অস্ট্রেলিয়ায় বোরকা নিষিদ্ধের দাবির সমালোচনা

বোরকা পরিহিত পোলিন হ্যানসন। ছবি: আই টিভি নিউজ
বোরকা পরিহিত পোলিন হ্যানসন। ছবি: আই টিভি নিউজ

সম্প্রতি সিডনির বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন আইএসের (ইসলামিক স্টেট) সঙ্গে সম্পৃক্ত কিছু ব্যক্তিকে আটক করে অস্ট্রেলিয়ান ফেডারেল পুলিশ। এই প্রেক্ষাপটে নিরাপত্তার স্বার্থেই অস্ট্রেলিয়ায় বোরকা নিষিদ্ধ করার দাবি তোলেন অস্ট্রেলিয়ার মুসলিম ও অভিবাসন বিরোধী রাজনীতিবিদ এবং উগ্র ডানপন্থী দল ওয়ান নেশন পার্টির নেতা পলিন হ্যানসন। প্রতিবাদ হিসেবে গত বৃহস্পতিবার (১৭ আগস্ট) সিনেটে বোরকা পরে হাজির হয়েছিলেন তিনি। মুসলিমদের বিদ্রূপ করে তাঁর এই কর্মকাণ্ডের জন্য সিনেটসহ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তীব্র সমালোচনের মুখে পড়েছেন তিনি।

হ্যানসন তাঁর এমন কর্মকাণ্ডের কারণ হিসেবে জানান, বোরকা পরে তিনি প্রমাণ করতে চেয়েছিলেন যে, এই পোশাক নিরাপত্তার জন্য কতটা ঝুঁকি তৈরি করে। তাঁর মতে, এই পোশাক জঙ্গিবাদ বিস্তারে ভূমিকা রাখে। এ ছাড়া সিনেটে বোরকা নিষিদ্ধের প্রস্তাবে তিনি বলেন, জঙ্গিবাদ এখন আমাদের দেশের জন্য অনেক বড় হুমকি। অনেক নাগরিকই বিষয়টি নিয়ে ভীতসন্ত্রস্ত। দেশের এমন পরিস্থিতিতে জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থেই কি বোরকা নিষিদ্ধ করা উচিত নয়? তিনি জনসমক্ষে বোরকা পরে পুরো মুখ ঢেকে রাখার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা দেওয়াটা আধুনিক অস্ট্রেলিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হওয়া উচিত বলেও দাবি জানান।
তবে হ্যানসনের এমন কর্মকাণ্ডে দেশটিতে সৃষ্টি হয়েছে ব্যাপক তর্ক-বিতর্কের। দেশটির সর্বোচ্চ আইনজীবী অ্যাটর্নি জেনারেল জর্জ ব্র্যান্ডিস জানান, তার রক্ষণশীল সরকার কোনো ধর্ম বা সম্প্রদায়কে অসম্মান জানিয়ে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করবে না। বোরকা পরে হ্যানসনের মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতির প্রতি এমন বিদ্রূপাত্মক আচরণ মুসলিমদের জন্য অপ্রীতিকর বলেও মন্তব্য করেন তিনি। ব্র্যান্ডিস বলেন, একটা জনগোষ্ঠীকে বিদ্রূপ করা, তাদের এক ঘরে করে রাখা এবং তাদের পোশাক নিয়ে উপহাস করা খুবই মর্মান্তিক। এ ছাড়া তিনি সিনেটর হ্যানসনের এ ধরনের কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানিয়ে এবং সেই সঙ্গে তাঁকে সতর্ক করে বলেন, এ ধরনের কাজে হ্যানসনের বিরুদ্ধে কোনো ধর্মীয় সম্প্রদায়কে অবমাননা করার অভিযোগ উঠতে পারে। আর এমনটি হলে তাঁর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও হ্যানসনকে হুঁশিয়ারি জানান ব্র্যান্ডিস।

বোরকা পরে সিনেটে পোলিন হ্যানসন। ছবি: ইএফই
বোরকা পরে সিনেটে পোলিন হ্যানসন। ছবি: ইএফই

এদিকে হ্যনসনের এই কাজকে বিরক্তিকর বলে মন্তব্য করেন স্বতন্ত্র সিনেটর ড্যারিন হিঞ্চ। স্কাই নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, পলিন হ্যানসন অস্ট্রেলিয়ার একটি জনগোষ্ঠীর ধর্মকেই শুধু উপহাস করেননি, তিনি সিনেটের মতো একটি সম্মানিত প্রতিষ্ঠানেরও উপহাস করেছেন। এ ছাড়া লেবার দলের সিনেটর স্যাম ড্যাস্টিয়ারি মনে করেন, সস্তা জনপ্রিয়তা পেতেই হ্যানসন এ কাজ করেছেন।
উল্লেখ্য, প্রায় এক যুগ অস্ট্রেলিয়ার রাজনীতি থেকে বিরত থেকে ২০১৪ সালে আবার রাজনীতিতে ফেরেন পলিন হ্যানসন। এর ঠিক দুই বছর পর দেশটির অতি ডানপন্থী দল ওয়ান নেশন পার্টির প্রধান হয়ে সিনেটর নির্বাচিত হন হ্যানসন। সিনেটে যোগ দিয়ে প্রথম ভাষণেই তিনি বলেছিলেন, ইসলাম এমন একটি সংস্কৃতি ও ধারণা, যা আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতির সঙ্গে একেবারেই যায় না। এর আগে ১৯৯০ সালের দিকে 'অস্ট্রেলিয়ায় এশীয় অভিবাসীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে যা অস্ট্রেলিয়া বাসস্থান হিসেবে হুমকির মুখে পড়ছে—এমন মন্তব্য করে প্রথম সমালোচনায় আসেন তিনি।