আমার বন্ধুরা

এ বছর কখন বন্ধু দিবস এল আর কখন গেল টেরই পেলাম না। দেশের নানা দুর্যোগের মধ্যে অবশ্য বন্ধু দিবস নিয়ে ভাবারও অবকাশ ছিল না। আমি সব সময়ই বলি, আমার জীবনের যত অর্জন তার বেশির ভাগেরই দাবিদার আমার বন্ধু মহল। মাধ্যমিক পাস করে উচ্চমাধ্যমিকে কুষ্টিয়া সরকারি কলেজে ভর্তি হয়েছিলাম। দুই সেকশন মিলে মোট ৪১৪ জন ছাত্রছাত্রী। এর মধ্যে সবার সঙ্গে সবার পরিচয় হয়ে ওঠা মোটেই সম্ভবপর ছিল না। তবে টেস্ট পরীক্ষায় অভাবনীয় সাফল্যের পর কিছু মানুষের সঙ্গে নতুন করে বন্ধুত্ব তৈরি হলো, যেটা এখনো টিকে আছে। আমি নিশ্চিত যত দিন বেঁচে থাকব, এই বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ থাকবে।
বলাই বাহুল্য তারাই ছিল আমার স্বপ্নের নায়ক। নিজে জিলা স্কুলে পড়তে না পাড়ার কারণে জিলা স্কুলের ভালো ছাত্রদের ভিন গ্রহের বাসিন্দা মনে হতো। আরও মনে হতো, তারা আমাদের চেয়ে অনেক বেশি জানে। আমাদের চেয়ে অনেক বেশি অগ্রগামী সবকিছুতেই। পরে যখন তারাই আমার বন্ধু হয়ে গেল, তখন আমি তাদের বলেছিলাম, জানিস, তোদের একসময় স্বপ্নে দেখতাম আর এখন তোদের সঙ্গে একইসঙ্গে বসে আড্ডা দিচ্ছি। তোরাই আমার জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন। ওরা আমার কথা শুনে হাসত, এখনো হাসে।
কলেজের বন্ধুদের মধ্যে সবার আগে পরিচয় হয়েছিল সালামের সঙ্গে। তার সঙ্গে পারিবারিক পর্যায়েও আমাদের একটা যোগাযোগ ছিল। কিন্তু যেটা সময়ের আবর্তে এখন অনেকটাই ফিকে হয়ে গেছে। তারাও ছিল আমাদের মতো তিন ভাই ও সালামই ছিল সবার বড়। অবশ্য আমার বন্ধুদের মধ্যে বেশির ভাগেরই আমার মতো ভাই ছিল, কিন্তু বোন ছিল না। সালাম ও আমি দুজনেই পরিবারের বড় সন্তান হওয়ায় দায়িত্ব ও কর্তব্যের মধ্যেও মিল ছিল। যদিও আমাদের চিন্তাভাবনাতে ছিল আকাশ-পাতাল তফাৎ। এমনকি আমাদের আর্থসামাজিক চিন্তাভাবনাতেও দুজন ছিলাম দুই মেরুর বাসিন্দা। তবুও আমরা একে অন্যের ভালো বন্ধু ছিলাম, এখনো আছি। আমি অনেক চঞ্চল কিন্তু সালাম ছিল শান্ত স্বভাবের। তাই আমাকে অনেকটা অভিভাবকের মতো দেখভাল করত। বিশেষ করে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার পর ঢাকায় এসে মডেল টেস্ট দেওয়ার সময়ের কয়েক দিন ওর মেসেই ছিলাম।
