আর কষ্ট দিও না
মহামারি শব্দটির সঙ্গে বিভিন্ন বইয়ের লেখায় পরিচয় ছিল, কিন্তু এর ভয়াবহ রূপের সঙ্গে কখনো জানাশোনা ছিল না। এই জীবনে মহামারির বীভৎসতা দেখতে হবে, কখনো কল্পনাও করিনি। প্লেগের বীভৎসতা বিভিন্ন সিনেমায় দেখেছি, বাস্তবে এর রূপের সঙ্গে কোনো পরিচয় ছিল না।
করোনা আজ দেখাচ্ছে, কত ভয়াবহ হতে পারে একটি অদৃশ্য অণুজীবের কারণে সৃষ্ট এই মহামারি। অনেক কিছুই দেখলাম ছোট্ট এই জীবনে।
দেখেছি, হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে ঘুরে জায়গা না পেয়ে অ্যাম্বুলেন্সের ভেতর বাবার মৃত্যু। মমতাময়ী মাকে বাঁচানোর জন্য নিজের পিঠে অক্সিজেন সিলিন্ডার বেঁধে মোটরসাইকেলে করে হাসপাতালে যাওয়ার দৃশ্য। বোনের আহাজারির মধ্যে ভাইয়ের চিরতরে চলে যাওয়া দেখেছি। ভাইয়ের হাতে, চোখের সামনে অসহায় বোনের মৃত্যুও বাদ যায়নি। অসহায় প্রেমময়ী স্ত্রী তাকিয়ে আছেন স্বামীর দিকে, বেঁচে থাকার একান্ত আর্তি নিয়ে। অসীম ভালোবাসা আর প্রেম নিয়ে যে স্ত্রী সারাজীবন একসঙ্গে থাকার পণ করেছিলেন, তাঁকেও কেড়ে নিয়ে গেল এই মহামারি। চোখের জল ফেলা আর আর্তনাদ ছাড়া কোনোকিছুই করার ছিল না।
স্ত্রীর সবচেয়ে নির্ভরতার স্বামীকেও হারাতে দেখেছি। সারা দিনরাত পাহারা দিয়েও স্ত্রী শুধু তাকিয়ে দেখলেন তাঁর প্রাণের চেয়েও প্রিয় মানুষটির চলে যাওয়া। যাঁর জন্য নিজের প্রাণ দিতেও কোনো দ্বিধা ছিল না, তাঁকেই কি না মহামারি অত্যন্ত নিষ্ঠুরভাবে কেড়ে নিল! এক–একটি মৃত্যু কত পরিবারকে যে অসহায় করেছে, তা বলে শেষ করা যাবে না।
এত কিছুর পরও কি আমরা নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করতে পারি না? একটি অদৃশ্য জীবাণুর সঙ্গে আমরা সংগ্রাম করতে পারি না, তারপরও কি আমরা একই ভাবে চলতে থাকব? আমরা কি পারি না, সবাই মিলে একটি নতুন পৃথিবী গড়ে তুলতে?
নিজেকে আজ খুব তুচ্ছ মনে হচ্ছে, মনে হচ্ছে আমার মধ্যেও যেন কোনো পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছি না। নিজেকে নিজেই প্রশ্ন করি, আমিও তো ছুটে চলেছি গতানুগতিকভাবে। কোথায় আমার প্রাণের স্পন্দন, কোথায় আমার দেশপ্রেম, কোথায় আমার ভালোবাসা? এই যান্ত্রিকতা থেকে কবে মুক্তি পাব?
এই সুন্দর পৃথিবীকে আমি আরও সুন্দর দেখতে চাই। মহামারি তুমি চলে যাও, আর কখনো এসো না। আর কাউকে কষ্ট দিও না।
লেখক: ড. সোহেল আহমদ, ভিয়েনা,অস্ট্রিয়া।