আমেরিকায় বাংলাদেশি 'অ্যাম্বাসেডর'দের গল্প
স্বাধীন বাংলাদেশের বয়স আজ ৫০ ছুঁই ছুঁই। এ সময় স্বাধীনতার প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি নিয়ে যেকেউ হিসাব-নিকাশ করতেই পারেন। এই বিচার-বিবেচনায় ইতিবাচক ও নেতিবাচক অনেক কিছুই আলোচনায় উঠে আসতে পারে এবং সেটাই স্বাভাবিক। আমার প্রিয় স্বদেশ বর্তমানে ব্যাপক সরকারি অব্যবস্থা, অব্যাহত দুর্নীতি, আর্থিক প্রতিষ্ঠানে লাগামহীন লুণ্ঠন, নিষ্ঠুর সামাজিক অপরাধ এবং রাজনীতিহীনতার এক অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। যোগ্যতা ও দক্ষতার বদলে দলীয়করণের কারণে জাতীয় প্রতিষ্ঠানগুলো একেবারে ভেঙে পড়েছে। নির্বাচনব্যবস্থা এমন জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে, সরকারি দলের মনোনয়ন পেলেই ব্যস কাফি। এসব দেখে হতাশায় অন্যদের মতো আমিও অনেক সময় দেশ ও দেশের ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে শঙ্কিত হই, নেতিবাচক অনেক কিছুই বলে ফেলি এবং মাঝেমধ্যে এসব বিষয় নিয়ে লেখালেখিও করি, কাগজে ছাপাই, লোকজন পড়ে, প্রতিক্রিয়া জানায়। সরকারি দলের ভাই–বন্ধুরা বলতে পারেন, ‘আপনি তো ভাই আমাদের একতরফা সমালোচনা করলেন, আমরা যে এত বড় বড় মেগা প্রজেক্ট করে করে দেশকে উন্নয়নের জোয়ারে ভাসিয়ে দিচ্ছি, তা চোখে পড়ে না?’ অবশ্যই চোখে পড়ে, তবে মেগা প্রজেক্টের মেগা করাপশন যদি নিয়ন্ত্রণ করতে পারতেন, তাহলে নিশ্চয়ই সাধুবাদ জানাতাম। জনগণের টাকা দিয়ে জনগণের জন্য উন্নয়ন করছেন, এটা তো আপনাদের দায়িত্ব। সঠিকভাবে কাজটি করতে পারলে জনগণ আপনাদের মূল্যায়ন করবে, ভোট দিয়ে আবার তাদের সেবা করার সুযোগ দেবে। কিন্তু আপনারা তো ভোটের বারোটা বাজিয়ে দিয়েছেন। আমাদের জন্য প্রশংসা করার তো কোনো পথ খোলা রাখেননি।
এই কঠোর ও কঠিন বিতর্ককে পাশে ঠেলে রেখে আজ বাংলাদেশের একটি ইতিবাচক দিকে পাঠকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। স্বাধীনতার ফসলস্বরূপ আর কিছু না হলেও বাংলাদেশ দুটো বড় মাপের লক্ষ্য অর্জন করতে পেরেছে। এ সব লক্ষ্য হাসিলে আমি কোনো বিশেষ দলের বিশেষ সরকারের কৃতিত্ব দেখি না, তবে ধারাবাহিকভাবে সবারই কমবেশি অবদান আছে এবং যাঁরা একান্ত প্রশংসার দাবিদার, তাঁরা হলেন আমার দেশের কিষান-কিষানি ভাইবোনেরা, পোশাকশিল্পে কর্মরত গ্রামের অসংখ্য মা-বোন এবং বিদেশে যাওয়া কঠিন পরিশ্রমী বাঙালি কৃষক-শ্রমিকের সন্তানেরা। দেশের উন্নয়নে খুদে ও মাঝারি ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারাও