আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবসের শুভেচ্ছা
শিহাবের সঙ্গে ছোটবেলায় স্কুলে পড়েছি। কলেজেও পড়েছি আর তারপর ও চলে গিয়েছিল জাহাঙ্গীরনগর ইউনিভার্সিটিতে পড়তে। টুকটাক ফেসবুকে যোগাযোগ আছে, একজন সফল ব্যবসায়ী সে। ’৮৯ ব্যাচেরই।
এবার খুব অল্প দিনের জন্য দেশে গিয়েছিলাম। করোনা মহামারি আমার ডাক্তারি জীবনে কঠিন কষ্টের ছায়া ফেলেছে। দেশে কোনো দিন যেতে পারব, চিন্তা করিনি।
যাওয়ার সংবাদ শুনেই শিহাব বায়না করল তার সঙ্গে যেন অবশ্যই দেখা করি। মনে মনে বললাম, সুখের সাগরে ভেসে বেড়াচ্ছিস, ভেসে থাক। আমার সঙ্গে তোর কি রে? তবু তার জোরাজুরিতে গেলাম ফুচকা খেতে। শিহাব এল। ও কে দেখে মনে হচ্ছিল আমাদের আসলেই বয়স হচ্ছে, তার মাথায় ঝাঁকড়া চুল কমে গিয়ে টাকের আভাস, রুপালি ঝিলিক। এত সুন্দর একটা মানুষ ছিল সে, এখন কেমন বিষণ্ন, মুখে অকাল বলিরেখা। অবাক হলেও ওর কথা শুনে সেই আগের মতোই হাসলাম। বলল, পরের বার খবরদার খালি হাতে আসবি না, চুল স্থায়ীভাবে কালো করার ওষুধ আর ভুঁড়ি কমানোর টনিক আনবি। তারপর বলল, অনেক দিন তোকে কিছু কথা বলতে চাইছি, কোনো তাড়া নাইতো? বললাম, যা বলার চারটার মধ্যে শেষ করবি। সন্ধ্যার আগে বাসায় না ফিরলে মায়ের বকার ভয়ে গ্যারেজে গাড়িতে বসে রাত কাটাতে হবে।
শিহাব শিমুর কথা বলা শুরু করল। শিমু ওর বউ, ওদের ভালোবাসার সংসারের ২৫ বছরের সাথি। ও নাকি অনেক রাগারাগি করে ইদানীং। বলে বসলাম, যা ভাগ। একটু বয়স হলেই তোদের বউয়ের নামে যত কমপ্লেইন শুরু হয়ে যায়। শিহাবের চোখটা একটু আর্দ্র হলো। কোনো কিছুতে ভেঙে না পড়া বন্ধুর কথাগুলো একটু মন দিয়ে শোনার চেষ্টা করলাম এরপর।
শিহাব বলে চলল, আজীবন শিমু হয় খুব বেশি খুশি, দিনরাত জেগে কাজ করে বা খুব বিষণ্ন হয়ে যায়। (বুঝলাম বাইপোলার রোগ আছে হয়তো)। সাইকিয়াট্রিস্ট্রের ওষুধ খেলে ভালো থাকে, কিন্তু নিজে নিজে বন্ধ করে মাঝেমধ্যে। ওই সময়গুলো খারাপ কাটে শিহাব আর ওর ছেলের। ইদানীং কোনো কাজে বাইরে গেলে শিমু ওকে মিস করে, বাসায় এলে সব কিছুতে দোষ আর রাগারাগি। বললাম, বন্ধু, ও কি কিছু শোনে, যা আসলে কেউ বলছে না? শিহাব মাথা নিচু করে বসে থাকল কিছুক্ষণ। তারপর বলল, হুম, ও কিছু কথা শোনে, আসলে যা কেউ বলছে না। আমাকে মারে। তারপর লম্বা শার্টের হাত গুটিয়ে ব্যান্ডেজ সরাল। মনে হলো, হাঁটছেও খুঁড়িয়ে।
বললাম, আমি মেডিসিনের চিকিৎসক শিহাব। শিমুকে একজন ভালো সাইকিয়াট্রিস্ট দেখা। ওর স্কিজোফ্রেনিয়ার কিছু লক্ষণ আছে। ডায়াগনেসিস আর চিকিৎসা খুব তাড়াতাড়ি দরকার। শিহাব হেসে বলল, আর আমার আজীবনের ভালোবাসা, যা ওকে সুস্থ করে তুলবে, কী বলিস? বললাম, দোস্ত, অনেক হাই ফাংশানিং স্কিজোফ্রেনিক আর বাইপোলার রোগী আমরা পাই, যাঁরা হাসপাতালে অন্য রোগের চিকিৎসা নিতে আসেন।
কিন্তু ভালোবাসায় অন্ধ হয়ে তুই লুকিয়ে রাখিস না এসব। নিজে সুস্থ থাকিস, ওকে চিকিৎসা দিয়ে নিরাপদে থাকিস, বাবুকে মানুষ করিস। জানি, শিহাব সেটা পারবে। বিশিষ্ট সাইকিয়াট্রিস্ট বন্ধুর ফোন নম্বর দিয়ে ফিরে চললাম আব্বুর বাসার পথে। ঝকঝকে রোদের মধ্যেও বৃষ্টির আভাস দেখছি কেন আমি?
গল্পটা কাল্পনিক, কিন্তু সব পুরুষের ভালোবাসায় মোড়া পিতৃত্ব, ভ্রাতৃত্ব, স্বামী, বাবা, ছেলে মেলানো সৎ অর্জন নিয়েই তো এই দিবসের সেলিব্রেশন। শুভ হোক সব সৎ পুরুষের পথচলা, যাঁদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আমরাও খুব ভালো থাকি।