আরব সাগরে একদিন

সৈকতে ছবি তোলা

প্রবাসে কর্মব্যস্ততার মধ্যে একটুখানি প্রশান্তির ছোঁয়া পাওয়া বড়ই দুষ্কর। সারা দিন কাজ শেষে রাতে আবার রান্না! শুক্রবার ডিউটি না থাকলেও সময় কাটে ঘুমের ঘোরে। ঈদ চলে গেল, কিন্তু করোনায় ঈদের আমেজও নেই প্রবাসীদের মধ্যে।

অনেক দিন কোথাও ঘুরতে যাওয়া হয় না। হঠাৎ বিডি ইন কুয়েত পেজের অ্যাডমিন শহিদুল ভাই সবাইকে আমন্ত্রণ করলেন, কুয়েত আরব সাগরে ঘুরতে যাবেন। ‘কুয়েত প্রবাসী’ গ্রুপ এবং ‘বিডি ইন কুয়েত’ গ্রুপের সব সদস্য তাতে সম্মতি জানালেন। সবকিছু ঠিকঠাক রেখে সাইফ রুবেল, জনি, আমিনুল, সিফাত, শহিদুল, মামুন, রুবেল হাসানসহ আমরা প্রায় আটজন মিলে রাত নয়টায় রওনা হলাম বিনায়দা বিচে।

আমাদের উদ্দেশ্য ছিল রাতের খাবার ওখানে খাব। এর জন্য যা যা প্রয়োজন, সব নিয়ে নিলাম। রাত ১০টায় আমরা পৌঁছে গেলাম বিনায়দা। ওখানে আমাদের পরিচিত এক চাচা ছিলেন। যিনি ওই জায়গায় ডিউটি করেন। আমরা সবাই ওনার বাসায় উঠলাম। আমাদের ইচ্ছা, রাতের সৈকত এবং সূর্যোদয় দেখব।

সৈকতে লেখকসহ অন্যরা

জনি ও মামুন ভাইয়ের রান্না করা রাতের সুস্বাদু খাবার শেষ করে সবাই সৈকতে নামলাম। তখন রাত দুইটা বাজে। আমরা যে বাসায় উঠছি, সেটা একদম সৈকতের পাশাপাশি ছিল।

এখানে কুয়েতের স্থানীয় বাসিন্দারা নিজ বাড়ি থাকা সত্ত্বেও আরব সাগরের কূলে দ্বিতীয় বাড়ি তৈরি করেন। যাতে সব সময় এসে সাগরের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন। যত দূর চোখ যায় শুধু পানি আর পানি। ঢেউয়ের গর্জন মন কেড়ে নেওয়ার মতো। জলরাশির খেলা আর হিমেল ঠান্ডা হাওয়া ধেয়ে আসছে দুই পাশ থেকে। সুনসান রাতের সমুদ্র যেন আলাদা রূপ ধারণ করল। ঢেউগুলো যেন আরও কাছে এসে আছড়ে পড়ছে। রাতের আঁধারে ছবি তোলা আমাদের জন্য সম্ভব হয়নি। কিছুক্ষণ পর ফজরের আজান।

সূর্যোদয়ের এ মনোরম দৃশ্য ক্যামেরাবন্দী

নামাজ শেষ হতে না হতে দেখা গেল, দিনের আলোয় আলোকিত হতে যাচ্ছে চারপাশ। কিছুক্ষণ পর সূর্য উঠবে। আমরা সবাই নেমে পড়লাম সমুদ্রে। আমাদের জন্য সমুদ্রের কূলে একটা নৌকা রাখা ছিল। ওটা নামিয়ে দিলাম সাগরে। এবার কেউ সাঁতার কাটছেন, কেউ নৌকা চালাচ্ছেন আবার কেউবা ছবি তুলছেন। সবাই নামলেও আমাদের মধ্যে থাকা রুবেল ভাই পানিতে নামেননি। উনি সাঁতার জানেন না, তাই ভয় পাচ্ছেন। সে জন্য উনি ভিডিও নিয়ে ব্যস্ত। সূর্যোদয়ের এই মনোরম দৃশ্যটা উনি ক্যামেরাবন্দী করে রাখলেন।

অনেকক্ষণ সৈকতে মজামাস্তিতে মেতে উঠেছেন সবাই। গরমে শীতল পানিতে গোসল করা, সাঁতার কাটা যেন এক অন্য রকম অনুভূতি। ধীরে ধীরে সূর্যের তাপ বাড়তে লাগল। আমরা আর বেশিক্ষণ থাকতে পারলাম না। সবাই মিলে কয়েকটি গ্রুপ ছবি তুলে বাসায় এসে পুনরায় গোসল করে ঘুমিয়ে পড়লাম। ঘুম থেকে উঠে জুমার নামাজ পড়ে খাবার খেয়ে যে যার কর্মস্থলে রওনা দিলাম। প্রতিদিনের কর্মব্যস্ততার মধ্যে একটি দিন আরব সাগরে ভ্রমণ আমাদের মধ্যে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

**লেখক: জিসান মাহমুদ, কুয়েত