অনেক কিছু করছেন। বড় ব্যবসায়ীদের অবদানও বড়, তাঁরা তরুণদের জন্য হাজারো চাকরির বাজার সৃষ্টি করেছেন। তবে যাঁরা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত, ব্যাংকঋণ নিয়ে নয়ছয় করেন, তাঁদের প্রশংসার সঙ্গে নিন্দাবাদও জানাই। আর যাঁরা খান্দানি খাঁটি বড় ব্যবসায়ী, তাঁদের হাজারবার সালাম জানাই।
এবার আসি বাংলাদেশের উন্নতি ও সফলতার কথায়। প্রথমত, প্রায় এক কোটি পরিশ্রমী জনশক্তি আজ বিদেশের মাটিতে কর্মরত। প্রতিবছর তাঁরা ২৪ থেকে ২৫ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে দেশে পাঠাচ্ছেন। এ ছাড়া বিরাট আকারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক আজকাল বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। তৈরি পোশাক রপ্তানিতে চীনের পরেই এখন বাংলাদেশের অবস্থান। এ ছাড়া আরও অনেক ননট্র্যাডিশনাল পণ্য দেশের বাইরে যাচ্ছে। রপ্তানিদ্রব্যের তালিকায় আছে বিভিন্ন ধরনের হিমায়িত মাছ, সামুদ্রিক শেলফিশ, টিনজাত ফল, ফলের রস, তরিতরকারি, গুঁড়ো মসলা, কালিজিরা চাল, চিড়া-মুড়িজাতীয় শুকনো খাবার, চা, চামড়া, চামড়াজাত দ্রব্য, পাট, পাটজাত দ্রব্য, কুটির ও হস্তশিল্পজাত দ্রব্যসামগ্রী, সিরামিক টেবিল ওয়েয়ার ও সিরামিকসামগ্রী, সাবান, ব্যাটারি, বড়লেখার সুজানগরের আগর-আতর ও সুগন্ধী, খেলনা, ওষুধ, কীটনাশক, রাসায়নিক দ্রব্য, জুয়েলারি, ঘড়ি, নির্মাণসামগ্রীর মধ্যে সিমেন্ট, পাথর, বালু, এমনকি ইটও ভারতের উত্তর–পূর্ব অঞ্চলে রপ্তানি হয় বলে শুনেছি। ইদানীং স্ক্র্যাপ মেটাল ও তা থেকে তৈরি সমুদ্রগামী জাহাজও বাংলাদেশ থেকে ইউরোপ ও পৃথিবীর অন্যান্য দেশে যাচ্ছে। আমেরিকার বাজারে যেসব বাংলাদেশি পণ্য নিজের চোখে দেখতে পাচ্ছি বা পাই, তার বয়ানও আমার আজকের আলোচনায় উঠে আসবে।
প্রথমে বলছি বাংলাদেশিয় তৈরি পোশাকশিল্পের বিবর্তন ও সাফল্যের সংক্ষিপ্ত পটভূমি। ১৯৮০ সালের গোড়ার দিকে আমি কানাডার ম্যানিটোবা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাত্র এমএ পাস করে পিএইচডি শুরু করেছি। এমন সময় আমার বড় ভাইয়ের সুবাদে আমেরিকায় অভিবাসী ভিসা পেয়ে যাই। কিছুদিন পরই বোস্টনের নর্থ ইস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডিতে অ্যাডমিশনসহ একটি টিচিং অ্যাসিস্টেন্টশিপের অফার আসে। অফারটি পেয়ে আগপাছ না ভেবেই ওই বছরের ডিসেম্বরে সিদ্ধান্ত নিলাম, ম্যানিটোবার পিএইচডি প্রোগ্রাম থেকে স্বেচ্ছায় নিজেকে প্রত্যাহার করে নর্থ ইস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে যোগ দেব জানুয়ারিতে। উইনিপ্যাগ থেকে বোস্টন যাওয়ার পথে নিউইয়র্কে বড় ভাইয়ের বাসায় ছিলাম দু-তিন সপ্তাহ। ওই সময় সেখানে দেখা হয়েছিল এক তরুণ বাংলাদেশি পোশাক কারখানার উদ্যোক্তার সঙ্গে। কথা প্রসঙ্গে তিনি সাহসের সঙ্গে বেশ জোর দিয়ে একটি কথা বলেছিলেন, যা আজও আমার মনে আছে। তাঁরই ভাষায়, ‘এবার ব্যবসা লাইনআপ করে গেলাম, ইনশা আল্লাহ আগামী বছর এসে মাল্টিমিলিয়ন ডলারের কন্টাক্ট সাইন করে যাব।’ তখন ওই পোশাক ব্যবসায়ীর চোখে-মুখে যে আত্মপ্রত্যয় এবং দৃঢ়তার ছাপ দেখেছিলাম, তাতে তাঁর কথার বিশ্বাসযোগ্যতায় আমার মনে একটুও দ্বিধা-দ্বন্দ্ব দানা বাঁধতে পারেনি।
এরপর প্রায় ১০ বছর কেটে যায়। ইতিমধ্যে জীবনের অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে আমি ইলিনয় অঙ্গরাজ্যের চার্লস্টন শহরে ইস্টার্ন ইলিনয় ইউনিভার্সিটিতে অর্থনীতির সহকারী অধ্যাপক হিসেবে যোগ দিয়েছি। এমনই এক সময় ১৯৯০ সালের শেষ দিকে চার্লস্টনে প্রয়াত ড. মুশফেকুর রহমানের বাড়িতে দেখা হয় বাংলাদেশের একজন প্রতিষ্ঠিত এবং সফল পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তার সঙ্গে। তাঁর পুরো নাম কী তা জানা হয়নি, তবে সবাই তাঁকে জাকারিয়া সাহেব বলে ডাকছিলেন। তিনি ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম দিকে প্রতিষ্ঠিত একটি বড় এবং সফল পোশাক কারখানার মালিক। তাঁর কোম্পানির নাম ছিল ‘জুয়েল গার্মেন্টস’। ওই দিন সবার মুখেই শুনছিলাম পোশাকশিল্পে জাকারিয়া সাহেবের সফলতা ও তাঁর ধনদৌলতের কথা। ছেলেমেয়েদের আমেরিকায় পড়ানোর জন্য তিনি ওহাইওর ডেটন শহরে রীতিমতো আরেকটি সংসার পেতেছিলেন। সৌভাগ্যক্রমে কিছুদিন পর জাকারিয়া সাহেবের বাসায়ও আমার যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল। যত দূর মনে পড়ে, তাঁর ছেলের নাম ছিল জুয়েল। মেয়েদের তাদের মা ছন্দোবদ্ধ নামে আদর করে ডাকতেন ‘নয়ন’ও ‘নূপুর’।
অন্য অনেক ব্যবসার সঙ্গে আমার এক মামারও পোশাক কারখানা ছিল। তিনি ব্যবসাসংক্রান্ত কাজে ঘন ঘন আমেরিকা আসতেন। এলেই দেখতেন, কোনো কোনো স্টোরে তাঁর কোম্পানির তৈরি পোশাক রাখে এবং বিক্রি করে। স্বাভাবিকভাবেই তিনি ভীষণ রকমের আত্মতৃপ্তি উপভোগ করতেন। আমি এবং আমার স্ত্রী এখানকার ডিসকাউন্ট এবং স্পেশাল্টি স্টোরে সব জায়গাতেই যাই। কোনো সময় কেনাকাটা করতে, কোনো সময় ‘উইন্ডো শপিং’-এ বা নিছক ঘোরাঘুরি করতে। কমবেশি প্রায় সব দোকানেই আমি বাংলাদেশের