এরপরই আসে হিটুর নাম। যদিও তার নামটা সবার আগে আসার কথা। কিন্তু তার সঙ্গে পরিচয় হতে দেরি হয়ে গিয়েছিল। কারণ হিটু ছিল জিলা স্কুলের মর্নিং শিফটের ফার্স্ট বয়। তাই তাকে আমি সত্যিকার অর্থেই কল্পনায় দেখতাম আর ভাবতাম জিলা স্কুলের ফার্স্ট বয় না কেমন জানি হয়। কিন্তু পরিচয় হওয়ার পর যে হিটুকে চিনলাম, সেই হিটু একেবারে অন্য হিটু। আমরা কথায় কথায় মাটির মানুষ, পরিশুদ্ধ মানুষ শব্দগুলো ব্যবহার করি। কিন্তু বাস্তবে তেমন মানুষের দেখা আমরা কেউই পাই না। আমি অনেক সৌভাগ্যবান যে, আমি হিটুকে তেমনই দেখেছি ও সে আমার বন্ধু। আমার কাছে এই পৃথিবীর বুকে সবচেয়ে পবিত্র নামটা হচ্ছে হিটু। সবচেয়ে নিরহংকারী নামটাও হচ্ছে হিটু। তার আর আমার ক্যাম্পাস পাশাপাশি হওয়াতে আমি অবাধে ওর হলে যাতায়াত করতাম। এমনকি বুয়েটের ডাইনিং কখনো বন্ধ হয়ে গেলে, হিটু আমাকে ওদের ক্যানটিনে মাসওয়ারি খাবার জন্য বোর্ডার বানিয়ে দিয়েছিল। আমি সারা মাস জুড়ে খেতাম আর মাস শেষে টিউশনির বেতন দিলে সেই টাকা শোধ দিতাম।
রঞ্জু ছিল আমাদের কলেজের ফার্স্ট বয়, মানে মাধ্যমিকে সবার চেয়ে বেশি নম্বর পাওয়া ছেলে। সে ছিল দৌলতপুরের ছেলে, তাই শুরুতে খুব একটা পাত্তা দিতাম না। কারণ দৌলতপুরের স্কুল বা কলেজের পরীক্ষার মান নিয়ে সারা কুষ্টিয়াতেই একটা খারাপ ধারণা ছিল। কিন্তু যখন ভালোমতো পরিচয় হলো তখন বুঝলাম, এই ছেলে অন্য ধাতুতে গড়া। সে শুধু ফলাফলেই আমাদের সবার চেয়ে এগিয়ে না, মানুষ হিসেবেও অসাধারণ। আমি ওকে মামা বলে সম্বোধন করতাম। রঞ্জুও আমাকে ভাগনের মতোই স্নেহ করে এখন পর্যন্ত। উচ্চ মাধ্যমিকের পর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার সময় সে অসুস্থ থাকায় তার ফলাফল তেমন ভালো হয়নি। পরে জানলাম সে সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছে সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট হিসেবে। এরপর চাকরিতে সে অনেক ভালো করেছে এবং সেনাবাহিনীর নিজস্ব বিশ্ববিদ্যালয় (মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি) থেকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে গোল্ড মেডেল পেয়েছিল। তার প্রাপ্ত নম্বর এতই বেশি ছিল যে, এখন পর্যন্ত কেউ তার রেকর্ড ভাঙতে পারেনি। তাই প্রতি পাঁচ বছর অন্তর অন্তর তাকে আবার গোল্ড মেডেল দেওয়া হয়।
পাভেল ছিল আমাদের ব্যাচে দুজন—সানজাদ পাভেল আর শাহরিয়ার পাভেল। এখন যার কথা বলছি সে শাহরিয়ার পাভেল। পাভেলের সঙ্গে পরিচয়ের দিনক্ষণ মনে নেই। কিন্তু পাভেল ধীরে ধীরে বন্ধু থেকে পরিবারের সদস্য হয়ে উঠেছিল। এখনো তেমনি আছে। প্রত্যেকটা স্বাভাবিক সম্পর্কেই টানাপোড়েন থাকে। আমাদের মধ্যেও সেটা ছিল। কিন্তু এর মানে এটা নয় যে, আমরা একে অপরের শত্রু হয়ে গেছি। ঢাকা শহরে জীবন শুরুর