আফগানিস্তানজুড়ে আতঙ্ক, শঙ্কায় তরুণদের ভবিষ্যৎ

ফাইল ছবি

কয়েক দিন ধরেই আফগানিস্তানে চলছে সহিংসতা। কোনো কিছুই স্বাভাবিক নেই। আমার দুই রুমমেট (মুজাম্মিল ও আসাদ) আফগানিস্তানের হওয়ায় প্রতি মুহূর্তেই খবর পাচ্ছি কখন কী হচ্ছে। খুব আতঙ্কে সময় কাটছে তাঁদের। পরিবারের সঙ্গে ঠিকমতো কথাও বলতে পারছেন না। তালেবানদের নির্দেশে কান্দাহার প্রদেশে ২ দিন আগে ২৪ ঘণ্টা মুঠোফোন নেটওয়ার্ক বন্ধ করে দেওয়া হয়।

কী যে এক ভয়ংকর সময় কেটেছে তাঁদের, তা প্রকাশ করার ভাষা আমার নেই। ফোনে খবর আসে, কারও বাবা মারা গেছে, কারও ভাই দেশ ত্যাগ করেছে, কারও বোনকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এর মধ্যে অনেকেই তুরস্কের উদ্দেশে রওনা দেন এক অনিশ্চিত জীবন নিয়ে। যেখানে রয়েছে অসংখ্য যুবক, যাঁদের মধ্যে আবার কারও মাকে, ভাইকে সীমান্ত রক্ষাকারী বাহিনী আটক করে রেখেছে। কঠিন এক সময় পার করছে আফগানিস্তানের জনগণ। আমার দুই রুমমেট আফগান হওয়ার কারণে বিষয়টা আমাকে খুব ভাবাচ্ছে।

আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে চারদিক থেকে তালেবান ঢোকার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে শহরের বাসিন্দারা কাবুল ছেড়ে পালাতে শুরু করে। কোন পথে শহর ছাড়বে মানুষ, তা ঠিক করতে হিমশিম খাওয়ায় রাস্তায় গাড়ির লম্বা লাইন তৈরি হয়েছে। ব্যাংকগুলোয় প্রচণ্ড ব্যস্ততা চোখে পড়ছে। কারণ, মানুষ তাদের সঞ্চিত অর্থ তুলে নেওয়ার চেষ্টায় ব্যাংকে ভিড় জমিয়েছেন। সামনের দিনগুলোয় তালেবানরাই দেশ পরিচালনা করবে। এমন অবস্থায় আফগানিস্তান নিয়ে পরিকল্পনা জানিয়েছে তালেবান।

বিবিসির সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে তালেবানের মুখপাত্র সুহাইল শাহীন আগামী কয়েক দিন তাঁরা কী কী করবেন, সেটা জানান। তালেবানের এই নেতা বলেন, কয়েক দিনের মধ্যে আমরা প্রথমত, ক্ষমতার শান্তিপূর্ণ হস্তান্তর চাই। দ্বিতীয়ত, মানুষ তাদের স্বাভাবিক কাজকর্ম শুরু করবে। তৃতীয়ত, যাঁরা কাবুল সরকারের সঙ্গে কাজ করেছেন, আমরা তাঁদের ওপর কোনো ধরনের প্রতিশোধ নেব না।

তালেবানের এই নেতা আরও বলেন, আমরা চাই সকল বিদেশি দূতাবাস তাদের স্বাভাবিক কাজকর্ম চালু রাখুক। কূটনীতিকদের কোনো ভয় নেই। সবাই পূর্বের মতো কাজ করবে। এ সময় তিনি বলেন, আশরাফ গনিসহ আফগানিস্তানের নেতাদের আমরা আমাদের সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানাই।

কাবুল থেকে বিবিসির এক সংবাদদাতা বলছেন, শহরে মানুষের মধ্যে নজিরবিহীন উদ্বেগ দেখা গেছে। বহু দোকান–বাজার বন্ধ হয়ে গেছে। কিছু কিছু মানুষ বলেছেন, তাঁরা জীবনে কখনো এত উদ্বিগ্ন বোধ করেনি। কিছু কিছু সরকারি দপ্তর বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

অনেক সেনা ও পুলিশ সদস্য বিভিন্ন জায়গায় তাঁদের পদ ছেড়ে চলে গেছেন এবং তালেবানরা নিয়োগ দিয়েছে তাদের নিজেদের লোক।

আমার বন্ধু মুজাম্মিল বলেন, তাঁদের ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চিত। তাঁরা দেশে গিয়ে চাকরি করার সুযোগ কিংবা অন্যান্য সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবেন। কারণ, তালেবানরা সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা প্রথমে তাদের লোকদের দেবে। তালেবানদের এই দখলদারি কোনোভাবেই মানতে পারছে না আফগানিস্তানের জনগণ। তারা বলছে, ২০ বছর ধরে গড়ে ওঠা এ উন্নয়ন ঠিক রাখতে পারবে না তালেবান। আমার সঙ্গে ফেসবুকে যুক্ত থাকা সবার একটাই পোস্ট, ‘আমরা আমাদের সরকারব্যবস্থা ফিরে পেতে চাই, আমরা স্বাধীনভাবে বাঁচতে চাই।’
লেখক: মো. হাসিবুর রহমান, শিক্ষার্থী, বেঙ্গালুরু ইউনিভার্সিটি, ভারত।