আমি ছিলাম তোমার অপ্রিয় চেনা মানুষ
আমাকে দেখামাত্র তোমার শরীর হয়তো তেলেবেগুনে জ্বলে উঠল। আমাকে দেখতেও চাও না। তাই তো পেনসিল হিল জুতা পায়ে দিয়ে লম্বা লম্বা পা ফেলে দূরত্ব সৃষ্টি করার পাঁয়তারায় মগ্ন। পাতলা গড়নের সেই পুরোনো শারীরিক কাঠামো আজও ধরে রাখার ক্ষমতা চালিয়ে যাচ্ছ।
কিসের ওপর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছ প্রতিদিন হয়তো তীক্ষ্ণ নজর রাখো। কিন্তু আজ তা আর সম্ভব হয়ে ওঠেনি। ইটের সলিং একটু বেশি বুড়ো হয়ে গেছে। তাই তোমার ওই পেনসিল হিলের শব্দের সঙ্গে ইটের খটখট শব্দ মিশ্রণে আমার পেছনে ফেলতে খুব তৎপর।
তুমি হয়তো তোমার গতি আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। কিন্তু তোমার হুঁশ নেই যে পায়ের নিচের ইটগুলো বুড়ো মানুষের দাঁতের মতো নড়ছে।
জীবনে তোমার সঙ্গে আমার দেখা মাত্র দুদিন। মিঠুনের বিয়েতে প্রথম। আলো ঝলমলে গেটের ও প্রান্তে ছিলে তুমি। আর আমি এ প্রান্তে। সেখানে আমি ছিলাম জগৎসেরা কৃপণ। আর তুমি ছিলে জগৎসেরা আবদারি, কিছু দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করেন।
দুজনের বিপরীতধর্মী মানসিকতা থাকলেও যেখানে মিল ছিল তা হচ্ছে জগৎসেরা। পকেট থেকে টাকা দেব না, আর তুমি না নিয়ে ছাড়বে না। তুমুল ঝগড়াঝাঁটি শুরু হয়ে গেল। দর্শকসারি থাকে কোনো কথা হচ্ছে না, আমরা দুজন ছাড়া। সেই থেকে হয়তো আমার প্রতি ভালো নজর নেই তোমার। অবশেষে মুরব্বিদের মধ্যস্থতায় একটা সমাধানে আসা হয়েছিল। সমাধান শেষে তোমার দিকে তাকিয়ে আমি দুষ্টু হাসি দিলেও তোমার যত্নে নেওয়া মেকআপ দেওয়া মুখমণ্ডল ছিল কালো মেঘে ঢাকা।
দ্বিতীয়বার দেখা কখন হয়েছিল তা কি মনে আছে তোমার? থাকারই কথা। তাহলে কেন কী কারণে দ্বিতীয়বার দেখা হয়েছিল, সেটা না বললে কি তোমার রাগ হবে আমার ওপর? জানি উত্তর দেবে না। কারণ, বিয়েবাড়ির সেই রাগ এখনো জমে আছে আমার প্রতি। তুমি শুনতে না চাইলেও আমাকে বলতে হবে। ঝালাই হোক স্মৃতিটা।
আমার বড় ভাগনি অণুর ছিল হাতি দেখার শখ। এখন আছে কি না জানি না। ছোট বয়সে ছিল। মুরব্বিদের মুখে গল্প শুনতে শুনতে ওর কানে গেছে যে পাশের গ্রামে হাতি এসেছে।
হাতি আসার কথা শুনে শুরু হলো ঘ্যানঘ্যানানি। ‘মামা, হাতি এসেছে নিয়ে যাও,আমি হাতি দেখব।’ আমি রেগে গেলাম। বললাম, হাতির কী দেখে? সে জবাব দিল, ‘মামা, হাতির না বাচ্চা হাতি আছে, সেটা আমাকে কিনে দিয়ো।’ বাচ্চা হাতির কত দাম হবে তা–ও জানিয়ে দিল আমাকে। ওর মুখ থেকে জানতে পারলাম হাতিটার দাম ১৫–১৬ টাকা হবে। তার কাছে ৫ টাকা আছে, বাকি টাকা আমাকে দিতেই হবে বলে ওই গেটে থাকা মেয়েটির মতো তারও জেদ শুরু হলো।
