আজব পাগলামি
আপা আমাকে ফোন করে বললেন, ভালো একজন ডাক্তারের খোঁজ করতে। কারণ, দুলাভাই হঠাৎ পাগলামি শুরু করেছেন। আমি প্রায় এক ঘণ্টা গুগলে সার্চ করে একজন ভালো মানের মনোরোগ বিশেষজ্ঞকে খুঁজে বের করলাম।
দুলাভাইকে তার ১০ বছরের মেয়ের সঙ্গে ওয়েটিং রুমে বসিয়ে রেখে আমি আর আপা ডাক্তারের রুমে ঢুকলাম। উদ্দেশ্য ডাক্তারের কাছে দুলাভাইয়ের সমস্যাগুলো খুলে বলা।
ডাক্তার তার চশমার ফাঁক দিয়ে কিছুক্ষণ ভ্রু কুঁচকে আমাকে ও আপাকে পর্যবেক্ষণ করলেন। তারপর আপার দিকে তাকিয়ে বললেন, কী ব্যাপার, পাগলামি করছেন কেন?
আপা অবাক হয়ে বাঁ দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে আমার দিকে একবার তাকালেন। তারপর ডাক্তারের দিকে তাকিয়ে বললেন, বুঝলাম না, আপনি কি আমাকে রোগী, মানে পাগল ভাবছেন?
অবশ্যই। কারণ, চেহারার মধ্যে একটা পাগলী পাগলী ভাব আছে। হা হা হা!
আপা রাগে দাঁত কটমট করে আবার আমার দিকে তাকালেন। আমি আপার হাতে একটা চাপ দিয়ে তাকে শান্ত থাকার সিগন্যাল দিলাম। আপা রাগ দমন করে ডাক্তারকে বললেন, শুনুন, আপনি ভুল করছেন। রোগী আমি না, রোগী আমার স্বামী। সে বাইরে বসে আছে।
ও, তাহলে বড় পাগল বাইরে বসে আছেন? হা হা হা!
আপনি এসব কী বলছেন? শুনুন, আমার স্বামী পাগল না।
সব পাগলই এই কথা বলে। শোনেন, দুনিয়ার বেশির ভাগ মানুষই কমবেশি পাগল।
এ কথা বলেই ডাক্তার আমার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে কয়েক সেকেন্ড তাকালেন। তারপর আমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন, এই যেমন আপনি। সবাই হয়তো বলবে আপনি সুস্থ। অথচ আপনাকে দেখেই আমার কেন জানি মনে হচ্ছে, আপনার মাথায় সমস্যা আছে। আপনার চিকিৎসা দরকার। কি সত্য বলেছি না? হা হা হা!
আমি লাজুক ভঙ্গিতে একটু মুচকি হেসে ডাক্তারকে বললাম, জি, আপনি সত্য বলেছেন। আমারও ধারণা, আমার মাথায় সমস্যা আছে।
আমার কথা শুনে আপা ঘাড় ঘুরিয়ে আমার দিকে কটমট করে তাকালেন। বুঝলাম উনি রেগে গেছেন। আমি ভয়ে মাথা নিচু করে ফেললাম। আপা শান্ত গলায়, ভ্রু কুঁচকে ডাক্তারকে বললেন, আচ্ছা, আপনার নিজের সম্পর্কে আপনার ধারণা কী?
আমি? আরে আমি নিজেও তো পাগল। আমারও চিকিৎসা দরকার। হা হা হা!
আপা আমার কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিস করে বললেন, ওই হারামজাদা, তুই আমাকে এটা কোথায় আনলি? এই লোকের তো মাথায় সমস্যা আছে!
আমি আপার হাতে আবার একটা চাপ দিয়ে তাকে শান্ত হতে ইশারা করলাম। আপা শান্ত হয়ে ডাক্তারকে বললেন, শোনেন, আপনার উল্টাপাল্টা কথা শুনতে আমি এখানে আসিনি। আমি এসেছি আমার স্বামীর চিকিৎসা করাতে।
হা হা হা! তা তো অবশ্যই। আচ্ছা, বলুন উনার কী সমস্যা?