দিনগুলোতে পাভেল আমাকে যে সহযোগিতা করেছিল, সেটাকে কখনোই টাকার অঙ্কে বিচার করা সম্ভব না। একজন মানুষকে আন্তরিকভাবে অনুভব করলেই শুধু তেমনটা করা সম্ভব। টিউশনির বেতন আজ পাব, কাল পাব করে অনেক আগেই মাস পেরিয়ে গেছে। পলাশি থেকে মগবাজার দিলু রোডে পায়ে হেঁটে পড়াতে যাই। নাশতা খাবার টাকা পর্যন্ত পকেটে নেই। এমনি একদিন পড়ানো শেষ করে পায়ে হেঁটে পাভেলের শহীদুল্লাহ হলের কক্ষে গিয়ে বললাম, পাভেল আজ সারা দিন কিছু খাইনি রে। ছাত্রীর বাসাতে আজ নাশতাও দেয়নি। তোর কাছে কিছু টাকা হবে। তখন আমাদের সবারই নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা। তবুও পাভেল তার মানিব্যাগ, প্যান্টের পকেট, শার্টের পকেট ঝেড়ে আমাকে তেরোটা টাকা জোগাড় করে দিল। আমি বললাম, তুই খাবার টাকা পাবি কোথায়? সে বলল, সেটা নিয়ে তোকে ভাবতে হবে না, আগে তুই বাঁচ। আমি একজীবনে অনেকের কাছ থেকেই অনেক সাহায্য নিয়েছি, কিন্তু কেন জানি, সেদিনের সেই তেরোটা টাকার কথা আজও আমি ভুলিনি। মরার আগে পর্যন্ত ভুলবও না আশা করি।
শাহেদের সঙ্গে বন্ধুত্ব আমার জীবনের আরেক বড় অর্জন। সবাই কোচিং করতে ঢাকা চলে গেল। আমি যেতে পারছি না। শাহেদের সঙ্গে তখন নতুন পরিচয়। সেই সূত্রেই তাকে বললাম, তুমি প্রতি সপ্তাহের কোচিংয়ের লেকচার সিটগুলো ফটোকপি করে আমাকে কুরিয়ার করে দিয়ো। সে এরপর থেকে নিয়ম করে প্রতি সপ্তাহে আমার জন্য লেকচার সিট পাঠাতে শুরু করল। ভর্তি পরীক্ষা হয়ে গেছে, আমরা বিভিন্নজন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়ে বসে আছি। আমাদের জীবনের সবচেয়ে সোনালি সময় সেটা। আমাদের মাথার ওপর তখন কোনো চাপ নেই। আবার করার মতো তেমন কাজও নেই। আমি সকালবেলা সাইকেল নিয়ে কালিশংকরপুরে শাহেদের বাসায় চলে আসি। সারা দিন সেখানেই থাকি। নাশতা, খাওয়া সবই চলে সময়মতো শাহেদের বাসাতে। তবে শাহেদের চরিত্রের যে গুণটা আমাকে সবচেয়ে বেশি টানে সেটা হলো, পরিস্থিতি যাইহোক সে সত্যিটা বলে দেয়। এতে কে কী মনে করল, সেদিকে তার কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। একবার আমাদের বাড়িতে আসার পর মা ওকে কাঁঠালের রোয়া খেতে দিয়েছেন। সেবারই আমাদের কাঁঠাল গাছে প্রথম কাঁঠাল ধরেছে। তাই আব্বা জিজ্ঞেস করলেন, কাঁঠাল খেতে কেমন? উত্তরে সে বলল, সত্যি বলব, না মিথ্যে বলব। ওর উত্তর শুনে আব্বা হাসতে হাসতে বললেন, অবশ্যই সত্যি বলবা। এরপর সে বলল, কাঁঠালটা খেতে পানসে মানে মিষ্টি হয়নি। তার উত্তর শুনে আব্বা অনেকক্ষণ হেসেছিলেন।
