নিজ ভূমি থেকে অন্য কোনো স্থানে বসতি স্থাপনে বাধ্য হওয়া ব্যক্তিমাত্রই অভিবাসী। অভিবাসী মানেই তাই অনিশ্চয়তা। প্রতিনিয়ত লড়াই করে বাঁচা। এই অনিশ্চয়তা ও লড়াইয়ের মাত্রা যদি বেড়ে যায়, তাহলে সেই অভিবাসীর পক্ষে সুস্থ জীবন যাপন করা সম্ভব হয় না।
আমেরিকা বহু জাতির দেশ। আমেরিকা একসময় নিজেই আহ্বান করেছে অভিবাসীদের। আমেরিকার জাতি ধারণাটিও গড়ে উঠেছে বৈচিত্র্যপূর্ণ বিভিন্ন জাতির সম্মিলনের মধ্য দিয়ে। আমেরিকান বলতে তাই নানা ভাষার, নানা বর্ণের, নানা ঐতিহ্যের মানুষের এক মিলিত মুখই ভেসে ওঠে। অথচ এই আমেরিকাই এখন অভিবাসীদের ওপর চড়াও হচ্ছে নানাভাবে। কিছুদিন আগে ফেডারেল সরকার ৩৫ দিনের যে আংশিক অচলাবস্থা দেখল, তার মূলে রয়েছে অভিবাসন বিরোধিতা। শুধু নিয়মনীতির দেয়াল নয়, প্রশাসন চাইছে অভিবাসন বন্ধে সত্যিকারের দেয়াল। এই চাওয়াই আমেরিকার অভিবাসীদের অনিশ্চয়তার পরিমাপক।
আদালত চত্বর থেকে অবৈধ অভিবাসী আটক, অবৈধ অভিবাসনের দায়ে শিশু আটক, দীর্ঘদিন আমেরিকায় থাকার পরও হঠাৎ করে বহিষ্কারাদেশ ধরিয়ে দেওয়া ইত্যাদি খবর একের পর এক আসছে। এর সঙ্গে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হুংকার তো রয়েছেই। এই সবকিছু এমনিতেই অভিবাসীদের মধ্যে অনিশ্চয়তাবোধ বাড়িয়ে দিয়েছে। এর সঙ্গে সম্প্রতি যুক্ত হয়েছে ভুয়া নোটিশ দিয়ে আদালতে হাজির হওয়ার আদেশের মতো বিষয়। এই নোটিশ দিয়েছে আবার খোদ অভিবাসন বিভাগ।
গত ৩১ জানুয়ারি ছিল অভিবাসন বিভাগের ইস্যু করা আদালতের শুনানির তারিখ। নোটিশে উল্লেখ করা হয়, তারিখমতো আদালতে হাজির না হলে অভিবাসীরা এমনকি আমেরিকা থেকে বিতাড়িতও হতে পারেন। ফলে অনেকেই শত মাইল দূর থেকে ছুটে আসেন আদালতে। কিন্তু সেখানে এসে জানতে পারেন ওই নোটিশ ভুয়া ছিল।
আগে অবৈধ অভিবাসীদের হাজিরা নোটিশ (এনটিএ) দেওয়া হতো আদালতের মাধ্যমে। এতে দীর্ঘসূত্রতা থাকলেও একটা স্পষ্টতা ছিল। কিন্তু অভিবাসন মামলা দ্রুত মীমাংসার আদেশ আদালত থেকে আসার পর অভিবাসন (আইস) এজেন্টরা গণহারে এ নোটিশ দিতে শুরু করে। অবৈধ অভিবাসীদের কাছে এ নোটিশ জীবন-মরণ প্রশ্ন নিয়ে হাজির হয়। কারণ এই নোটিশে উল্লিখিত তারিখে আদালতে হাজির হয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে নিজের বৈধতার দাবির পক্ষে সব প্রমাণপত্র দেখাতে হয়, যার প্রেক্ষাপটে আদালতের দেওয়া রায়ের ওপরই নির্ভর করে তার ভবিষ্যৎ।
অভিবাসীর অনিশ্চিত জীবন আমেরিকার বর্তমান বাস্তবতায় আরও বেশি অনিশ্চিত হয়ে উঠেছে। এই প্রেক্ষাপটে অভিবাসীদের আইস কর্তৃক এই ভুয়া এনটিএ দেওয়াটা এক ভয়াবহ তামাশা ছাড়া আর কিছুই নয়। নিরাপত্তা বা এমন অন্য কোনো অজুহাতেই কোনো রাষ্ট্র কোনো মানুষের জীবন নিয়ে এ খেলা খেলতে পারে না। প্রশাসনের এই অগ্রহণযোগ্য আচরণ বন্ধে অভিবাসীদেরই সহমর্মী বিভিন্ন সংগঠন ও আইনজীবীদের নিয়ে চাপ সৃষ্টি করতে হবে। না হলে ভবিষ্যতে প্রশাসনের এ ধরনের হয়রানিমূলক আচরণ আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।