কয়েক দিন থেকে হঠাৎ করে আমার স্বামী অফিসে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। সে এখন মেয়েদের মতো ওড়না পরে। আর সারা দিন ঘরের মধ্যে কোমর দুলিয়ে দুলিয়ে হাঁটে। এ মুহূর্তে সে বাইরে আপনার ওয়েটিং রুমে ওড়না পরে বসে আছে।
ইন্টারেস্টিং, হা হা হা! আপনি কি উনার কাছে জানতে চেয়েছিলেন, উনি ওড়না কেন পরেন?
জি, চেয়েছিলাম। সে বলেছে, ওড়না ছাড়া কারও সামনে যেতে তার নাকি লজ্জা লাগে।
তাহলে তো ঠিকই আছে। লজ্জা লাগলে উনি ওড়না পরবেন, সেটাই তো স্বাভাবিক। ভাবছি আমিও এখন থেকে নিয়মিত ওড়না পরব। আমারও কেমন জানি মাঝেমধ্যে লজ্জা লাগে। হা হা হা!
আপা আবার আমার কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিস করে বললেন, এর নিজের মাথাই তো দেখি পুরা খারাপ। এ আবার কী চিকিৎসা করবে?
আমি আবারও আপার হাতে চাপ দিয়ে তাকে শান্ত থাকতে ইশারা করলাম। আপা শান্ত হলেন। এরপর ডাক্তার আপাকে প্রশ্ন করলেন, আচ্ছা, ওড়না পরা ছাড়া উনি আর কী কী করেন?
সারা দিন মেয়েলি কণ্ঠে গান গায় আর কোমর দুলিয়ে নাচে।
হা হা হা! তা প্রথম কখন আপনি তার মধ্যে এসব পরিবর্তন খেয়াল করলেন? একটু খুলে বলুন।
পাঁচ দিন আগে আমাদের মধ্যে প্রচুর ঝগড়া হয়। রাতে আমরা আলাদা বিছানায় ঘুমাই। সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি সে আমার জন্য সেমাই রান্না করে বসে আছে। আমি কিছুটা অবাক হলাম। কারণ, আমি জানি সে রান্না করতে জানে না। আমি দাঁত ব্রাশ করে খাবার টেবিলে গিয়ে দেখি সে আমার ওড়না পরে টেবিলের পাশে লাজুক ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে। আমি ভাবলাম আমার রাগ ভাঙাতে সে হয়তো একটু ফান করছে। তাই বিষয়টিকে আমি হালকাভাবেই নিলাম।
হা হা হা! তা সেমাই কেমন ছিল?
ভয়ংকর। সেমাইয়ের চেহারা দেখেই বুঝেছিলাম ফালতু জিনিস রান্না করেছে। তবু তাকে খুশি করতে আমি এক চামুচ মুখে দিয়েছিলাম। কিন্তু বেশিক্ষণ মুখে রাখতে পারিনি। বমি করে ফেলেছি।
এটা কিন্তু ঠিক নয়। স্বামীকে আপনার উৎসাহ দিতে হবে। তবেই না উনি ভবিষ্যতে আপনাকে আরও রান্না করে খাওয়াবেন।
কোনো দরকার নেই। তার ওই ফালতু রান্না আমার লাগবে না।
হা হা হা!
আপনি হাসছেন? আপনি জানেন সে কীভাবে রান্না করেছে? আমি তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, তুমি এটা কীভাবে রান্না করেছ? সে বলল, প্রথমে সে একটা পাতিলে সেমাই ভেজে ওর মধ্যে দুধ, চিনি, বাদাম, নারিকেল, কিশমিশ দিয়েছে। রান্নার মাঝামাঝি পর্যায় সে ওই সেমাইয়ের মধ্যে দুটো করল্লা আর দুটো বেগুন কুচি কুচি করে কেটে দিয়েছে। এরপর তার মধ্যে সয়া সস, হলুদ, মরিচ, আদাবাটা, পেঁয়াজবাটা দিয়েছে। শুধু তাই নয়, এরপর গরম তেলে রসুন ভেজে ওই তেলসহ রসুন সেমাইয়ের মধ্যে ঢেলে দিয়েছে।
অসাধারণ, আমার তো শুনেই জিভে জল এসে গেল।
আপা আবারও আমার কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিস করে বললেন, ইমু, তুই কি শিওর এই ব্যাটা ডাক্তার?
