উত্তেজনার সার্ফিং মন্দ না

মৃত্যু যখন দরজায় কড়া নাড়ে, তখন ইমেজের ভয় আর কাজ করে না৷ স্মৃতির খাপে মোড়ানো ফেলে আসা জীবনকে ছুঁয়ে দেখি, মেয়ের দিকে তাকিয়ে হাসি। এ যুগের মেয়েরা কত হিসাব-নিকাশ করে চলে৷ পছন্দের মানুষকে ধরে রাখে৷ তার জন্য অপেক্ষা করে ঘর বাঁধার, যতক্ষণ না নিজের পায়ে দাঁড়ায়। এসব দেখে নিজের মায়ের জন্য খুব গিলটি ফিল করি, জীবনে কম যন্ত্রণা দিইনি তাঁকে।
আজ মনে পড়ছে মায়ের কথা৷ মা বলেছিলেন, ‘কী সর্বনাশ করলি? নিজের পায়ে এভাবে কেউ কুড়াল মারে? লেখাপড়া শেষ হয়নি এখনো, এখনই নিজে নিজে বিয়ে করতে বলছে কে তোরে? এই বয়সে এত সাহস কোত্থেকে পাইলি? মানুষ কী বলবে?
আমি চুপ।
দুইটা থাপড় খাওয়ার পর আরেকটা খাওয়ার আগে দৌড় দিই।
বেলা তিনটা বাজে। মহল্লার এক বড় আপার বিয়ে। খোলা মাঠে শামিয়ানা টাঙানো, ভেতরে বিশাল আয়োজন, খাওয়া-দাওয়ায় ভরপুর। টের পাই সকাল থেকে কিছু পেটে পড়েনি৷ কাজি অফিসের পচা মিষ্টি ছাড়া। ভাবি, সকালের এই ঘটনা আম্মার কানে এত দ্রুত পৌঁছাল কেমনে? মাঝখানে আমার পরা, পাশের বাড়ির মাহমুদা আপার কাছ থেকে ধার করা শাড়িটা ছিঁড়ে গেল। হোপ তিনি মাইন্ড করবেন না। সেই বয়সে আমার নিজের কোনো শাড়ি ছিল না। শাড়ি পরার কারণ নিজেকে যাতে বড় বড় লাগে।
খাবার টেবিলে সবার সঙ্গে বসে যাই৷ সুগন্ধি মোটর পোলাও, রোস্ট, রেজালা, বোরহানি। আঁখি ও জলি জিজ্ঞেস করে, ‘কিরে, তুই কই ছিলি? খুঁজতেছিলাম তোরে।’
ওই তো বিয়ে করতে গেছিলাম, উত্তরায়।
কস কী?
আর বলিস না, আম্মা জেনে গেছে, যা-ই হোক খেয়ে নিই, পরে বলব সব।
বাহ, বেশ, নিজের বিয়ের দিনে অন্যের বিয়ে খাও।
জীবনকে কখনো সিরিয়াসলি নিইনি।
সমুদ্রের ঢেউয়ের ওপর দাঁড়িয়ে সুখ-দুঃখ, উত্তেজনার সার্ফিং মন্দ না। কাউকে ক্ষতি না করে নিজের জীবন নিয়ে এক্সপেরিমেন্টের আনন্দ আর কী হতে পারে?