আজকের ইউক্রেন এবং আমাদের ভবিষ্যৎ

রক্তাক্ত যুদ্ধ শুরু হয়েছে ইউক্রেনে
ছবি: রয়টার্স

রাশিয়া পুরোপুরিভাবে ইউক্রেন আক্রমণ করেছে। চেরনোবিল, ১৯৮৬ সালে ঘটে যাওয়া ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়ংকর পারমাণবিক প্ল্যান্ট দুর্ঘটনার সাক্ষী জায়গা দখল করে নিয়েছে তারা। ১৪ হাজার মানুষ বসবাসকারী এ ভৌতিক শহরে এখন হয়তো আছে এক  হাজার মানুষ, যাদের বন্দী করে রাখা হয়েছে। তেজস্ক্রিয়ের মাত্রা বেড়ে চলেছে এখন, গত কয়েক বছরে যেটা অনেক কম ছিল।

রাজধানী কিয়েভ দখল করার জন্য আকাশপথ ও মাটিতে আক্রমণ চলছে চারদিক থেকে। প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ১৮ বছর বয়সের ঊর্ধ্বে সব পুরুষের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন। দেশের স্বাধীনতার জন্য লড়তে হবে তাঁদের। পুরো পৃথিবীর সক্ষম ইউক্রেনের বাসিন্দাদের ডেকে পাঠিয়েছেন যুদ্ধ করার জন্য, নিজের সার্বভৌমত্ব বজায় রাখার জন্য।

ইউক্রেনিয়ানদের দেশপ্রেম আমাকে মুগ্ধ করেছে। সেদিন দেখছিলাম একজন ইউক্রেনিয়ান নাগরিক ট্যাংকের সামনে দাঁড়িয়ে গতি রোধ করতে চাইছেন, একজন অল্প বয়সী মেয়েকে দেশ ত্যাগ করতে বলায় সে বলেছে, দেশ রুশরা ত্যাগ করবে। তার দেশ সে ত্যাগ করবে না। শতভাগ শিক্ষিত দেশের নাগরিক এমন সাহসী তো হবেই। তাদের প্রসিডেন্ট তো নিরাপত্তাসহ দেশত্যাগের কথা হেসে উড়িয়ে দিয়েছেন।

ইউরোপের দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ রক্ষার ভার তো তিনি যোগ্যতার সঙ্গে তুলে নিয়েছেন এবং বহন করছেন। মাটির নিচের রেলস্টেশন দেশের নাগরিকদের নিরাপত্তার জন্য তাঁরা ব্যবহার করছেন। শিশু এবং নারী বা বয়স্ক নাগরিকেরা পাড়ি জমিয়েছেন পাশের দেশগুলোতে।

ন্যাটোর সদস্য হতে চায় ইউক্রেন। পূর্বের সোভিয়েত ইউনিয়নের পন্থার সঙ্গে যা বিপরীতমুখী। পুতিনের চালে মারাত্মক ভুল হয়েছে এবার। প্রথম থেকেই যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপসহ প্রায় পুরো পৃথিবী এর বিরোধিতা করেছে। ব্যাংকিং লেনদেন বন্ধসহ অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। মার্কিন ও ব্রিটিশ পূর্বাপর যোদ্ধা পোল্যান্ডের সীমান্ত হয়ে ইউক্রেনের যুদ্ধে যোগ দেবেন শিগগিরই, প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির ডাকে সাড়া দিয়ে। অর্থনৈতিক সহায়তা, অস্ত্র সাহায্য তো আছে। এদিকে আলোচনায় জন্য রুশ–ইউক্রেন বেলারুশ সীমান্তে।

রুশ সৈন্যদের সঙ্গে কিয়েভে যুদ্ধ চলছে ইউক্রেন সৈন্যদের
ছবি: রয়টার্স

পারমাণবিক বোমা ব্যবহার করার ভয়াবহতা আমরা হিরোশিমা–নাগাসাকিতে দেখেছি, চেরনোবিলেও দেখেছি। রাশিয়া পারমাণবিক ক্ষমতাধারী একটি দেশ। খোদ রাশিয়ানরাই ইউক্রেনের বিরুদ্ধে অন্যায় আচরণের প্রতিবাদ করছেন। তাই পশ্চিমা দেশগুলো অর্থনৈতিকভাবে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যে অবস্থান নিয়েছে, তা যথেষ্ট যৌক্তিক। ইউক্রেনকে অর্থনৈতিক সাহায্য এবং অস্ত্র দিয়ে তারা যে সাহায্য করছে, সেসবও যথেষ্ট যৌক্তিক। এ যুদ্ধ বুদ্ধি দিয়ে জিততে হবে।

কার্পাথিয়ান পাহাড়, কৃষ্ণসাগর, রাজপ্রাসাদ, গির্জাসহ অসংখ্য অপরূপ জায়গাসমৃদ্ধ এ দেশ তার সার্বভৌমত্ব বজায় রাখুক। করোনাকালে বিশ্ব যে ক্ষতিতে পড়েছে, দ্রুত এ অন্যায় যুদ্ধ শেষ হওয়ার ওপর আমাদের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে। শুভকামনা ইউক্রেন।

*দূর পরবাসে [email protected] এ লেখা পাঠাতে পারবেন।