আজ আমার কন্যারও জন্মদিন, প্রথম আলো

মেয়ের সঙ্গে লেখক

৪ নভেম্বর। প্রথম আলোর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। প্রথম আলো একটি নাম, একটি ব্র্যান্ড। যার পরিধি বিশ্বময় বিস্তৃত। আমাদের, বাঙালিদের, বাংলাদেশিদের গর্ব করার মতো একটি প্রিন্ট মিডিয়া। বিশ্বব্যাপী বাঙালিদের প্রাণের স্পন্দন। জানি না পৃথিবীর কোনো প্রান্তে এমন কোনো বাঙালি আছেন কি না, যিনি প্রথম আলোয় চোখ না বুলিয়ে দিনের কাজ শুরু করেন। আমি অন্তত তা করি না। প্রথমেই প্রথম আলোতে চোখ বোলানো আমার চাই–ই চাই। তা না করলে কিছুতেই সকাল যেন আমার সকাল হয়ে ওঠে না।

২০০৮ সাল। প্রথম আলো ‘বদলে যাও, বদলে দাও’ স্লোগানটি গ্রহণ করে সম্ভবত ওই সালেই কক্সবাজারে এক বিশাল অনুষ্ঠানের আয়োজন করে, যার ব্যাপক প্রচার হয়। আমি তখন পশ্চিম আফ্রিকার দেশ ঘানায় কাজ করি। পত্রিকায় ওই অনুষ্ঠানের বিস্তারিত দেখে এতটাই আপ্লুত হয়েছিলাম যে নিজেকেও বদলাতে উদ্বুদ্ধ হয়েছিলাম। খুব মনে পড়ে, সেদিন আমার একটি বাজে অভ্যাস ছাড়ার ঘোষণা এবং নামাজে নিয়মিত হতে পণ করেছিলাম। যা পালন বা বাস্তবায়ন করে সত্যিই কামিয়াব হয়েছি। এজন্য প্রথম আলো সত্যিই ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য।

শুধু তা–ই নয়, আমি মাঝে মাঝে কবিতা লিখি, যা অনেকবারই প্রথম আলোতে প্রকাশিত হয়েছে। গান গাওয়ার চেষ্টা করি, যদিও আমি গানের মানুষ নই। কিন্তু ওই যে বদলে যাওয়ার পোকা মাথায় ঢুকেছে, তা তো আর দমন করা সহজ নয়।

আমি মানুষের কষ্টের কথা শুনে ব্যথিত হই। কিছু একটা চেষ্টা করি। কখনো সফল হই, কখনো হই না। মানুষকে ভালো কাজে উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করি। আত্মীয়-পরিজনের সঙ্গে সৎ ভাব রাখার চেষ্টা করি। কারণ, কোনোকিছু বদলাতে হলে আগে নিজেকেই বদলাতে হয়, এটা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি এবং এ বিশ্বাস ধারণ করতে অনেকটাই সাহস জুগিয়েছে প্রথম আলো।

পরিবারের সঙ্গে লেখক

শুভ জন্মদিন, প্রথম আলো। তোমার জন্ম বাংলাদেশের সংবাদপত্রের ইতিহাসে, সংবাদপত্রের ধারণায় পূর্নতা এনে দিয়েছে। তোমার জন্ম সংবাদপত্রের ধারণাকে সমৃদ্ধ করেছে এবং তাই তো বিশ্বব্যাপী এর বিস্তৃতি। ৩ নভেম্বরের পত্রিকায় প্রকাশিত নেদারল্যান্ডসভিত্তিক ‘ফ্রি পেস আনলিমিটেড’ কর্তৃক সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে ‘ফ্রি প্রেস অ্যাওয়ার্ড ২০২১’ প্রদান করা তো এরই সার্থকতা, যেখানে তাঁকে ‘মোস্ট রেজিলিয়েন্ট সাংবাদিক’ অভিধায় ভূষিত করা হলো।

৪ নভেম্বর জন্ম নিয়ে বাংলাদেশের সংবাদপত্রের ইতিহাসকে যেমন প্রথম আলো পূর্ণতা দিয়েছে, ঠিক তেমনি আমার কন্যা নিধি ওই তারিখেই জন্ম নিয়ে আমাকে পিতৃত্বের পূর্ণতা দিয়েছে। নাফিসা রহমান চৌধুরী নিধি আমার দ্বিতীয় সন্তান। তার বড় ভাই আছে। আমি এক পুত্রসন্তান ও এক কন্যাসন্তানের গর্বিত বাবা। নিধির জন্ম না হলে হয়তো আমার পিতৃত্বই পূর্ণতা পেত না।

প্রথম আলোর মতো স্বীকৃত পত্রিকার জন্মদিনে আমার কন্যারও জন্মদিন তার জীবনকে বিশেষায়িত করুক। প্রথম আলোর মতোই তার জীবনও হোক আলোকিত—এই প্রার্থনা করি।
শুভেচ্ছা প্রথম আলো, শুভেচ্ছা নিধি।
*লেখক: জামিলুর রহমান চৌধুরী, কিগালি, রুয়ান্ডা