কোনো উপায়ান্তর না পেয়ে অণুর ইচ্ছার কাছে হেরে গেলাম। মোটরসাইকেলের সামনে তেলের ট্যাংকের ওপর বসালাম চার বছরের মেয়েটিকে। রওনা দিলাম হাতি দেখার উদ্দেশে।
কিছুদূর যাওয়ার পর একটা পথকুকুরে ধাওয়া করেছে মোটরসাইকেলকে। এ কুকুরের নাকি এটা বদভ্যাস। মোটরসাইকেলের শব্দ কানে হজম হয় না তার। শব্দ শোনামাত্র তার মাথা গরম হয়ে যায়। জাহেক অর্থাৎ মালিক, কুকুরের মাথায় শর্ষেবাটা মেখেও তার এই বদমেজাজ নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি।
কুকুরটার এই স্বভাবচরিত্রের কারণে মালিক জাহেকের সঙ্গে কয়েক দফা ঝগড়া হয়েছে মোটরসাইকেলের পথচারীদের। কয়েকবার মালিক কুকুরের ওপর সেই রাগও ঝেড়েছে যথাযথভাবেই। একবার কুকুরের গলায় রশি বেঁধে আরমান সাহেবের বাড়িতে রেখে আসে। কারণ, কুকুরের এই উগ্র আচরণের কারণে আরমান সাহেবের সঙ্গে প্রচণ্ড ঝামেলা হয়েছিল। জাহেক কুকুরের স্বভাবচরিত্র গঠনে ব্যর্থ হয়েছে বলে অভিযোগ করেছিলেন আরমান। কাজেই কুকুরের স্বভাবচরিত্র গঠনে কী ভূমিকা পালন করতে হয়, তা প্রয়োগ করার জন্য আরমানের ওপর জোর করে দায়িত্ব দেওয়া।
আরমান সাহেবের উক্তি ছিল, যে কুকুরকে শিক্ষা দিতে পারে না সে কুকুর পোষে কেন? ব্যর্থ মালিক কুকুরের উপযুক্ত শিক্ষায় কীভাবে দীক্ষিত করতে হয়, তা শেখানোর জন্য আরমান সাহেবের বাড়িতে রেখে চলে আসে। আরমান সাহেব কুকুর রাখবেন না কিন্তু নাছোড়বান্দা জাহেক না রেখে ফিরবেন না। এই রং–তামাশা দেখার জন্য এগিয়ে আসে আরমান সাহেবের স্ত্রী। কিছু বুঝে ওঠার আগেই স্ত্রীর পায়ে একটার পর আরেকটি কামড়। অর্থাৎ আরমান সাহেবের স্ত্রীর পায়ে দুটি কামড় বসিয়ে কুকুরটা যখন পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিল ঠিক তখন পাশের রাস্তায় মোটরযানের শব্দ। গ্রাম্যচিকিৎসক তাঁর মোটরসাইকেল চালিয়ে আসছিলেন আরমান সাহেবের স্ত্রীর পায়ের চিকিৎসা দিতে।
কিন্তু উগ্র কুকুরের তাড়া খেয়ে গ্রাম্যচিকিৎসক নিজেই জীবন বাঁচাতে গিয়ে তাঁর ঘাড়ে রাখা ওষুধের ব্যাগটা রাস্তায় ফেলে পাশের বাড়িতে আত্মগোপনে গেলেন। ডাক্তারের প্রেশার মাপার যন্ত্রটি ফেলে আসা ব্যাগের মধ্যে থাকায় নিজের প্রেশারও মাপা সম্ভব হয়নি তখন। তবে ব্যাগ পেয়ে বেশ খুশি কুকুর। পা দিয়ে টেনেহিঁচড়ে ব্যাগ ফেঁড়ে প্যারাসিটামল, ডিসপ্রিন আর কিছু টেট্রাসাইক্লিন বের করে ফেলে।
আরমান সাহেবের স্ত্রী হাসপাতালে ভর্তি হলেন, রক্তক্ষরণ সামলাতে বেশ সময় নিয়েছে ইমার্জেন্সি বিভাগে। হাসপাতালে যেখানে সিট পেয়েছেন তিনি, ঠিক তাঁর পাশের সিটে শুয়ে আছেন কুকুরমালিকের স্ত্রী জেবুন নেছা। কেন?
