আমরা কেন ট্রাম্পকে ছাড়তে পারছি না

সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প
ফাইল ছবি: এএফপি

ট্রাম্প ডিরেঞ্জমেন্ট সিনড্রোম একটি প্রচ্ছন্ন, অবিচল বিশ্বাস—যা সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিগত চার বছরের সব কার্যক্রমের পুরোটাই দুর্নীতিগ্রস্ত এবং নোংরামি বলে আখ্যায়িত করে। এসব কার্যক্রম দিয়েই তিনি আগের দিনগুলোতে রাজনৈতিক আলোচনায় আধিপত্য বিস্তার করেছিলেন।

ট্রাম্প এখন ক্ষমতা ও অফিস দুটোর-ই বাইরে। তাই, আমরা হয়তো ভাবছি, আগের সব অবস্থার অবসান হয়ে যাবে। কিন্তু ঘটছে তার উল্টো। এখন আমরা দেখছি ভিন্ন এক ‘ট্রাম্প ডেপ্রিভিশন সিনড্রোম (টিডিএস)’ যা আমার শারীরিক ও মানসিক এবং কখনো কখনো বুদ্ধিবৃত্তি বিকাশের প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে।

এটি নিয়ে ওয়াশিংটন পোস্টের মতামত কলামে সর্বপ্রথম কথা বলেছেন হ্যানরি ওসটেন। তিনি বলেন, ‘ট্রাম্পের প্রতিটি পদক্ষেপ দেশজুড়ে ছড়িয়ে দিতে রাজনীতিবিদ ও সাধারণ জনগণসহ, সাংবাদিকেরা এতটাই আসক্ত হয়ে পড়েছেন, তারা ট্রাম্পের হাল ছাড়তে পারছেন না। রিপাবলিকান পার্টির মধ্যে ‘ডাই-হার্ড’ ফ্রেইজটি ট্রাম্পের প্রতি তাদের অটল আনুগত্যকে অনলাইনেও সরব করে তুলেছে।’

রাজনৈতিক মিডিয়া বলা যায় প্রায় প্রতিদিন অপরিবর্তনীয়ভাবে ট্রাম্প-সমর্থক, বিরোধী দল, বিভক্ত রিপাবলিকানদের গল্পগুলো নিয়ে সংবাদ প্রচার করে যাচ্ছেন। অন্যদিকে, ডেমোক্র্যাটরা ৬ জানুয়ারির ক্যাপিটল দাঙ্গার বিষয়টি নিয়ে কমিশনকে চাপ দিচ্ছে। এটি এমন একটি পদক্ষেপ, যা ট্রাম্পকে আগামী কয়েক মাস সংবাদের শিরোনামে রাখবে। ট্রাম্প দৃষ্টির বাইরে, কিন্তু তিনি কারও মনের বাইরে নন।

নতুন ‘টিডিএস’–এ ক্ষতিগ্রস্ত কিছু মানুষের জন্য অর্থ কামানো অবশ্যই একটি উদ্দেশ্য। ট্রাম্পের বছরগুলোতে রাজনৈতিক সংবাদ আর অনুষ্ঠানগুলোর রেটিং, বিশেষত কেবল-নেটওয়ার্কগুলোতে নাটকীয়ভাবে বেড়েছে। খবর-অনুষ্ঠান নির্মাতা ও চ্যানেলের হোস্টরা খুব ভালো করেই জানেন, সাবেক প্রেসিডেন্টের আচরণ প্রত্যেকেরই দৃষ্টি আকর্ষণ করবে। প্রিন্ট সাংবাদিকেরা জানেন, অনেকেই ট্রাম্পকে নিয়ে যথেষ্ট পরিমাণে খবর পান না। যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে সুপরিচিত রাজনৈতিক ভিলেন সম্পর্কে নিত্য তথ্য ও গল্পের সঙ্গে ব্যবসা বাড়ানো, অনেকের পক্ষে সহজ একটি ব্যবসা হয়ে দাঁড়িয়েছে বর্তমানে। এসব মানুষের জন্য ‘নেভার ট্রাম্প’ মানে ‘এভার ট্রাম্প!’

