আমার দেশ, দায়িত্ব কার

ফাইল ছবি

তিন বছরের প্রবাসজীবনে তিনটি মহাদেশ দেখলাম। মানুষ কত রং আর ঢঙের হতে পারে, তা–ও দেখলাম। খাদ্যের ভিন্নতা রয়েছে। মানুষ অনেক ভাষায় তাদের মনে ভাব প্রকাশ করছে। ইংরেজি–হিন্দি বুঝতে পারলাম। তবে কমবেশি সব মানুষ ইশারা ভাষা মোটামুটি বুঝতে পারে।

দেশে দেশে মানুষের ধর্ম, ভাষা, খাদ্য ও পোশাকের হেরফের রয়েছে। ভাষা, ধর্ম, গায়ের রং যা–ই হোক, দেশগুলোয় সাধারণ মানুষ সম্মান পায়। জনগণের বিচরণকেন্দ্রগুলো পরিকল্পিত, পরিষ্কার ও শৃঙ্খল। মানুষ অধিকারসচেতন ও প্রতিবাদমুখর।

শহর বা গ্রাম কোথাও ময়লার স্তূপ জমে নেই। রাস্তাঘাটে আবর্জনা দেখলাম না। সড়কে যানবাহনে বিকট শব্দের হর্ন শুনলাম না। মানুষ যেখানে–সেখানে থুতু নিক্ষেপ করছে না। একটা দেশে দেখলাম, জনসমাগম হয়, এমন জায়গায় থুতু ফেলা ব্যক্তিকে নির্বোধ ও অপরাধী হিসেবে দেখা হয়।

কেউ প্রকাশ্যে আইন ভঙ্গ করলে সঙ্গে সঙ্গে কেউ না কেউ প্রতিবাদ করতে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। ব্যক্তিকে ভর্ৎসনা দিচ্ছে। এসব দেখে সামাজিক লজ্জায় পড়ে যাওয়ার ভয় কাজ করে লোকের মনে। কেউ ভুলবশত করে ফেলেও সে লজ্জিত হচ্ছে, দুঃখ প্রকাশ করে চলে যাচ্ছে।

যেসব কর্মকর্তা জনসেবামূলক কাজে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন, যেমন হাসপাতাল, টহল পুলিশ, রেলস্টেশন, বাস স্টপেজ, ইমিগ্রেশন অফিস ইত্যাদি, তাঁরা সাধারণদের ‘স্যার’ বলে সম্বোধন করেন।

যা দেখলাম, তা হলো জনগণ চূড়ান্ত দায়িত্বশীল। সরকার, প্রতিষ্ঠান, সংস্থাগুলো তাদের সামর্থ্য নিয়ে জনগণের পাসে দাঁড়ায়। জনগণ কর্তৃপক্ষকে বোঝে, দরকার অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়। রাষ্ট্রব্যবস্থা শতভাগ ডিজিটাল। অনেকে সময়ে চেয়ে এগিয়ে। তারা প্রযুক্তিকে এগিয়ে নিচ্ছে এবং জনগণের কল্যাণে তার সর্বোচ্চ ব্যবহারও করছে। জনগণ ও কর্তৃপক্ষের মধ্যে কোনো লুকোচুরি, চালাকি, শয়তানি বা ধোঁকাবাজির বিষয় নেই।

আর আমাদের দেশ বাংলাদেশে কী হয়?

রাস্তায় চলা যায় না গাড়ির হর্নের জন্য। কানের মধ্যে আঙুল ঠুকিয়ে ছিদ্র বন্ধ করে দিতে হয়। যেখানে–সেখানে ময়লা ফেলছে। খাবারের দোকানেও থুতু ফেলছে মানুষ। জনগণের হুঁশ নেই, বোধশক্তি কাজ করে না। এই যখন জনগণের অবস্থা, কর্তৃপক্ষ তখন দায়িত্ব বদলে উদাসীন। জনগণের সঙ্গে চাকরবাকরের মতো ব্যবহার, তুইতোকারি করে কথা বলছে। সব জায়গায় মানুষ মেজাজ হারাচ্ছে, বিরক্ত হচ্ছে। কিন্তু কোনো প্রতিকার কি পাচ্ছে?

মানুষ দিন দিন একা হয়ে যাচ্ছে। জিম্মি হয়ে যাচ্ছে। কেউ অন্যায়ভাবে দ্রব্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে, কোনো সমস্যা নেই। যার পকেটে টাকা আছে, সে কিনে নেবে। বরং বেশি করে কিনে কীভাবে ঘরে মজুত করা যায়, সেদিকে যাবে, চিন্তা করবে।

কিন্তু কেন বেড়ে গেল, সেটা তলাবে না। আসলেই বেড়েছে, নাকি শুধু শুধু মানুষের কাছে বেশি দামে বিক্রি করছে, সেটা জানার বিষয় নয়। শুধু নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের বাজার নয়, বিমানের টিকিট থেকে শুরু করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমরা এভাবেই বাংলাদেশের জনগণ প্রতিনিয়ত নিজেদের ফাঁস তৈরির দড়ি অন্যের হাতে তুলে দিচ্ছি।