আমি আবারও আপার হাতে চাপ দিয়ে তাকে আশ্বস্ত করলাম। ডাক্তার ভরাট কণ্ঠে আপাকে বললেন,
আমি শিওর আপনার স্বামী ভবিষ্যতে রন্ধনশিল্পে একটা বিপ্লব ঘটিয়ে ফেলবেন। আচ্ছা, আপনি কি তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, এই রেসিপি উনি কোথায় পেয়েছেন?
জি, করেছিলাম। সে বলেছে, এটা সে স্বপ্নে পেয়েছে। স্বপ্নে নাকি আমাজন জঙ্গলের একজন আদিবাসী এসে তাকে এই রান্না শিখিয়েছে। ওই লোকের নামও সে জানে। তার নাম লুলুবা তুতুমি।
ওকে, আপনি কি লুলুবা তুতুমিকে দেখেছেন? মানে আপনার সঙ্গে কি তার পরিচয় হয়েছে?
আপনি মনে হয় শুনতে ভুল করেছেন। লুলুবা তুতুমি বাস্তবে না, আমার স্বামীর স্বপ্নে আসেন।
স্বপ্নে এলে আসুক, তাতে কী? পরিচিত হতে তো কোনো সমস্যা নেই, তাই না? হা হা হা!
আপা প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালেন। তারপর আবার আমার কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিস করে বললেন, এই হারামজাদা, দুনিয়ায় আর কোনো ভালো ডাক্তার নেই। তুই শেষ পর্যন্ত একটা বদ্ধ উন্মাদের কাছে আমাকে নিয়ে এলি?
আমি আবারও আপাকে শান্ত করতে আপার হাতে চাপ দিতে গেলাম। আপা আমার হাত ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলেন। তারপর গলার স্বর নিচু করে বললেন, খবরদার হারামজাদা! তুই বারবার আমার হাতে চাপ দিবি না। হাতে চাপ দিতে দিতে তুই আমার হাত ব্যথা করে ফেলেছিস। শোন, তোকে ডাক্তার খোঁজার দায়িত্ব দেওয়াটাই আমার ভুল হয়েছে।
আমি আপার ধমকে চুপসে গেলাম। আপা এবার দাঁত কিটমিট করে ডাক্তারকে বললেন, শোনেন, আপনি ফান করলেও আমি ফান করার মুডে নেই। কারণ, হারামজাদা লুলুবা তুতুমিকে নিয়ে আমি খুবই আতঙ্কে আছি? হারামজাদা প্রতিদিন রাতে এসে একটা করে নতুন রেসিপি শিখিয়ে যাচ্ছে। আর আমার স্বামী তা রান্না করে জোর করে আমাকে খাওয়াচ্ছে।
আপনি না খেলেই তো পারেন।
না, পারি না। কারণ, সে দা নিয়ে সামনে বসে থাকে। আমি একবার সাহস করে বলেছিলাম, আমি খাব না। এ কথা শোনার সঙ্গে সঙ্গে সে দা নিয়ে জংলিদের মতো নাচা শুরু করল। নাচতে নাচতে বলল, আমার নাচ শেষ হওয়ার আগেই সব খেয়ে শেষ করবি। না হলে তোর ঘাড়ে কোপ দেব।
ওকে চিন্তার কিছু নেই। সব ঠিক হয়ে যাবে। আপনারা বাইরে গিয়ে উনাকে আমার কাছে পাঠিয়ে দিন।
আমরা বাইরে গিয়ে দুলাভাইকে ভেতরে পাঠিয়ে দিলাম। আমি আপাকে বললাম, আপা শোনো, এই ডাক্তার খুবই ভালো ডাক্তার। আমি গুগলে সার্চ করে দেখেছি, উনি বড়ই বিদ্বান মানুষ। আমি শতভাগ শিওর দুলাভাই ভালো হয়ে যাবেন।
আপা আমার কথা শুনে কিছুই বললেন না। শুধু ঘাড় ঘুরিয়ে একটা রাগমিশ্রিত লুক দিলেন। আপার তাকানোর স্টাইল দেখে আমি আর কিছু বলার সাহস পেলাম না।
প্রায় দেড় ঘণ্টা পর শুনতে পেলাম ডাক্তারের রুম থেকে উচ্চ স্বরে গানের আওয়াজ ভেসে আসছে। আমি আর আপা দৌড়ে গিয়ে ডাক্তারের রুমে ঢুকলাম। ঢুকেই দেখলাম ডাক্তার ও দুলাভাই দুজনই কোমর দুলিয়ে দুলিয়ে নাচছেন। দুলাভাই পুরুষ কণ্ঠে আর ডাক্তার ওড়না পরে মেয়েলি কণ্ঠে গান গাইছেন।
‘বুক চিনচিন করছে হায়
মন তোমায় কাছে চায়
বুক চিনচিন করছে হায়
মন তোমায় কাছে চায়
আমরা দুজন দুজনারই প্রেমের দুনিয়ায়
তুমি ছুঁয়ে দিলে হায়
আমার কী যে হয়ে যায়
তুমি ছুঁয়ে দিলে হায়
আমার কী যে হয়ে যায়...’
