‘আমার একটি স্বপ্ন আছে’
‘যদি উড়তে না পার, তবে দৌড়াও; যদি দৌড়াতে না পার, তবে হাঁটো, হাঁটতে না পারলে হামাগুড়ি দাও। যে অবস্থাতেই থাকো, সামনে চলা বন্ধ করবে না।’
মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রের উক্তি মানেই অসাধারণ শক্তি ও অনুপ্রেরণার উৎস। যুক্তরাষ্ট্রে আফ্রিকান আমেরিকানদের পূর্ণ নাগরিক অধিকার নিশ্চিত হয়েছিল যে নেতার হাত ধরে, তিনিই মার্টিন লুথার কিং। তাঁর স্বপ্ন ছিল একটি সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ পৃথিবীর, যেখানে সবাই সমান। তিনি এমন এক নেতা, যিনি সব দেশে, সবার কাছে প্রিয়। পৃথিবীর হাতে গোনা যে কয়েকজন রাজনীতিবিদ সারা বিশ্বে সমানভাবে সম্মানিত, মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র তাঁদের মধ্যে অন্যতম।
আজ থেকে ৫৭ বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক অধিকার আন্দোলনের নেতা মার্টিন লুথার কিং এক অসামান্য ভাষণ দিয়েছিলেন। ওয়াশিংটনে লিঙ্কন মেমোরিয়ালের সামনে দাঁড়িয়ে আড়াই লাখ মার্কিনের এক সমাবেশে ‘আই হ্যাভ আ ড্রিম’ (আমার একটি স্বপ্ন আছে) শীর্ষক সেই বিখ্যাত ভাষণ বিশ্বের সর্বকালের সেরা বাগ্মিতার দৃষ্টান্তগুলোর অন্যতম হয়ে আছে। তাঁর সেই ভাষণ ছিল এমন কিছু, যা সব মার্কিনই নিজের করে নিয়েছে। এটা এতটাই যে, যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে আপনি দেখবেন, তরুণেরা বা ছোট শিশুরাও বলছে, ‘আমার একটি স্বপ্ন আছে।’
সেদিন ওয়াশিংটনে তাঁর ভাষণে মার্টিন লুথার কিং প্রায় ঐশী বাণীর মতো ভাষায় বর্ণনা করেছিলেন তাঁর কল্পনার যুক্তরাষ্ট্রকে। বলেছিলেন, কীভাবে বর্ণবৈষম্য গোটা জাতিকে ধ্বংস করে দিচ্ছে, শুধু কালো মার্কিনদের জীবনকে নয়। তিনি তুলে ধরেছিলেন ভবিষ্যতের যুক্তরাষ্ট্রকে নিয়ে তাঁর আশাবাদকে, যেখানে সব মার্কিন হবে সমান।
সারা বিশ্বে ক্রমবর্ধমান কট্টর ও উগ্র জাতীয়তাবাদের উত্থানের ঢেউ যুক্তরাষ্ট্রেও প্রবেশ করেছে। আর এটি ঘটেছে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হাত ধরে। তিনিই নিয়ে আসেন ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ শব্দবন্ধটি। এ যেন মার্টিন লুথার কিং থেকে নেওয়া পূর্বসূরি বারাক ওবামার ‘আই হ্যাভ আ ড্রিম’-এর এক সুচিন্তিত প্রতিক্রিয়া। কিং যে যুক্তরাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখতেন, সেখানে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই সহচর। তিনি বলতেন, ‘আমরা সবাই হয়তো আলাদা নৌকায় করে এখানে এসেছি, কিন্তু এখন আমরা একই জাহাজের যাত্রী।’
মার্টিন লুথার কিংয়ের জন্ম জর্জিয়ার আটলান্টায় ১৯২৯ সালের ১৫ জানুয়ারি। তিনি বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫৫ সালে পিএইচডি করেন। তিনি ১৯৬৪ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হন। যুক্তরাষ্ট্রে নাগরিক ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় অহিংস আন্দোলনের জন্য কৃষ্ণাঙ্গদের মধ্যে তিনিই সর্বকনিষ্ঠ, যিনি শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। ১৯৬৮ সালের ৪ এপ্রিল শ্বেতাঙ্গ উগ্রপন্থী আততায়ীর হাতে গুলিবিদ্ধ হয়ে মার্টিন লুথার কিং মৃত্যুবরণ করেন।