তৈরি পোশাক বিক্রির জন্য সাজিয়ে রাখতে দেখেছি। কোনো কোনো দোকান থেকে মাঝেমধ্যে কিনেছিও। ‘ওয়াল মার্ট’, ‘কে-মার্ট’, ‘গ্যাপ’, ‘ওল্ড নেভি’, ‘মেইসিজ’, ‘গুডিজ’, ‘টিজে ম্যাক্স’, ‘টার্গেট’, ‘সিয়ার্স’, ‘ডিলার্ডস’, ‘জেসি পেনি’, ‘বেল্ক’, ‘ডিজনি র্স্টোস’-এর র্যাকে বাংলাদেশের তৈরি বিভিন্ন জাতের পোশাক হরহামেশাই দেখা যায়।
বাংলাদেশের রপ্তানিজাত ননট্র্যাডিশনাল আইটেম রাখে আমেরিকার ‘কার্লাইল অ্যান্ড কোম্পানি’, ‘বাথ অ্যান্ড বডি ওয়ার্কস’, ‘ওল্ড মিল পটারিজ’, ‘পটারি বার্ন’, ‘বেড বাথ অ্যান্ড বিওন্ড’, ‘ডলার ট্রি’, ‘ডলার জেনারেল’ ইত্যাদি। বাংলাদেশের যাবতীয় রপ্তানি আয়ের প্রায় ২৫ শতাংশ আসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে।
এবার দিচ্ছি আমার দেখা আমেরিকার বাজারে বাংলাদেশি দ্রব্যের একটি খতিয়ান। বেশ কিছুদিন আগে স্ত্রীসহ কাপড় কিনতে গিয়েছিলাম মোটামুটি নামীদামি ডিপার্টমেন্টাল র্স্টোস ‘মেইসিজ’-এ। মেয়েদের কাপড় দেখছিলেন স্ত্রী। উপরতলায় ঘোরাঘুরি করছিলাম, ‘ডমেস্টিকস’ সেকশনে। হঠাৎ চোখে পড়ল বাংলাদেশের সিরামিক পণ্য। ডিনার প্লেট, কারি বোল, ফুলদানি, পানির জার বা পিচার, সল্ট অ্যান্ড পেপার শেকার ইত্যাদি। কেনার ইচ্ছে ছিল কিন্তু দাম দেখেই চক্ষু ছানাবড়া হয়ে গেল। একেকটি ডিনার প্লেটের দাম ৭০ ডলার, মাঝারি আকারের একটি কারি বোলের দাম ৪৫ ডলার। একজোড়া সল্ট অ্যান্ড পেপার শেকারের দাম ৫০ ডলার। ফুলদানি ও পিচারের দামটা সঠিক মনে করতে পারছি না। প্রতিটি পণ্যের কোয়ালিটি এবং ফিনিশিং দেখলাম খুবই উন্নত মানের। আইটেমগুলোর গায়ে ছাপায় লেখা, ‘প্রোডাক্ট অব বাংলাদেশ’ কিন্তু কোনো কোম্পানির তৈরি অনেক চেষ্টা করেও তার হদিস পেলাম না। আরও দেখলাম, আমেরিকান ক্রেতারা উৎসাহভরে শেলফে রাখা বাংলাদেশি জিনিসগুলো নাড়াচাড়া করছেন, উল্টেপাল্টে দেখছেন, প্রাইস স্টিকারের দিকে চোখ তুলে তাকাচ্ছেন। হয়তো কিনবেন, হয়তোবা কিনবেন না, তবে কেউ না কেউ তো অবশ্যই পছন্দ করবেন এবং কিনবেন, নতুবা মেইসিজের মতো দোকানের ফ্লোরে এগুলো জায়গা করে নিতে পারত না। মেইসিজের দোতলায় বাংলাদেশের সিরামিক টেবিল ওয়েয়ার দেখে আমার ও স্ত্রীর কাছে সেদিন খুবই ভালো লেগেছিল।