আপা আমার দিকে তাকিয়ে দাঁত কটমট করে বললেন, হারামজাদা!
বুঝলাম না, তুমি আমাকে গালি দিচ্ছ কেন! আমি কী করলাম!
তোকে আমি বলছিলাম একটা ভালো ডাক্তারের খোঁজ করতে। আর তুই কী করলি? তুই এক পাগলকে আরেক পাগলের সাথে মিলিয়ে দিলি। এখন দেখ দুই পাগলে মিলে কী আকাম করছে?
আপা শোনো, আমার ধারণা এটা চিকিৎসারই একটা পদ্ধতি।
চুপ থাক হারামজাদা। তুই বেশি বুঝিস।
ইতিমধ্যে আমাদের দেখে দুজনেই নাচ–গান থামিয়ে দিয়েছেন। একটু পর ডাক্তার কোমর দোলাতে দোলাতে আপাকে বললেন, আমি আপনার স্বামীর প্রতিভায় মুগ্ধ। উনি একজন খুবই ভালো নৃত্যশিল্পী। আমি উনাকে পরামর্শ দিয়েছি একটা নাচের স্কুল খোলার জন্য। আমি নিজেই নাচ শিখতে উনার স্কুলে ভর্তি হব।
আপা ডাক্তারের কথা শুনে আবারও আমার দিকে তাকিয়ে দাঁত কিটমিট করে বললেন, হারামজাদা! তোর মতো ফালতু ভাই যেন এই দুনিয়ায় আর কারও না থাকে।
বলেই আপা রুম থেকে বের হয়ে গেলেন। আমি দুলাভাইকে প্রশ্ন করলাম, দুলাভাই বলেন তো আসলে সমস্যা কী? আপনি এগুলো কী শুরু করেছেন? আপা কিন্তু আপনাকে নিয়ে খুবই টেনশনে আছে।
ইমু শোনো, আমার কোনো সমস্যা নেই। আমি পুরোপুরি সুস্থ।
তাহলে আপনি এসব কেন করছেন?
তোমার আপাকে একটু টাইট দেওয়ার জন্য। শোনো, তোমার বোন বেশ কিছুদিন থেকে আমাকে জ্বালিয়ে মারছে।
সেটা কীভাবে?
শোনো, সে বেশ কিছুদিন থেকে ইউটিউব দেখে দেখে বাসায় নাইজেরিয়া, উগান্ডা আর কম্বোডিয়ার খাবার রান্না করছে। আর ওই সব খাবার জোর করে আমাকে খাওয়াচ্ছে।
তাতে সমস্যা কী? ওদের খাবার কি খারাপ?
ওদের খাবার খারাপ, সেটা বলছি না। কিন্তু আমরা বাঙালি। আমরা তো ওই সব খাবার খেয়ে অভ্যস্ত না। এক দিন দুই দিন ঠিক আছে, তাই বলে প্রতিদিন? সারা দিন অফিস শেষে বাসায় আসি দুটো ভাত খাওয়ার জন্য। অথচ সে আমাকে ভাত দেয় না।
আপনি আপাকে মানা করেননি?
