ঈদ অভিজ্ঞতা
আমি যখন সিঙ্গাপুরে আসি, তখন পবিত্র ঈদুল আজহার কয়েক সপ্তাহ বাকি ছিল। একটা কনস্ট্রাকশন কোম্পানির কাজে আসি। মোস্তফা প্লাজার কাছে একটা আবাসিক হোটেলে প্রথম পাঁচ থেকে ছয় দিন ছিলাম। এরই মধ্যে স্বদেশি ভাই-বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হয়। তাদের সঙ্গে ঘুরিফিরি। যখন কোম্পানির অধীন চলে আসি, তখন বুঝতে পারি প্রবাসজীবন কাকে বলে।
ভোর ৫টা ৩০ মিনিটে ঘুম থেকে উঠে গাড়ি অনুসরণতে হয়। তারপর সকাল ৬টা থেকে ৭টার মধ্যে কাজের সাইটে ঢুকি। ৭টা ৪৫ মিনিটে টোল মিটিং। ঠিক ৮টায় কাজ শুরু। নিচতলা থেকে অষ্টম তলায় হেঁটে উঠে কাজ করা হয়। রোববার ছাড়া বন্ধ নেই। বেশ কয়েক দিন বাদে পবিত্র ঈদুল আজহা। ঈদকে কেন্দ্র করে তেমন কোনো অনুভূতি কাজ করছে না মনে। যে কাজ করা হয়, সে কাজ শেষে বিশ্রামটাই বড় বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এটাই প্রবাসজীবন।
এভাবে কেটে গেল বেশ কয়েক বছর। তবে এখন খুব ভালো আছি। সেটা অনায়াসে বলতে পারি। মনও ভালো আছে। স্বস্তি কাকে বলে, সেটা বুঝি।
ছোটবেলায় ঈদকে ঘিরে কত আনন্দ ছুঁয়ে যেত মনে। চাঁদ দেখে আনন্দের সীমা থাকত না। প্রতিটি ক্ষণ ভালো লাগা ছুঁয়ে যেত। বাবা নতুন জামা কিনে দিতেন। ঈদের দিন সকালে সে জামা পরা হতো। সহপাঠীদের সঙ্গে ছুটে যেতাম ঈদগাহে। সেখানে ছোট করে মেলা বসত। কত কিছু কেনাকাটা করা হতো। সে কী ভালো লাগা, যা লিখে প্রকাশ করা যাবে না।
নামাজ শেষ করে বাড়ি ফিরে গুরুজনদের সালাম করা। সালামি পাওয়া। পকেটে টাকা আর টাকা। কত ভালো লাগত। আহা কী সুন্দর দিন ছিল, যা এখন শুধু স্বপ্ন কিংবা স্মৃতি। তবে সেই দিনগুলোর কথা মনে হলে বড্ড বেশি ভালো লাগে।
রমজান শেষে যে ঈদ আসে, তার নাম ঈদুল ফিতর। টিভিতে যখন সমবেত কণ্ঠে কাজী নজরুল ইসলামের লেখা ‘ও মোর রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশীর ঈদ...’ গানটি দেখি, তখন তা সত্যি মনের আনন্দ অনেকাংশ বাড়িয়ে দেয়। গানের সুর মনকে দোলা দেয়। হারিয়ে যাই আরেকটি জগতে।
বর্তমানে প্রবাসে আছি। আমি যে কক্ষে বাস করি, সেখানে মোট আটজন বাংলাদেশি ভাই থাকি। সবাই অনেক বেশি ভালো মানুষ। আমার সৌভাগ্য তাদের সান্নিধ্য পেয়ে। অত্যন্ত সৃজনশীল ইতিবাচক মানুষ তারা। এই প্রথম ঈদুল ফিতরের জামাত তাদের সঙ্গে আদায় করব। খাওয়াদাওয়া সবকিছু একসঙ্গে হবে। সব মিলিয়ে বাড়তি আনন্দ ছুঁয়ে যাবে।
প্রতিটি ঈদে পরিবারকে খুব বেশি মনে পড়ে। বাবা–মা, ভাই–বোন ও আত্মীয়স্বজনের মুখ ভেসে ওঠে চোখের সামনে, যা ভুলে থাকা দায়। আমার ঈদ মানে হলো আমার পরিবারের হাসিমুখ।