সৌরভ হচ্ছে আমাদের বন্ধুদের মধ্যে সবচেয়ে ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মানুষ। যেকোনো কিছুতেই আমরা সৌরভকে স্ট্যান্ডার্ড মানি ও জানি। আর ওর খরচের হাত অনেক বড়। সবাই মিলেই ঘণ্টা হিসেবে ভ্যান ভাড়া করে ঘুরতে হবে, তার উদ্যোগ সৌরভ একাই নেবে আর সেটার জন্য টাকাও সে একাই দেবে। সবাই মিলে দলবেঁধে নৌকা ভ্রমণে যাব, তার আয়োজক ও প্রযোজক দুটোই সৌরভ। নতুন কোনো সিনেমা বা গানের ক্যাসেট এসেছে তার উৎসও ছিল সৌরভ। সৌরভের স্বাস্থ্য আমাদের চেয়ে একটু ভালো ছিল। তাই আমরা সৌরভকে মজা করে বলতাম, তুই একদম ঠিক আছিস। তুই যদি আর একটু মোটা হয়ে যাস তাহলেই খারাপ লাগবে। এটা শুনে সে হাসত, কারণ আমরা তাকে ঘুরিয়ে মোটা বলছি। অবশ্য দুই পাভেলও বেশ মোটা ছিল। একবার এক রিকশায় দুই পাভেলের সঙ্গে সৌরভ ওঠার পর রিকশাটা একটা মোড় ঘুরতে গিয়ে তার চাকা বেঁকে একেবারে অন্য আকার নেয়। তারপর থেকে আমরা ওকে এটা বলে খেপাতাম যে, সৌরভ যে পাশে বসেছিল সেই পাশের চাকা দেবে গিয়েছিল।
মান্না হচ্ছে আমাদের মধ্যে সবচেয়ে সুপুরুষ। ওর সঙ্গে কোথাও ঘুরতে গেলে আমরা সব সময়ই এক ধরনের জটিলতায় ভুগতাম। এখনো ভুগি। যেমন উচ্চতা তেমনি শরীরের গড়ন। আর গায়ের রংও তেমন। তাই বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বাড়িতে আমরা মান্নার বন্ধু হিসেবে গিয়ে আলগা খাতির পেতাম। মান্না কথা একটু কম বলত কিন্তু যেগুলো বলত সেগুলো একেবারে বুলেটের মতো। আমি দেখতে অনেক চিকন কিন্তু খেতাম অনেক বেশি। এটা আমাদের বন্ধু মহলে আলোচনার অন্যতম বিষয়বস্তু ছিল। মান্না একদিন বলল, আমি আসলে খেয়ে সেটা হাড়ের মধ্যে গুঁজে রাখি। তাই আমি মোটা হই না। এমনই ওর রসবোধ। আর একটা ঘটনার কথা বললে ওর রসবোধ সম্বন্ধে ধারণা পরিষ্কারটা হবে। আমার বিয়ের জন্য সে নিজেই দায়িত্ব নিয়ে পাত্রী খোঁজা শুরু করল। পাত্রী পক্ষ যখন জানতে চাইতেন ছেলে কেমন? এর উত্তরে সে বলত ছেলে খুবই ভালো, কিন্তু...। এটুকু বলেই সে থেমে যেত। তখন অবধারিতভাবেই পাত্রী পক্ষকে প্রশ্ন করতে হতো কিন্তু কি? সে তখন হাসি হাসি মুখে বলত, কিন্তু একটু বেশিই কালো! আমি ওকে একদিন বললাম, তুই কি আসলে আমার জন্য পাত্রী খুঁজছিস নাকি পাত্রী ভাগিয়ে দিচ্ছিস। সে সিরিয়াস ভঙ্গিতে বলল, অবশ্যই পাত্রী খুঁজছি।
