবে না। যদিও পেশাজীবীরা সতর্ক করে দিয়েছেন, নাগরিক সহযোগিতা বা ঋণ হিসেবে গ্রহণ করা অর্থ পেতে কোনো মিথ্যা তথ্য দিলে তার পরিণতি খারাপ হবে। তাই নাগরিক সহযোগিতা বা ঋণ হিসেবে অর্থ নিতে কোনো মিথ্যার আশ্রয় নেওয়া যাবে না।
এমনিতেই যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশিদের কমিউনিটি অনেক ছোট। এর মধ্যে অনেকেই আবার ঐক্যবদ্ধ নন। তাঁরা নানা দল, উপদলে বিভক্ত। বিদেশ বিভুঁইয়ে এই ঋণ সংক্রান্ত বিষয়ে কেউ বিপদে পড়লে পাশে দাঁড়ানোর মানুষও খুব একটা নেই। আর যুক্তরাষ্ট্রের যে কঠোর আইন তাতে কেউ পাশে দাঁড়ালেও সুবিধা করতে পারবে না। তাই বুঝে শুনে ঋণের অর্থ নির্দিষ্ট খাতেই ব্যবহার করতে হবে।
মহামারির জরুরি সময়ে অনেকেই অনুদান বা ঋণ নিয়েছেন ‘ডকু সাইন’-এর মাধ্যমে। স্বাক্ষর করা এসব কাগজে কঠিন সব শর্তের কথা অনেকেই ভালো করে পড়ে দেখেননি এবং সে অনুযায়ী ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনার প্রস্তুতি নেননি। এসব সুযোগ গ্রহীতাকে ভবিষ্যতে বেশ বিপদে পড়তে হবে বলে মনে করছেন পেশাজীবীরা।
পিপিপি ঋণ বা ইকোনমিক ইনজুরি ডিজাস্টার লোন (ইআইডিএল) গ্রহণকারীদের সরকারি অর্থ ব্যয় করার জন্য যে খাতে ঋণ নিয়েছেন, সেই খাতে সুনির্দিষ্ট নিয়মে তা ব্যবহারের প্রমাণ রাখতে হবে। গৃহীত অনুদান বা ঋণ গ্রহণ করে কেউ যদি তা একই কাজে ব্যবহার না করে দূরের কোনো নগরীতে গিয়ে বাড়ি কেনেন, তাহলে বিপদেই পড়বেন। কারণ, নগদে এসব বাড়ি কেনার অর্থের উৎস খোঁজ করলেই সহজে বের করা যাবে এসবিএ ঋণ বা অনুদানের অর্থ ব্যবহার করা হয়েছে কিনা।
পিপিপি ঋণ যারা গ্রহণ করেছেন, তাঁদের নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মওকুফের আবেদন করতে হবে। মওকুফের আবেদনের নিয়মাবলি অনুসরণ ও নথিপত্র সঠিকভাবে উপস্থাপন করা নিশ্চিত করতে হবে।
এসবিএ ঋণ গ্রহীতাদের জন্য আরেকটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ শর্ত রয়েছে। ২৫ হাজার ডলারের বেশি অঙ্কের ঋণের জন্য ঋণগ্রহীতা ব্যক্তিগতভাবে দায়ী। ব্যবসার নামে ঋণ গ্রহণ করা হলে ব্যক্তিগত দায়দায়িত্বের সম্মতিপত্রে সবাইকে স্বাক্ষর করে ঋণ গ্রহণ করতে হয়েছে। ফলে এ নিয়েও ঋণ গ্রহীতাদের সাবধান থাকতে হবে। ফেডারেল অর্থ মার্কিন জনগণের কর থেকে আসা অর্থ। এই অর্থের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে এর মধ্যেই ফেডারেল নানা সংস্থা তদন্তে নেমে পড়েছে। এর মধ্যে ভুয়া তথ্য দিয়ে পিপিপি ঋণ নেওয়ার অভিযোগে বেশ কিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে এর মধ্যেই বিচারের আওতায় আনা হয়েছে।
বাংলাদেশিরা একটু উন্নত জীবনের প্রত্যাশায় ও সন্তানদের নিশ্চিত ভবিষ্যতের আশায় দেশ ও স্বজনদের ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমায়। শুধু একটু ভুলে তাঁদের এই স্বপ্ন নষ্ট হয়ে যাক তা কেউই চায় না।