এই জেবুন তাঁর স্বামীর সামনে কুকুরের চারিত্রিক সনদ মৌখিকভাবে উপস্থাপন করার কারণে নাকে ঘুষি মেরে তাঁর নাক ফাটিয়ে দিয়েছে স্বামী জাহেক। অবস্থা বেগতিক হওয়ায় হাসপাতালে ভর্তি হতে বাধ্য হয়েছেন জেবুন নেছা।
জেবুন কথা একটু বেশি বলেন। হাসপাতালে ভর্তি হয়েও স্বভাব না বদলে নিজ স্বভাবেই আছেন। দুই নার্সের সঙ্গে যখন কুকুর ও তাঁর স্বামীর গল্প করছিলেন তখন দুটি কান খাড়া করে রেখেছেন আরমানের স্ত্রী। জেবুন কীভাবে এবং কোথা থেকে এসেছেন, সেটাও তিনি বুঝে নিচ্ছেন। একসময় বুঝতে বাকি রইল না যে এই জেবুনের কুকুরের কামড় খেয়ে তিনি আজ হাসপাতালে।
কুবুদ্ধিতে সমাজের মধ্যে বেশ এগিয়ে আছেন আরমানের স্ত্রী লিন্জা তিবা। কুকুর কীভাবে তাকে কামড়ে দিতে সাহস পেল, তা নিয়ে সমাজের মধ্যে টক অব দ্য ইয়ারে পরিণত হয়। কুকুরের এ রকম সাফল্যের জন্য অন্য প্রান্তের ঘৃণিত কুকুরটা এ প্রান্তে বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ধন্যবাদের মালা বহন করতে করতে কুকুরটাও তার নিজ স্বভাব বদলে নিচ্ছে বলেই মনে হচ্ছে। লিন্জার প্রতি এ সমাজের মানুষের এত বিদ্রূপ মনোভাব পুঞ্জীভূত হয়েছে তার এই কুস্বভাবের কারণে। আরমানদের সমাজে প্রশংসা করে হিংস্র কুকুর ভালো হতে পারে কিন্তু কুৎসিত মানুষ নয়।
জেবুনের কুকুরের কামড় লিন্জার শরীরে! অস্থির হয়ে উঠেছে লিন্জা। ইলেকট্রিক স্পার্কিং চলছে মাথার মধ্যে। জেবুনকে ছেঁচা একটা দেওয়ার শখ জেগেছে তার, নতুবা কুকুরের কামড়ের জ্বালা শরীর থেকে যাচ্ছে না এমবিবিএস ডাক্তারের দেওয়া পেনিসিলিনে। বুদ্ধি একটা পাকিয়ে মুচকি হাসি দিল লিন্জা।
রাতে হাসপাতালে জেবুনকে দেখতে এসেছে স্বামী জাহেক। জাহেকের আসল চেহারা হারিয়ে গেছে অল্প কদিনেই। বাসায় স্ত্রী জেবুন না থাকাতে একবার রান্না করে চার বেলা ডেলা পাকানো ভাত পেটে পুরতে হচ্ছে। ভালোমন্দ খোঁজখবর নিয়ে জেবুনকে রেখে হাসপাতাল ত্যাগ করে জাহেক। রাতে দুধ মেশানো সাগুর সঙ্গে গোল গোল দুটি পাউরুটি খেয়ে হাসপাতালের প্যারাসিটামল গন্ধ বিছানার চাদরের ওপর ঘুমিয়ে গেল জেবুন।
লিন্জা প্রস্তুত তার একটা তির নিক্ষেপ করার জন্য। ‘সুযোগ বারবার আসে না সোনাউল্লাহ’ গ্রাম্য এই প্রবাদটা জানা আছে তাঁর। হাসপাতালের দেয়ালের বাইরে রাত যখন নীরবতায় মগ্ন, ক্লান্ত নার্স টেবিলে মাথা ঠেকিয়েছে, অসুস্থ মোটা নারীর নাকডাকানি ঘুম, শিশুটিকে কোলে নিয়ে আরেক মা পিঠ ঠেকিয়ে আধো আধো নিদ্রায়, কর্নারের একটা বেডে শুয়ে আছে এক বুড়ি মা হয়তো যেকোনো সময় ডাক এসে যাবে ওপার থেকে, সৃষ্টিকর্তার কাছে বিড়বিড় করে ক্ষমাপ্রার্থনায় মাথা নত। ঠিক এমন পরিবেশে কি কারও পক্ষে কুটনি ঘুঁটি চালানো সম্ভব? লিন্জার বুক কাঁপেনি।
