অস্ত্রের সহজপ্রাপ্তির নির্মম বলি

যুক্তরাষ্ট্রে টেক্সাসের অ্যালেন শহরে ৪ এপ্রিল বাংলাদেশি একটি পরিবারের ছয় সদস্যের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। মা, বাবা, বোন ও নানিকে হত্যার পর ওই পরিবারের দুই সন্তান আত্মহত্যা করেছেন বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে পুলিশ। এ নিয়ে তদন্ত চলছে। তবে ঘটনাটি ভাবিয়ে তুলছে বাংলাদেশি মার্কিনদের। কোন পর্যায়ের মনোবিকার হলে স্বপ্নের দেশে জীবন শুরুর আগেই এমন আত্মঘাতী হয়ে উঠতে পারে নতুন বাংলাদেশি প্রজন্ম।

পুলিশ জানিয়েছে, চারজনকে হত্যার পর দুই ভাই নিজেরা আত্মহত্যা করেছেন বলে মনে হচ্ছে। মানসিক বিষণ্নতা থেকে মুক্তি পেতে তাঁরা এই কাজ করেছেন বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা পাওয়া গেছে। ঘটনার আগে ফারহান তৌহিদ নামের এক ভাই ইনস্টাগ্রামে একটি দীর্ঘ ‘সুইসাইড নোট’ পোস্ট করেছেন। এতে তিনি লিখেছেন, ‘আমি নিজেকে ও আমার পরিবারকে হত্যা করেছি।’ তিনি নবম শ্রেণি থেকে কীভাবে মানসিক হতাশার বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন-তাও লিখেছেন ফারহান। তাঁর বড় ভাইও হতাশায় ভুগছিলেন।

জীবন পরিবর্তনের উদ্দেশ্যে উন্নত দেশ যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে কেন এই হতাশা! আর কেনই বা দুই সন্তানের হতাশার এই কথা আগে থেকে জানতে পারলেন না বাবা-মা! দুই ভাই-ই পড়ালেখায় বেশ ভালো ছিলেন। তাঁদের সাফল্য নিয়ে কমিউনিটিতে গর্ব করতেন মা-বাবা। এমন একটা পরিবারের সন্তান কেবল হতাশায় ভুগে পরিবার ও নিজেদের শেষ করে দিল! সমস্যা যতই থাকুক, এ ক্ষেত্রে প্যারেন্টিংয়ের প্রসঙ্গ উঠে আসতে পারে। কারণ, ওই দুই ভাইয়ের মানসিক অবস্থার খবর মা-বাবা আগে থেকে কিছুই জানেননি। আর যদি জেনেও থাকেন, তাহলে পাত্তা দেননি। সন্তানদের মনের কথা শুনতে চাননি। সন্তানের ভবিষ্যতের কথা ভেবেই হয়তো কেবল সুখের পেছনে ছুটেছেন। এ কারণে সন্তানদের পর্যাপ্ত সময় দেওয়া হয়নি। এ থেকে সন্তান হতাশাগ্রস্ত হতে পারে। যদিও এর পেছনে আরও নানা কারণ থাকতে পারে।

ফারহান তৌহিদ সুইসাইড নোটে লিখেছেন, মানসিক বিষণ্নতা থেকে মুক্তি পেতে তাঁরা এই কাজ করেছেন। কীভাবে তিনি নবম শ্রেণি থেকে মানসিক হতাশার বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন-তাও লিখেছেন ফারহান। তাঁর বড় ভাইও হতাশায় ভুগছিলেন। তার মানে, অনেক দিন থেকেই তাঁরা হতাশায় ভুগছিলেন। বাবা-মা ও পরিবার যদি সন্তানদের পর্যাপ্ত সময় দিতেন, তাঁদের মনের কথা শুনতেন, তাহলে এই হতাশার কথাও জানতেন। তা জেনে সঠিক পদক্ষেপ নিলে সন্তানদের সুস্থ করে তোলা সম্ভব ছিল বলে মনে করা যায়।

তবে এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের বন্দুক আইন ও অস্ত্রের অবাধ প্রাপ্তিতে সমাজের ক্ষতিকর দিকগুলো স্পষ্টভাবে লক্ষণীয় হয়েছে। অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইন নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাহী আদেশ জারি করছেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।

এসব রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ডের বাইরে সন্তানদের মানসিকতা গঠনে পারিবারিক ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে যারা স্বজনদের ছেড়ে বিদেশ বিভুঁইয়ে থাকে, তাঁদের প্রায় সবাই তো জীবন ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের উন্নতির জন্যই থাকে। সেই উন্নতি করতে গিয়ে আজীবনের জন্য হারিয়ে ফেলছি পরিবারের সদস্যকেই। এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। যে সন্তানের জন্য এত পরিশ্রম, সেই সন্তানদের পর্যাপ্ত সময় দিতে হবে, তাঁদের মনের কথা শুনতে হবে। জানতে হবে তাঁদের পুরো নিজস্ব জগৎ। তাঁদের মতো করে বুঝে, বোঝাতে হবে প্রকৃত বাস্তবতা। তাহলে হয়তো পারিবারিক মূল্যবোধ নিয়ে বেড়ে উঠবে পরবর্তী প্রজন্ম।