আব্বা!

আবার আসুক না সব শনিবার ফিরে
আম্মার হাতে লেখা বাজারের লিস্ট নিয়ে
আমি চুনারুঘাট বাজারে ইউছুফ আলী চাচার
ওষুধের দোকানের সামনে
আপনার অপেক্ষায় থাকি।
আপনি আসবেন চাঁন্দপুর চা–বাগান থেকে,
আপনার কর্মস্থল থেকে!
রোববার যে আপনার ছুটির দিন।
আসুক না সব রোববার ফিরে আবার,
যেদিন আপনি আর চাচারা মিলে
আমার অঙ্কের ক্লাস নেবেন, অঙ্ক শেখাবেন
আর অঙ্ক না বোঝার কারণে
চালাবেন কিছু উত্তম-মধ্যম।
বড় যে মার খেতে ইচ্ছা করছে, আব্বা।

আসুক না ফিরে আবার সেই দিন
যেদিন ছোট ভাইয়ের সঙ্গে কোনো কারণে ঝগড়ার জন্য
লাঠি নিয়ে আমাকে অনেক মানুষের সামনে
অনেকক্ষণ ধরে দৌড়াবেন।
নিক না মজা আশপাশে থাকা মানুষজন।
হই না আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, তাতে কি!
এখনো যে আপনার দৌড়ানি খেতে খুব ইচ্ছা করে।
বাসায় অন্যরা পড়ছে আর আমি ওয়াকমেনে
গান শুনছি দেখেই তেলে বেগুনে উঠুন না জ্বলে
ছুড়ে ফেলুন না ওয়াকমেনটা
আমার হাত থেকে নিয়ে!
আবারও বলুন না,
নট কোয়ালিটি বাট কোয়ান্টিটি এবং এই বলে
অনেকগুলো কাপড় কিনে দিন না
নিজে তেল চিটকে শার্টটাই না হয় পরে থাকুন
তবু আবার ফিরে আসুন না আব্বা!
আবারও না হয়,
বিশ্ববিদ্যালয় যাওয়ার কালে হাতে তিন শ টাকার সঙ্গে
আরও এক টাকা দিয়ে বলুন না যে
এই এক টাকা বরকত দিয়ে যাবে।

আবারও, যখন বাইরে থেকে বাসায় ফিরছি
বারবার ফোন করে জানতে চান না কোথায় আছি
কতক্ষণ লাগবে বাসায় পৌঁছাতে,
কেউ যে ফোন করে জানতে চায় না এখন আর
আপনার মতো করে,
কোথায় আছি বা রাস্তায় কোনো সমস্যা হচ্ছে না তো
বাসায় পৌঁছার পর পায়ে ধরে সালাম দিতে গেলে
আমি আপনার ফেরেস্তা বলে নিন না বুকে টেনে।
আমরা, আপনার সন্তানেরা যে কাতর হয়ে আছি, আব্বা!
আমি তখন চাকরি করি,
এক ঈদে খুব কান্না আসছিল
কাউকে কিছু দিতে পারিনি বলে
আপনি মাথায় হাত রেখে বলেছিলেন
আপনারা কেউ কি কিছু চেয়েছেন বরং
আমার কিছু লাগবে কি না জানতে চেয়ে
সান্ত্বনা দিয়েছিলেন।
একবার এসে কিছু চেয়েই দেখুন না, আব্বা
আল্লাহ যা দিয়েছেন তাতে অন্তত
আমাকে আর কাঁদতে হবে না।

ড্রেনের যে ঢাকনা না থাকার কারণে
আপনি দুর্ঘটনায় পড়েছিলেন
সেই ঢাকনা করা হয়েছে আব্বা
আগে করলে হয়তো
আপনি আজও আমাদের অপেক্ষায় থাকতেন
কখন আসছি, কোথায় আছি খবর নিতেন।
এমন সামান্য দুর্ঘটনায় আপনি এভাবে চলে যাবেন
তা ভাবনারও বাইরে ছিল
কিন্তু এটাই সত্য যে আপনি চলে গেছেন
আর শত কান্নায়, শত আহাজারিতেও
আপনাকে আর ফিরে পাব না।
বিশ্বাস করুন,
সেদিন আপনাকে ঢাকায় রেখে আমি
হবিগঞ্জে আসতে চাইনি একদমই
কিন্তু আপনার নাতনির আগ্রহ আর
আপনার সম্মতির কারণেই
এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম।

সেদিন না গেলে হয়তো আপনার যাওয়ার ক্ষণে
পাশে থেকে শেষ বিদায়টা জানাতে পারতাম।
আব্বা,
জানি যতই বলি
আপনি আর ফিরবেন না এবং এ–ও জানি
ওখানে গেলে যে আর ফেরা হয় না
কেউ ফেরে না।
সান্ত্বনা একটাই যে
সেদিন হবিগঞ্জে যাওয়ার আগে
আপনার কপালে আমার শেষ চুম্বনটা
দিতে পেরেছিলাম।
ওটাই না হয় আপনার জন্য
আমার শেষ স্মৃতি হয়ে থাক।
আমরা, আপনার সন্তানেরা-স্বজনেরা অনেক ভালো আছি!
আপনিও যেখানেই থাকুন অনেক ভালো থাকুন, আব্বা।
* লেখক: জামিলুর রহমান চৌধুরী, কিগালি, রুয়ান্ডা