লিন্জাদের মতো মানুষ তো আর ধর্মের কাহিনি শোনে না। সে ঘুঁটি চালিয়েছে। একটা চিরকুট গুঁজে দিল জেবুনের বালিশের নিচে।
কী ছিল লেখা সেই চিরকুটে? লিন্জা বলে কথা। লেখা ছিল—আমি মুখে বলতে সাহস পাই নাই, তাই লেখাটি রেখে যাচ্ছি। তোমাকে অনেক ভালোবাসি। আমার কুকুরের মতো। তাই গতকাল আরও একটা কুকুর কিনে এনেছি। এটা আরও বদমেজাজি। শুধু মোটরসাইকেল তাড়া করে না। বাইসাইকেল বা ভ্যানগাড়ি তাড়া করতেও পারঙ্গম। ইতি জাহেক।
জেবুনের রাগ ফুটন্ত কড়াই থেকে জ্বলন্ত চুলায় গিয়ে পড়ল। যেন রাগ টগবগিয়ে ঘুটছে। লিন্জা খুব মজা লুটছে মনে মনে। শুধু লিন্জা না, এমন পরিবেশ দেখে সমাজের অনেকেই মজা লুটে আনন্দ লয়। জেবুনের এমন সময় প্রীত করতে এগিয়ে আসে লিন্জা।
জেবুনের কথা শুনে বমি করার উপক্রম লিন্জার। ছি ছি, কুকুরের মতো ভালোবাসা! এ আবার কেমন সুয়ামী? লিন্জার স্বামী আরমান এমন কাজ করলে কচুকাটা হতো দশবার করে। জেবুনকে পাম্পপট্টি ইচ্ছে মতো দিয়ে প্রীতির বন্ধু বানিয়ে নিল লিন্জা।
ওপরে বন্ধু, নিচেই ক্রু অর্থাৎ শাঁখের করাত। আসতেও কাটে, যেতেও কাটে। এমন এক বন্ধু পেয়ে মনোবল বেড়ে গেল জেবুনের। বন্ধুর কথামতো হাসপাতাল ত্যাগ করে মেজাজ গদগদকণ্ঠে বাড়ির উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে জেবুন। জাহেকের কপালে আজ কি শনির দশা আছে? বোঝা যাবে জেবুন বাড়ি ফেরার পর।
অণুকে নিয়ে ছুটছি হাতি দেখতে। কিছুদূর যাওয়ার পর অণু ঘুমে হেলেদুলে পড়ে। সে আর মোটরসাইকেলে বসে থাকতে পারে না। বাধ্য হয়ে রাস্তার পাশে একটা বাড়িতে গিয়ে তার ঘুমের জন্য একজন মহিলার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করি। একটা খেজুরপাতার পাটি আর একটা বালিশ এনে দিলে বারান্দায় শুইয়ে দিলাম অণুকে।
হঠাৎ পাশের বাড়িতে এক মেয়ের, চিৎকার করে কান্নাকাটি। কান্না শুনে বিভিন্ন বাড়ি থেকে মহিলারা দৌড়ে যাচ্ছেন বিষয়টি দেখতে। এক মহিলা চৈতালি ছড়াচ্ছেন বাতাসে, ফেলে রেখে দৌড়। আরেক মহিলা রান্না করা অবস্থায় চুলার আগুন নিভিয়ে দৌড়, অন্য একজন স্নানের পর চুল মুছতে মুছতে দৌড়াচ্ছেন। কেন কান্না, আর কেনই–বা সবাই দেখার জন্য দৌড়াদৌড়ি? আমারও দেখার এবং জানার ভারি শখ হলো। অণুকে একা রেখে দিলাম দৌড়।
