আব্বু তোমাকে ভীষণ মিস করছি

বাবার সঙ্গে লেখক
বাবার সঙ্গে লেখক

আমার আব্বু জয়নুল আবেদীন গত বছর ১৪ এপ্রিল দিবাগত রাতে ইন্তেকাল করেন। প্রবাসে থাকার কারণে আব্বুকে শেষ দেখা দেখতে পাইনি। এই কষ্ট নিয়ে এখন দিন কাটাচ্ছি। আব্বুকে হারানোর এক বছর পূর্ণ হয়েছে।

বাবাহীন একজন ছেলের জীবন যে কতটা বিয়োগান্ত হয়, তা হয়তো যাদের বাবা বেঁচে আছেন তারা কখনোই বুঝতে পারবে না। প্রতিটি মুহূর্তে মনে হয় সত্যি আমি বড়ই একা। একটু ভালোবাসা দেওয়ার, সান্ত্বনা দিয়ে সামনে চলার প্রেরণা জোগানোর মানুষটি আজ বেঁচে নেই। বাবাকে ছাড়া বাঁচতে পারব এ কখনো কল্পনা করিনি। কিন্তু বাস্তবতা বড়ই কঠিন। কেটে যাচ্ছে একেকটি দিন, মাস।

বাবার অনেক স্মৃতি, অনেক কথা, যা ভুলতে পারি না, ভোলা যায় না। বাবাহীন প্রত্যেক দিন একেকটি ঝামেলা, একেকটি একাকিত্ব। ছায়াহীন পথ, আর লক্ষ্যহীন সকল যুক্তি। আব্বুকে খুব মিস করছি। আব্বুর জন্য অনেক কষ্ট হয়। আব্বু না থাকাটা যতটুকু কষ্টের, তার চেয়েও বেশি ঝামেলার।

আব্বু, তুমি আমাদের সকলকে ছেড়ে না ফেরার দেশে চলে গেছ। তুমি বেঁচে থাকতে তোমার গুরুত্ব আমরা বুঝিনি। আজ আমরা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি তোমার অনুপস্থিতি। তোমার চলে যাওয়া আমাদের জীবনে বিশেষ করে আমার জীবনে অপূরণীয় ক্ষতি।

আব্বু, হয়তো জানো, আজকাল আমি ভীষণ হিংসুটে হয়ে গেছি। অন্যদের বাবাকে দেখলে ভীষণ হিংসা লাগে আমার। ভীষণ আব্বু বলে ডাকতে ইচ্ছে করে আমার। তোমাকে নিয়ে আগের মতো ঘুরতে ইচ্ছে করে আমার। দুই হাতে মুখ গুঁজে নয়, চিৎকার দিয়ে আব্বু বলে ডাকতে ইচ্ছে করে আমার। আমি অন্যদের মতো হতে চাই আব্বু।

আমার আর এই যান্ত্রিক জীবন ভালো লাগে না। তোমার ছায়ায় যতটা দিন ছিলাম ভালোই তো ছিলাম। ছোট্ট পুঁচকে একটা ছানার মতো জীবনটা এগোচ্ছিল। আব্বু আমার মতো এই পুঁচকে ছানার ঘাড়ে এত বড় সংসারের দায়িত্ব কীভাবে দিয়ে গেলে? আমি আজকাল বড্ড ক্লান্ত হয়ে গেছি আব্বু। জীবনের একটা বছর তোমাকে না দেখে কাটিয়ে দিয়েছি আমি।

লেখক
লেখক

সত্যি ভাবতে বড় অবাক লাগে। জানি না কীভাবে সময় এত দ্রুত ক্ষয়ে যায়। সবকিছু যদি ক্ষণিকের জন্য উল্টো হয়ে যেত, খুশিতে আত্মহারা হয়ে যেতাম। কী ফিরে পেতাম জানি না, তবে তোমাকে আবারও ফিরো পেতাম ঠিকই। ফিরে পেতাম সেই সোনাঝরা আনন্দের দিনগুলো। বুকের পাঁজরে আটকে রাখতাম তোমায়। যায় দিন ভালো, আসে দিন খারাপ।

জানি না জীবনের খাতায় আর কিছু হারাবার আছে কিনা। তবে তোমাকে হারানোর পরে মনে হয়েছিল দুনিয়াটা বড়ই নিষ্ঠুর একটা জায়গা। পৃথিবীতে যুগে যুগে একজন মানুষের আবির্ভাব ঘটে। আমার চোখে আমার আব্বু তাদের একজন। যিনি সারা জীবন কল্যাণ করেছেন মানুষের। অনেক মানুষের শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছেন। যিনি জীবনে কষ্ট করেছেন কিন্তু কখনো তার নীতি ও আদর্শ থেকে বিচ্যুত হননি। সগৌরবে পাড়ি দিয়েছেন জীবনের ৬২টি বছর।

সুখী মানুষের কাছে ৬২ বছর হয়তো কিছুই না। কিন্তু আমার বাবা জীবনে ৬২ বছরের প্রতিটি মুহূর্ত সংগ্রামের সঙ্গে পাড়ি দিয়েছেন। গড়ে গেছেন এক বর্ণাঢ্য জীবনের ইতিহাস। আমার লেখনীর মাধ্যমে তার জীবনী বা তাকে সম্পূর্ণভাবে ফুটিয়ে তুলার স্পর্ধা আমার নেই। কোনো কালে হবে কিনা জানি না। বাবার বিবেক আর তার দেখানো পথে হাঁটছি অবিরাম। জানি না এই পথের শেষ আছে কিনা। যদি বা শেষ না হয় এই পথের, ক্ষতি নেই। জীবন তো চলবেই জীবনের মতো। ভয় কী, বাবার আশীর্বাদ আমার সঙ্গেই আছে। বাবা, তোমায় বুকে ধারণ করেই বাকিটা জীবন কাটিয়ে দেব। তুমি যেখানেই থাকো ভীষণ ভালো থেকো। তোমার ছেলে তোমার অপেক্ষায়।
সকলের কাছে দোয়া চাই, আল্লাহ যেন আমার আব্বাকে জান্নাতুল ফেরদৌস দান করেন।

মোহাম্মদ নুরুল্লাহ: লিসবন, পর্তুগাল। লেখক প্রবাসী সাংবাদিক ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, অল ইউরোপিয়ান বাংলা প্রেসক্লাব।