আমাদের বন্ধু মহলে শিশিরের ডাক নাম হচ্ছে বোতল আর পাগলা। বোতল নামকরণের মর্মার্থ এখনো উদ্ধার করতে পারিনি কিন্তু সে যে একটা পাগলা টাইপের নিঃস্বার্থ ভালো মানুষ, সেটা বুঝে গিয়েছিলাম দ্রুতই। বন্ধু অন্তঃ প্রাণ একটা ছেলে। বন্ধুত্বের খাতিরে যেকোনো ত্যাগ স্বীকার করতে সদা প্রস্তুত। এমনকি কাউকে মাইর পর্যন্ত দিতে একবারের জন্য হলেও ভাবত না। শিশিরের বড় ভাই সাগর ভাই ছিলেন আমাদের সবারই বড় ভাই। শিশির ঠিক যতটা নড়বড়ে সাগর ভাই ঠিক ততটাই শান্ত প্রকৃতির। শিশিরের মাকে আমি কাকিমা ডাকি। কাকিমাও সহজ সরল ভালো মনের একজন মানুষ। কিন্তু কী এক অজানা কারণে আমরা চাচাকে এড়িয়ে চলতাম আর কিছুটা ভয়ও পেতাম। যদিও ভয়ের কারণটা এখন পর্যন্ত জানি না।
এ ছাড়া রেজা, রাজ ও রোকন ছিল আমাদের বন্ধুমহলের অংশ। চয়ন ভাই আমাদের চেয়ে এক ব্যাচ সিনিয়র ছিলেন, কিন্তু আমাদের ব্যাচে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি হওয়ার সুবাদে আমাদের বন্ধু হয়ে গিয়েছিলেন। যদিও আমরা সবাই একসঙ্গেই আড্ডা দিতাম। কিন্তু চয়ন ভাইকে চয়ন ভাই বলেই সম্বোধন করতাম। রেজা পড়ত সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজে। পাশাপাশি সক্রিয়ভাবে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকাতে শাহরিয়ার পাভেল তার নাম দিয়েছিল নেতা। পরবর্তীতে আমরা তাকে সেই নামেই ডাকতাম। রাজ ছিল আমাদের বন্ধু মহলের প্রেমিক পুরুষ। তাকে তার নিজের নাম না ডেকে প্রেমিকার নাম ধরেই বেশি ডাকা হতো। রোকন আর আমার বাড়ি ছিল একই গ্রামে। তাই রোকনকে আমি প্রতিবেশী বলে সম্বোধন করি। একই ক্যাম্পাসে পড়ার সুবাদে সানজাদ পাভেল, জাকির ও সুদীপ্ত আমাদের মধ্যে যোগাযোগটা বেশি হতো, তাই আলাদাভাবে আর ওদের কথা বলছি না।
একটা বন্ধুমহল তখনই পূর্ণতা পায় যখন সেখানে বিভিন্ন মানসিকতার বন্ধু থাকে। আমাদের বন্ধুমহলটা সেদিক দিয়ে ছিল স্বয়ংসম্পূর্ণ। সেখানে একইসঙ্গে আছে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া আবার উচ্চমাধ্যমিকে পিএইচডি করে ফেলেছে এমন বন্ধুও আছে। উচ্চমাধ্যমিকে পিএইচডি বলতে আমি বোঝাতে চাইছি, তারা এখনো উচ্চমাধ্যমিকের গণ্ডি পেরোতে পারেনি। আমি এখনো জীবনের খারাপ সময়গুলোতে দুই চোখ বন্ধ করলেই দেখতে পাই, দুটি ভ্যানে করে আমরা মোট বারো জন বসে আছি। ভ্যান দুটি যাচ্ছে ঢাকা রোড ধরে গড়াই নদীর দিকে। গড়াই নদীর ওপর দিয়ে রেলসেতু চলে গেছে কুমারখালীর দিকে। আমাদের লক্ষ্য সেখানেই। ভ্যানের মধ্যে বসে আমরা সবাই কোরাসে একটা গান ধরেছি—
‘অমরত্বের প্রত্যাশা নেই, নেই কোনো দাবি দাওয়া
এই নশ্বর জীবনের মানে শুধু তোমাকে চাওয়া।’
সকলকে বন্ধু দিবসে শুভেচ্ছা।
মো. ইয়াকুব আলী: সিডনি, অস্ট্রেলিয়া। ইমেইল: <[email protected]>