২০১৫ সাল। কয়েক মাস আগে আমি কাতারে এসেছি। চেনা–জানা কিংবা বন্ধুবান্ধব, কেউ নেই এখানে। রমজান মাস পেরিয়ে সবার দুয়ারে খুশির বার্তা নিয়ে হাজির হলো ঈদুল ফিতর।
ঈদের দিন কী করব, কীভাবে কাটাব, কিছুই জানা নেই । ঈদের দিন ভোর হলো। ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হলো দোহায়। আমি পাশের মসজিদে ঈদের জামাতে অংশ নিলাম। নামাজ শেষে একা একা রুমে ফিরে এলাম। নিজেকে তখন খুব অসহায় ও দুঃখী মনে হচ্ছিল। ঈদের নামাজ হলো, অথচ কারও সঙ্গে কোলাকুলি হলো না, সালাম-সালামি হলো না, আমি কোনোভাবেই এটা মেনে নিতে পারছিলাম না।
সেদিন আমি যেভাবে কেঁদেছিলাম, এই জীবনে আর কোনো দিন সেভাবে কাঁদিনি। ঘণ্টা দুয়েক মন খারাপ হয়ে ছিল, অঝোরে কেঁদেছিলাম পুরো সময়। এর কিছুক্ষণ পর দোকানে চলে আসি। আমি তখন একটি মুঠোফোনের দোকানে চাকরি করি।
দোকানে আসার পর অবশ্য মন ভালো হতে শুরু করে। আশপাশের লোকজনের সঙ্গে কুশল বিনিময় হলো। ক্রেতারা আসতে শুরু করল। কাজের ব্যস্ততায় ভুলে গেলাম ঈদে একাকিত্বে অসহনীয় বেদনা। দিন গড়িয়ে সন্ধ্যা হলো। দোকান বন্ধ করে রুমে ফিরে এলাম।
রাতে বাড়িতে ফোন করি। মা–বাবার সঙ্গে কথা বলি। তাঁরা জানতে চাইলেন, কেমন কেটেছে আমার ঈদ। আমি আমার বিষণ্নতা লুকিয়ে বললাম, ভালোই কেটেছে, তবে তোমাদের খুব বেশি মিস করেছি। দেশে তখন কেবল ঈদের আয়োজন শুরু। পরদিন সেখানে ঈদ। আমি দূর থেকে অনুভব করছিলাম, কী আনন্দেই না আছে আমার পরিবারের সবাই, অথচ আমি নিঃসঙ্গ পড়ে আছি দূরদেশে।
গত বছরের ঈদুল আজহার সময় আমি দেশে ছিলাম। ফলে পরিবারের সবার সঙ্গে ঈদ উদ্যাপনের যে অপূর্ব আনন্দ, তা উপভোগ করতে পেরেছি। আবার কবে এমন আনন্দ ও উৎসবের পরিবেশে দেশে সবার সঙ্গে ঈদুল ফিতর উদ্যাপন করতে পারব, তা কে জানে!
প্রতি ঈদের আগে মনে ইচ্ছা জাগে, এবার দেশে যাব এবং সবার সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করব, কিন্তু পরে তা আর হয়ে ওঠে না। আমার ভাগ্যটাই এমন যে কাতারে কোনো ঈদ আমি উন্মুক্ত পরিবেশে অবসরে উদ্যাপন করতে পারিনি। বরং আমার প্রতিটি ঈদ কেটেছে কর্মক্ষেত্রে।
জীবন ও জীবিকার তাগিদে সব আনন্দ বিসর্জন দিয়ে ঈদের দিনটিও কেটে যায় কর্মক্ষেত্রে। ঈদের দিন কাজের ভেতর ডুবে ভুলে থাকতে চাই দেশে ফেলে আসা ঈদের রঙিন স্মৃতিময় দিনগুলো। নিজেকে সান্ত্বনা দিই, আমার এই শ্রমে আজ হাসি ফুটছে মা-বাবা ও পরিবারের সদস্যদের মুখে, এমন সৌভাগ্য কজনের কপালে জোটে।