যুক্তরাষ্ট্রের দুই পক্ষের রাজনীতিবিদদের উদ্দেশ্য একই। ট্রাম্পের কিছু তথ্য অর্থাৎ ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় ট্রাম্প যা কিছু বলেছিলেন বা করেছিলেন, তার নির্ভরযোগ্য সমর্থন করে অনেক ছোট ছোট রিপাবলিকান রাজনীতিবিদ ফক্স নিউজে স্বল্পসময়ের টক-শো, আলোচনা খবরে সেলিব্রিটি হয়ে গেছেন। ট্রাম্প যদি খবর থেকে সরে আসে, তবে তাঁরাও খবরের দৃষ্টিতে থাকবেন না। তাদেরও দিন শেষ হয়ে যাবে।

তবে আতঙ্কের বিষয় হলো এই, বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, যিনি একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, তাঁর জন্য ‘ট্রাম্প ডেপ্রিভিশন সিনড্রোম’ একটি খারাপ প্রতিফলন ঘটাতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ক্ষমতায় আসার পর বাইডেন জনগণের জন্য একটি উচ্চাভিলাষী এজেন্ডা তৈরি করেছেন। যার প্রয়োগ ও সাফল্যে ভবিষ্যতে তাঁর পক্ষে জনসাধারণের সমর্থন খুব প্রয়োজন। জনগণ যদি বাইডেনকে আলোচনায় না তোলেন, তবে তিনি এটি করতে ব্যর্থ হতে পারেন।

তার ওপর অহংবোধের মতো একটি সরল বিষয়ও রয়েছে। বাইডেনের অবশ্য একটি ভাবমূর্তি তৈরি করেছে, তিনি নির্বাচনে ট্রাম্পকে পরাজিত করেছেন। কিন্তু সত্য হলো, বাইডেন এখনো রাতের খবরকে প্রভাবিত করতে পারেননি, যা পরাজিত হয়েও ট্রাম্প করে যাচ্ছেন। এটি হতাশাজনক। সম্ভবত এসব কারণেই বাইডেন গত সপ্তাহে তার জাতীয় টেলিভিশনে টাউন হলে দর্শকদের বলেছিলেন, ‘ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্পর্কে কথা বলতে বলতে তিনি ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন।’

একজন সমালোচিত ব্যক্তিত্ব এবং সেরা বিনোদনদাতা হিসেবে এখনো যদি ট্রাম্প আমাদের মনোযোগ বজায় রাখেন, তবে এটি অবশ্যই বাইডেনের জন্য ইতিবাচক কিছু নয়। আমরা সবাই জানি, মানুষ আকর্ষণীয় ব্যক্তিদের অনুসরণ করতে চান। তবে সেটি যদি হয় শুধু ট্রাম্পের মতো একজন আশ্চর্যজনক সমালোচক ব্যক্তিকে নিয়ে, তবে সেটা সময়ের অপব্যবহার।

জনসাধারণের দৃষ্টি আকর্ষণ করাই যদি রাজনীতিবিদ বা সংবাদমাধ্যমের উদ্দেশ্য হয়, তবে আমাদের ঠিক ট্রাম্পের মতো বিতর্কিত ভিন্ন কোনো একজনকে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আনতে হবে, কিংবা ট্রাম্পের থেকে বড় উন্নত মননশীল কোনো রাজনীতিবিদকে রাতের খবরে রাখতে হবে। এ ক্ষেত্রে সমালোচকদের প্রশ্ন, আমরা কেন ট্রাম্পের তুলনায় বাইডেনকে খবরে কম আনছি?

মানুষকে অবাক করে বিতর্কিত হতে ট্রাম্প তাঁর জীবনের অনেকটা সময় ব্যয় করেছেন নিউইয়র্কের পত্রিকার পাতায় ও টেলিভিশনে। তিনি জানেন, কীভাবে মানুষের মনযোগ আকর্ষণ করা যায়। তাই ট্রাম্প চলে যাওয়ার পরও আমরা তাকে নিয়েই রোজ কথা বলি, খবর ছাপি, টিভি চ্যানেলগুলোর পর্দা ব্যস্ত রাখি। আমরা ট্রাম্পকে ছাড়তে পারছি না!