ঈদের খুশিতে নমপেনে আমরা বাংলাদেশিরা
কম্বোডিয়ার নমপেনে প্রতিবারের চেয়ে এবারের ঈদ উদ্যাপন একটু ভিন্নতা পেয়েছিল। গত ১৮ বছরে কখনোই বাংলাদেশের সঙ্গে একই দিন ঈদ উদ্যাপন করতে এখানে দেখিনি। কম্বোডিয়াপ্রবাসী বাংলাদেশি মুসলিমরা সচরাচর সৌদি আরবের সঙ্গে দিনক্ষণ মিলিয়ে ঈদ উৎসব উদ্যাপন করে থাকেন। এবার আর তা হয়নি। ৩০ রোজা পূর্ণ করে ঈদ হলো অনেক দিন পর। অর্থাৎ এবার সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে রোজা শুরু হলেও ঈদ উদ্যাপিত হয়েছে বাংলাদেশের সঙ্গে একই দিন।
সোনালি সূর্যস্নাত বৃষ্টিহীন একটি সহাস্য সকাল ঈদের উৎসবে আনন্দের নতুন ব্যঞ্জনসংযোগ ঘটাতে বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করেনি প্রকৃতি। কয়েক দিনের হালকা বৃষ্টির কারণে আবহাওয়াটা বর্তমানে এখানে বেশ উপভোগ্য।
আমরা যারা কম্বোডিয়াতে আছি, তাদের বেশির ভাগই নানা কারণে পরিবার ছাড়া বসবাস করছি এখানে। বছরে কিছু কিছুদিন বা পর্ব আসে, যখন পরিবারের সঙ্গে মিলিত হওয়ার আকাঙ্ক্ষা প্রায় সবার মাঝেই প্রবল হয়ে ওঠে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই অনিবার্য কারণবশত তা বাস্তবায়িত হয়ে ওঠে না। আমি যে মুহূর্তে পরিবারের সবাইকে বিশেষ করে নাতিকে নিয়ে ভাবছি, তেমন একটি সময়ে এই প্রবাসে স্বদেশি প্রতিটি মানুষকে একেবারে কাছে টেনে নেওয়ার দুর্দান্ত সুযোগ এল। আমরা সেটাকেই কাজে লাগানোর চেষ্টা করলাম। এখানে যাঁরা পরিবার নিয়ে থাকেন, তাঁদের অধিকাংশই বয়সের দিক থেকে তারুণ্যের হাতছানি থেকে নিজেকে এখনো মুক্তি দিতে পারেননি। ফলে, তারা সব কাজেই অগ্রণী ভূমিকা রাখতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ এবং স্নেহভাজন।
এই ধরুন রোজা মাসে ইফতারির কথাই। পরিবার নেই তো কী হয়েছে। সারাটা রমজান মাস আমরা বুঝতেই পারিনি বাংলাদেশের বাইরে আছি। বাংলাদেশি উপকরণের রকমারি ইফতারির আয়োজন ছিল প্রায় প্রতিদিনের উপহার, এখানে বসবাসকারী প্রতিটি পরিবারে ঘরে ঘরে। জিলাপি, বেগুনি, হালিম, ছোলা–মুড়ি মাখা, ফলের শরবত, খেজুর, থালাভরা নানা রকমের মৌসুমি ফলের সমাহার—কিছুই বাদ যেত না ইফতারির তালিকা থেকে। রোজা শেষে তাই একটু খারাপই লাগছে এই সুযোগগুলো হাত ছাড়া হয়ে যাওয়ার জন্য।
ঈদের দিনে আবার সবার একত্রে নামাজ পড়ার সুযোগ হলো, এটি একটি বড় পাওয়া প্রবাসে। নমপেনের আল সারকাল মসজিদটি এ দেশের সবচেয়ে বড় মসজিদ। সেখানেই আমরা গতকাল (৫ মে) নামাজ আদায় করেছি। নারীদের জন্য নামাজের সুবন্দোবস্ত রয়েছে এখানে।
এখানে ঈদ উপলক্ষে অফিস ছুটি নেই। তাই বসের অনুমতি নিয়ে নামাজে যেতে হয়েছিল। তারপর আবার অফিস। এক ফাঁকে মনিরুল ভাই আর মুন ভাবির বাসায় দুপুরের খাবার দাওয়াতে যোগ দিতে পেরে দারুণ ভালো কেটেছে দিনটি। তবে দুপুরের পর আবার অফিসে যাওয়ার তাড়া থাকায় সবার সঙ্গে খাবার টেবিলে দেখা না হওয়ার মনের কষ্টটা এখনো নীরবে মনের মধ্যে উঁকি মারছে।
সরদার সায়িদ আহমেদ: প্রকৌশলী