করেছি। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। কারণ, ওগুলো সে রান্না করে ফেসবুকে, ইউটিউবে পোস্ট দেওয়ার জন্য। এখন যদি ওই সব রান্না বন্ধ করে দেয়, তাহলে তো আর পোস্ট দিতে পারবে না।
বুঝলাম। তাহলে আপাকে বলেন পোস্ট দিয়ে খাবারগুলো ফেলে দিতে।
তা–ও বলেছিলাম। সে আমাকে বলল, খাবার নষ্ট করা পাপ। এত বড় পাপ সে কিছুতেই করতে পারবে না। তাই সব খাবার আমাকেই খেয়ে শেষ করতে হবে। যখন দেখলাম বাঁচার আর কোনো পথ নেই, তখন বাধ্য হয়ে পাগলের অভিনয় শুরু করলাম। এখন আর সে আমাকে উল্টাপাল্টা রান্না করে খাওয়াতে পারে না। বরং আমিই তাকে উল্টাপাল্টা জিনিস রান্না করে খাওয়াই।
রান্নার ব্যাপারটা তো বুঝলাম। তা ওড়না পরে মেয়ে সেজে এসব নাচ-গান করার কারণ কী?
শোনো, শুধু রান্না করে খাওয়ালে একসময় সে বুঝে ফেলবে আমি তাকে টাইট দেওয়ার জন্য এসব করছি। তাই বিষয়টিকে জটিল করার জন্য এর সঙ্গে নাচ-গানও শুরু করেছি। যাতে সে বিশ্বাস করে আমার মাথায় আসলে সমস্যা দেখা দিয়েছে।
দুলাভাই, আপনার প্রতিভায় আমি মুগ্ধ। আচ্ছা, ডাক্তার আপনার সঙ্গে নাচছেন কেন, তা তো বুঝলাম না।
আমার টেকনিক উনার খুব পছন্দ হয়েছে। উনি ঠিক করেছেন, নিজ বাসায় আমার এই টেকনিক প্রয়োগ করবেন। তাই আমার কাছে নাচ শিখছেন।
ডাক্তার কোমর দোলাতে দোলাতে বললেন, জি, ওড়না পরে নেচে খুবই মজা পাচ্ছি। বুক চিনচিন করছে হায়, মন তোমায় কাছে চায়। খুবই মজার গান।
গানের তালে তালে ডাক্তার তার বডি ঝাঁকাতে লাগলেন। দুলাভাই আমাকে বললেন, এসো, তুমিও একটু নাচো। তোমার আপার মাথাটা আরও একটু আউলে দিই।
বলেই দুলাভাই ডাক্তারের কাছ থেকে ওড়নাটা নিয়ে আমাকে দিলেন। আমি সুন্দর করে ওড়নাটি মাথাসহ শরীরে পেঁচিয়ে নিলাম। ডাক্তার আর দুলাভাই চেয়ারে বসে হাততালি দিতে থাকলেন, আর আমি কোমর দুলিয়ে নাচ শুরু করলাম।
‘বুক চিন চিন করছে হায়
মন তোমায় কাছে চায়...’
নাচতে নাচতে হঠাৎ করে খেয়াল করলাম, আপা দরজা খুলে হা করে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। চোখাচোখি হতেই আমি নাচ-গান থামিয়ে দিলাম। আপা সরাসরি আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বললেন, হারামজাদা, তুই হলি দুনিয়ার সবচেয়ে বড় পাগল। প্রতিবার তওবা করি আমার বাসায় কোনো সমস্যা হলে আমি তোকে ডাকব না। তারপরও কেন জানি আমি বারবার তোকেই খবর দিই।
বলেই আপা রাগে কাঁপতে কাঁপতে রুম থেকে আবার বের হয়ে গেলেন।
বি. দ্রষ্টব্য:
ফেসবুকে, ইউটিউবে পোস্ট দিয়ে লাইক পাওয়ার জন্য আমরা অনেকেই অনেক কিছুই করি। কিন্তু এটা যে অন্যের কষ্টের কারণ হতে পারে, সেটা মাঝেমধ্যে আমরা ভাবি না।
বি. দ্রষ্টব্যের বি. দ্রষ্টব্য:
হালকা ফান করতেই লেখাটি লেখা। এখানে শিক্ষণীয় কিছু খোঁজার চেষ্টা না করাই ভালো।
*লেখক: ইমদাদ বাবু, নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র