আর কত মৃত্যু হলে শিক্ষা হবে আমাদের

ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপে নভেল করোনা ভাইরাস
ফাইল ছবি

কোনো একটা সিদ্ধান্তে এত গলদ থাকতে পারে সেটার সবচেয়ে বড় উদাহরণ বাংলাদেশ। আপনি লকডাউন দিয়েছেন ঠিক আছে, কিন্তু এর মাঝে অধিকাংশ অফিস খোলা রেখেছেন। সাধারণ মানুষের কথা ভেবে একটা ভালো সিদ্ধান্তের খুব বেশি প্রয়োজন ছিল। যদি আমরা ভারতের সঙ্গে তুলনা করি, তাহলে খুব সহজেই বুঝতে পারি, ভারত যে অবস্থায় ছিল, সেটা পৃথিবীর অন্য সব দেশের চেয়ে কোভিড অবস্থা ভয়ংকর ছিল। যেখানে নিজের চোখের সামনে সারি সারি লাশ দেখেছি। আল্লাহর অশেষ রহমতে বেঁচে আছি।

দুই মাস সম্পূর্ণ লকডাউনের পর ভারত এখন অনেকটা সুস্থ। সেটা সম্ভব হয়েছে একমাত্র যথাযথ সিদ্ধান্তের কারণে। যদিও ভারত সরকার গত ৪০ বছরে এত খারাপ অর্থনীতির মুখে পড়েনি। কিন্তু স্বস্তির খবর হচ্ছে সবকিছু এখন অনেকটা ভালো। ৫০ শতাংশ মানুষ এখন ভ্যাকসিনেটেড, যেটার প্রতি ভারত সরকার সবচেয়ে বেশি জোর দিয়েছে।

প্রথম আলো ফাইল ছবি

বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের চলমান ঢেউ শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় প্রতিদিনই নতুন রোগী শনাক্ত ও মৃত্যুর ক্ষেত্রে রেকর্ড হচ্ছে। গতকাল বুধবার বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, দেশে করোনায় এক দিনে সর্বোচ্চসংখ্যক মানুষের মৃত্যুর নতুন রেকর্ড হয়েছে। দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় (মঙ্গলবার সকাল আটটা থেকে আজ বুধবার সকাল আটটা পর্যন্ত) করোনায় সংক্রমিত ২০১ জনের মৃত্যু হয়েছে। দেশে প্রথমবারের মতো করোনায় এক দিনে মৃত্যু দুই শ ছাড়াল। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে ১১ হাজার ১৬২ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় মোট ৩৫ হাজার ৬৩৯ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষার বিপরীতে রোগী শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ৩১ দশমিক ৩২ শতাংশ।

অপর দিকে ভারতে কোভিড-১৯ যখন হু হু করে বেড়ে চলেছিল, তখন সরকারের অনেক সমালোচনা করা হয়েছে, কারণ ভারতে করোনাভাইরাস সংক্রমণের বাড়বাড়ন্তের জন্য রাজনৈতিক এবং ধর্মীয় সমাবেশকে দায়ী করল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)। সংস্থার তরফে প্রকাশিত করোনাবিষয়ক সাপ্তাহিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘ভারতে কোভিড-১৯ সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের আঘাতের পেছনে রাজনৈতিক জনসভা এবং ধর্মীয় জমায়েতের বড় ভূমিকা রয়েছে।’

করোনার টিকা
ফাইল ছবি: রয়টার্স

এর পরপরই ভারতে সরকার যে কঠোর বিধিনিষেধ প্রজ্ঞাপন করে তা সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে। গত দুই মাসের বেশি সময় কোথাও বের হতে পারিনি। ভারতে পড়াশোনা করি বলে পরিবার–আত্মীয়স্বজন সবার থেকে দূরে আছি, খুব টেনশনে ছিল সবাই। তিন বছর ধরে ভারতে আছি। সময় পেলেই ঘুরতে বের হই। কোভিডের দ্বিতীয় টেউয়ের পর সবকিছু বন্ধ করে দেওয়া হয়, এমনকি পার্কও বন্ধ ছিল। বন্দী থাকা যে কতটা কঠিন তার মাঝে পরিবার ছাড়া একা একা থাকা সেটা কেউ না থাকলে কোনোভাবেই বুঝতে পারবে না। দিন শেষে ভালো আছি, এটাই আল্লাহার কাছে সবচেয়ে বড় শুকরিয়া। ভারতের আজকের এ অবস্থা সম্ভব হয়েছে সরকারের যথাযথ পদক্ষেপ ও জনসচেতনতার কারণে।

বর্তমানে বাংলাদেশে করোনাভাইরাস ভয়ংকর রূপ নিয়েছে। আমাদের সবার সচেতন হওয়া খুব বেশি জরুরি। তা না হলে আরও খারাপের দিকে যেতে পারে অবস্থা। দিন শেষে সব সরকার করবে, এটা ভাবা ঠিক নয়। দেশের নাগরিক হিসেবে আমাদেরও অনেক দায়িত্ব আছে। কিন্তু সেটা কয়জনে মানে। এই যে দুই দিন আগে ঢাকা থেকে ২ শতাধিক মানুষকে পুলিশ আটক করে, যার অধিকাংশই নাকি লকডাউন দেখতে বের হয়েছেন। অনেকে আবার দুই বছর আগের অপারেশন রিপোর্ট দেখিয়ে হাসপাতালের কথা বলে বাইরে বের হয়। এমন আরও অনেক ঘটনা আছে যেগুলো হাস্যকর আর জাতি হিসেবে লজ্জার। একজন শিক্ষিত মানুষ হিসেবে কিছু নাগরিক দায়িত্ব আমাদের মানা উচিত। দেশের প্রতি এ ভালোবাসাটুকুও একটা ইবাদত। সবাই মিলে আমরা বর্তমান এ খারাপ সময়টাকে কাটিয়ে উঠতে পারব ইনশা আল্লাহ।

লেখক: মো. হাসিবুর রহমান নিলয়, বেঙ্গালুরু ইউনিভার্সিটি, ভারত