গিয়ে তো চমকে উঠলাম। গিয়ে তো না, কান্না করা মেয়েটিকে দেখে। চোখে চোখ যখন পড়ে, তখন আমি আর সেখানে দাঁড়াতে পারিনি। কারণ, মেয়েটি ছিলে তুমি, হ্যাঁ সেই মিঠুনের বিয়ের গেটে আমার প্রতিপক্ষ হওয়া মেয়েটি। সেখান থেকেই জানতে পারলাম তার নাম—হিবুকান বিন্তে চয়োবুন্নেছা, ডাকে সবাই হিবু নামে।
তো কাঁদছে কেন হিবু? সেটার কারণ হচ্ছে, হিবু অসুস্থ, ওষুধ খাবে না। মা পিটিয়ে পিটিয়ে ওষুধ খাওয়াচ্ছে। একটা ট্যাবলেট খাওয়াতে আট গ্লাস পানি ফেলেছে, একটা বালিশ আর কাঁথা–কম্বল ভিজিয়েছে, একটা কাচের জগ ভেঙেছে। মুখ বন্ধ করে, শক্ত করে চেপে ধরে আছে, মা চোয়াল চেপে ধরে হাঁ করানোর চেষ্টা করছে, মনি সোনা সোনা মনি, হারামি, গোল্লায় যা, মরেক ওষুধ না খেয়ে, এমন কত কথা, তবুও হিবুর মুখ খোলে না। ভাগ্যের কী পরিহাস, অণুকে যে বাড়িতে নিয়ে গেলাম ঘুমানোর জন্য, ঠিক তার পাশের বাড়িটা হিবুর নানিবাড়ি, যা আমার জানা ছিল না। তাই দ্বিতীয়বারের মতো দেখা হলো অণুর হাতি দেখার বাহানার কারণে।
আজ যখন তুমি আমাকে দেখামাত্র লম্বা লম্বা পা ফেলে দূরত্ব সৃষ্টি করছ, তখন তুমি আজ ডাক্তার হয়েছ। তুমি নিজে অসুখ–বিসুখে ওষুধ খেতে না। অথচ আজ তুমি নিজেই ওষুধ খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছ রোগীদের। তুমি আজ ডাক্তার। শত শত প্রেসক্রিপশন লিখে দিচ্ছ। জানি না এখনো নিজে ওষুধ খেতে ভয় পাও কি না।
দ্বিতীয়বার তোমাকে দেখার পর সোহানাকে পাঠিয়েছিলাম তোমার কাছে। কড়া কড়া মেজাজে ফেরত পাঠিয়েছিলে একদম খালি হাতে। আমাকে হিংসুটে, কৃপণ, প্যাঁচা মন ইত্যাদি বলে নাজেহাল করেছিলে সোহানাকে। বুঝতে পারলাম মিঠুনের বিয়ের গেটের যন্ত্রণা আজও তাড়া করে বেড়াচ্ছে তোমাকে। মনে মনে বললাম, বিয়ে তো আরও আছে, তোমার নিজেরটাও বাকি। সেখানে না হয় ব্রিফকেস ভর্তি করে নিয়ে যেতাম।
সোহানা ব্যর্থ হয়ে, আমার জড়িয়ে ধরে কী কান্না। তার ধারণা এ কাজে সে পারদর্শী নয়, অন্য মেয়ে হলে নিশ্চয়ই সফল হতো। সব কাজ সবার দিয়ে হয় না, সেটা যেমন একভাবে মেনে নিচ্ছে সে। তবে আমার মতো এত সুন্দর, নায়কের মতো চেহারা তার জন্যও যে একটা যোগ্য মেয়ে হতে পারেনি সেই দুঃখে কান্না বেশি সোহানার।
দূরত্ব সৃষ্টি করার জন্য যখন বেশি লম্বা পা ফেলছিলে, তখন হাই হিল তোমাকে আর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেনি। তুমি হঠাৎ ইটের ওপর পড়ে গেলে। তখন তোমার আর দূরত্ব সৃষ্টি করার সম্ভব হলো না। কাজে কাজেই আমি ঠিকই তোমার কাছে পৌঁছে গেছি।
তোমার হাত এগিয়ে দিলে আমার দিকে, আহ্বান করলে তোমাকে টেনে তুলতে। কারণ, সেখানে শুধু আমিই ছিলাম তোমার অপ্রিয় চেনা মানুষ।