কয়েক মাস পর মাত্র সেদিন স্ত্রীসহ গিয়েছিলাম অরগানিক চেইন ফুড স্টোরস ‘হোল ফুডস’–এর দোকানে। হোল ফুডসে গ্রোসারি সেরে রাস্তার ওপারে গেলাম তাদেরই সাবসিডিয়ারি বডি কেয়ারের দোকান ‘হোল বডি’ শপে। সেখানে যা দেখলাম, তাতে অভিভূত না হয়ে পারলাম না। প্রবেশদরজার সামনে একটি আয়লের মাথায় শেলফের নিচে মেঝেতে রাখা তালপাতার তৈরি কিছু ‘ফ্রুট বাস্কেট’ এবং লম্বা হাতলওয়ালা মেয়েদের ‘হ্যান্ডব্যাগ’। দোকানে ঢোকার সময় আমার চোখে পড়েনি। বেরিয়ে আসার সময় স্ত্রী বললেন, ‘দেখো, বাংলাদেশি পণ্য’। আমি হাতে নিয়ে নেড়েচেড়ে দেখতে লাগলাম। পড়ে দেখলাম, ‘ব্লেসিং বাস্কেট’ নামে একটি এনজিও জিনিসগুলো তৈরি করেছে বাংলাদেশের কোনো এক প্রত্যন্ত অঞ্চলে। আঠা দিয়ে সেঁটে দেওয়া একটি কাগজে ‘ব্লেসিং বাস্কেট’ প্রজেক্টের ম্যানেজার মিসেস তেরেসা উইলসনের মূল্যবান কোটেশন শোভা পাচ্ছে প্রতিটি দ্রব্যের গায়ে। পড়ে দেখলাম কাগজের লেভেলে লেখা আছে, ‘দেয়ার ইজ নো হিডেন অ্যাজেন্ডা। উই সিম্পলি ওয়ান্ট টু অ্যান্ড পভার্টি ফ্রম দ্য লাইভস অব দৌজ হু উই সার্ভ’। অর্থাৎ, ‘আমাদের কোনো গোপন অভিসন্ধি নেই। আমরা যাদের সেবা দিচ্ছি, শুধু তাদের জীবন থেকে দারিদ্র্য দূর করতে চাই’।
বাস্কেট এবং ব্যাগগুলো যাঁরা তৈরি করেছেন, তাঁদের নামও সেঁটে দেওয়া আছে পণ্যসামগ্রীর গায়ে গায়ে কাপড়ের লেভেলে। যাঁদের নাম আমি আজ এখানে লিখব, তাঁরা যদি এ লেখাটি পড়েন বা যে পড়েছেন, তাঁর কাছে শুনতে পান, তবে জানি না তাঁদের অনুভূতি কেমন হবে। তবে তাঁদের নাম আজ গর্বভরে লিখতে পেরে নিজেকে খুবই ভাগ্যবান মনে করছি। বাংলাদেশের জনগণের কাছে হয়তো বা তাঁরা দেশের লক্ষকোটি মা-বোনের মতোই একেকজন গ্রাম্য বধূ কিংবা অবিবাহিতা বালিকা, কিন্তু আমার কাছে তাঁরা প্রত্যেকেই সুদূর আমেরিকায় একেকজন বাংলাদেশি ‘অ্যাম্বাসেডর’। নিজেদের সৃষ্টিশীল কাজের মাধ্যমে বিদেশের মাটিতে তাঁরা সগৌরবে দেশমাতৃকা ও তার সুনামকে তুলে ধরেছেন। আমার এই লেখার মাধ্যমে আজ আমি বাংলাদেশের নাম না–জানা অখ্যাত অজপাড়াগাঁয়ের এই শিল্পীদের জানাই সশ্রদ্ধ সালাম ও প্রাণঢালা অভিনন্দন! গ্রামবাংলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের যেসব শিল্পীর মন ও হাতের ছোঁয়া নিয়ে কয়েকটি ফ্রুট বাস্কেট এবং হ্যান্ডব্যাগ আমেরিকার বাজারে সগর্বে বাংলাদেশের নাম ঘোষণা করছে, তারা হলেন স্বর্ণ, পপি, সুচিত্রা, সুষমা, রীতা, ববিতা ও মেরি। তাঁদের হাতের তৈরি জিনিসগুলো দেখেছি হোল বডি শপের ফ্লোরে। আজ হয়তোবা সেগুলো শোভা পাচ্ছে কোনো মার্কিন পরিবারের বেডরুমে অথবা বসার ঘরে। বাংলাদেশের এই পরিশ্রমী মানুষগুলোর প্রতি আমেরিকাপ্রবাসী প্রত্যেক বাংলাদেশি অভিবাসীর পক্ষ থেকে আবার জানাই আন্তরিক মোবারকবাদ!
লেখক: টেনেসি স্টেট ইউনিভার্সিটি; এডিটর: জার্নাল অব ডেভেলপিং এরিয়াজ।