‘ইচ্ছে থাকিলে উপায় হয় না’

মানুষের জীবনে ইচ্ছার কোনো অন্ত নেই। কিন্তু মানুষ জীবনে তার কতগুলো ইচ্ছা সঠিকভাবে পূরণ করতে পারে? সত্যি হচ্ছে, বাস্তবে মানুষ জীবনের বেশির ভাগ ইচ্ছা–ই অপূর্ণ থেকে যায়। একবার ভেবে দেখুন, সেই ছোটবেলা থেকে আপনার কত কিছু করার ইচ্ছা ছিল। কত কিছু হওয়ার ইচ্ছা ছিল। আবার কত কিছু দেওয়ার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু বর্তমান জীবনে আপনার অতীতের ইচ্ছার প্রতিফলন খুব নগণ্য। তবুও মানুষ ইচ্ছার মাঝে বেঁচে থাকে, কারণ ইচ্ছাই মানুষকে স্বপ্ন দেখায়। আর স্বপ্নই মানুষকে বৃদ্ধ করে। তা না হলে মানুষ বৃদ্ধ হওয়ার এত সাহস পেত না।

সেই ছোটবেলায় আমরা সবাই শুনেছি, ‘ইচ্ছে থাকলে উপায় হয়।’ ইচ্ছে করলে যদি উপায় হতো, তাহলে মানুষের জীবনে চাওয়া–পাওয়ার ঘরে বর্ষাকালের মতো পানি প্রবেশ করত না। আর তাই বুঝি মানুষ যখন তার স্মৃতির কালে প্রবেশ করে, তখন অপূর্ণতার শোকে তার দুই চোখ ভিজে যায়। এসবের বিস্তারিত একটু পরে বলছি। এবার বলি ইচ্ছে করলে যদি উপায় না হয়, তাহলে কী করলে উপায় হয়। উত্তরটি আসলে একটি শব্দের। আর সেটি হচ্ছে ‘সমস্যা’। সমস্যায় পড়িলে উপায় হয়—ইচ্ছে থাকিলে না। মানুষ যত দিন না সমস্যায় পড়বে, তত দিন তার কোনো কর্মই সিদ্ধ হয় না।

সৃষ্টির শুরু থেকেই মানুষের উন্নয়ন মানুষের ইচ্ছাতে সম্ভব হয়নি। বরং সেটি সম্ভব হয়েছে সমস্যা সৃষ্টির মাধ্যমে। পাথর ঘষে আগুন জ্বালানো শেখা কিন্তু সুখাদ্যের অভাব এবং আরাম–আয়েশের জন্যই হয়েছে। প্রাচীন যুগে মানুষ কাঁচা মাংস খেত এবং এতে হয়তো তারা নিজেদের প্রাণী বলে মনে করত বা স্বাদ পেত না। অন্যদিকে, শীতকালে ঠান্ডা লেগে নানা রোগে তারা মারা যেত। আর এসব সমস্যা সৃষ্টির ফলেই তারা আগুন জ্বালানো শিখেছে।

এবার বলি, কেন মানুষ যখন তার স্মৃতির কালে প্রবেশ করলে অপূর্ণতার শোকে দুই চোখ ভিজে যায়। মানুষের জীবনে প্রধানত পাঁচটি সমস্যা থাকে। এক. তিনবেলা পেটফুরে খাওয়া, দুই. নিত্য নতুন বস্ত্র পরিধান করা, তিন. নিজের একটি বাড়ি বা ঘর থাকা, চার. পড়াশোনায় ভালো করা বা জ্ঞানী হওয়া, এবং পাঁচ. স্বাস্থ্য ভালো থাকা বা চিকিৎসা করার ক্ষমতা থাকা।

এই পাঁচটি সমস্যার সমাধান যার জীবনে হয় না, সে অন্য কিছু নিয়ে শত ইচ্ছা করলেও উপায় হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম। আর যদি এই পাঁচ সমস্যার মধ্যেও কেউ অন্য কিছু ইচ্ছে করার পর উপায় খুঁজে পায়, তাহলে সে ইতিহাসের পাতায় লেখা থাকবে। সেদিকে নাইবা বিস্তারিত বললাম। কমবেশি সবার জীবনে এই পাঁচটি সমস্যার অন্তত একটি হলেও থাকে। আর মানুষ তার জীবনের বেশির ভাগ সময়ই এই পাঁচটি সমস্যার পেছনে কাটিয়ে দেয়। তাই তাদের অন্য সুপ্ত ইচ্ছের বাস্তবায়ন করার সময় বা সামর্থ্য থাকে না। যেমন—তিনবেলা খাবারের পেছনে ছুটতে গিয়ে ধনী হওয়ার ইচ্ছেটা অপূর্ণ থেকে যায়। নিত্য নতুন বস্ত্র পরিধান করার সামর্থ্য না থাকার ফলে সমাজে আকর্ষণীয় হয়ে ওঠার ইচ্ছা পূরণ হয় না। নিজের একটি বাড়ি হবে বলে সঞ্চয় করতে করতে ঠিকমতো তিনবেলা না খেতে পারার ইচ্ছেটা অপূর্ণ থেকে যায়, আবার পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে গিয়ে জীবনের ভালোবাসার মানুষটিকে না পাওয়া। এমনকি প্রচুর অর্থ থাকার পরও স্বাস্থ্য খারাপের কারণে জীবনকে উপভোগ করতে না পারা।

মানুষ তার জীবনে প্রতিনিয়ত এই পাঁচ সমস্যার পেছনে ছুটে এবং বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সে সফল হয়। কারণ, মানুষ সমস্যা সমাধানে বেশ দক্ষ। যেমন—কষ্টকর বন্যার মধ্যে কৃষকের বেঁচে থাকা, দুর্ঘটনায় হাত-পা হারিয়ে শ্রমিকের দিন চলা, এমনকি নানা রোগে জর্জরিত ধনীর সম্পদ বৃদ্ধির প্রচেষ্টা।

কেন মানুষ তাদের জীবনে মূলত পাঁচটি সমস্যার সমাধান করতে সফল হয়? কারণ, এতে সুখ নামক মরীচিকা লুকিয়ে থাকে। তেমনি, আমাদের জীবনের নানা ইচ্ছাগুলোকে সমস্যায় পরিণত করতে পারলে সে সব সমস্যা আমাদের প্রতিনিয়ত দুঃখ দিতে থাকবে। আর যে ইচ্ছা দুঃখের কারণ হয়, সেই ইচ্ছাই কেবল উপায়ে পরিণত হয়।