অস্ট্রেলিয়ার সেরা শিক্ষানবিশ সাংবাদিক বাংলাদেশের নিবিড় খান

নিবিড় মোস্তফা খান
ছবি: সংগৃহীত

অস্ট্রেলিয়ার সেরা তরুণ সাংবাদিকদের একজন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত নিবিড় মোস্তফা খান। তিনি ২০২০ সালে অস্ট্রেলিয়ার ‘ওয়াকলি মিড ইয়ার সেলিব্রেশন’–এর চূড়ান্ত প্রতিযোগী ছিলেন। অস্ট্রেলিয়ার সর্ববৃহৎ সাংস্কৃতিক জোট মিডিয়া এন্টারটেইনমেন্ট অ্যান্ড আর্টস অ্যালায়েন্স (এমইএএ) কর্তৃক কুইন্সল্যান্ড রাজ্যের সাংবাদিকতা বিষয়ের শেষ বর্ষের সেরা ছাত্র নির্বাচিত হন। এর পরপরই অস্ট্রেলিয়ার মূল স্রোতের বৃহৎ সংবাদমাধ্যমে সাংবাদিকতায় চাকরির প্রস্তাব পান বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল করা এ সাংবাদিক। এখন তিনি অস্ট্রেলিয়ান ব্রডকাস্টিং করপোরেশনের এবিসি নিউজে কাজ করছেন তরুণ সাংবাদিক হিসেবে। তাঁর বহু প্রতিবেদন দৃষ্টি কাড়ছে অস্ট্রেলিয়ার মানুষের। তরুণ বয়সেই অনন্য এক সাংবাদিক হয়ে ওঠার যাত্রা নিয়ে নিবিড় খানের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের।

মা–বাবার সঙ্গে নিবিড় মোস্তফা খান
ছবি: সংগৃহীত

অস্ট্রেলিয়ায় সাংবাদিক হিসেবে আত্মপ্রকাশের শুরুর দিকটা প্রায় নতুনই নিবিড় খানের জন্য। এখনো তাজা এ সময়ের স্মৃতিচারণা করে বলেন, ‘আমার প্রথম লেখা বাংলাদেশে উচ্চমাধ্যমিকে পড়ার সময় প্রকাশ হয়েছিল। এরপর অস্ট্রেলিয়ায় যখন ব্যাচেলর ডিগ্রি শেষ করছিলাম, তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের “দ্য এবিসি পিচ” নামের একটি প্রতিযোগিতায় যোগ দিই। সেখানে বিভিন্ন নতুন ধারণা উপস্থাপন করতে হয়। আমি বাংলাদেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে একটি প্রতিবেদন করেছিলাম। আর আমার ওই গল্প খুবই পছন্দ করেছিলেন বিচারকেরা। তারপর সে বিষয়ে প্রতিবেদন লিখতে বলা হয়। প্রতিবেদনটি সম্পূর্ণ করার জন্য এবিসি নিউজ তাদের ব্রিসবেন অফিসে ইন্টার্নশিপ করতে দেয় আমাকে।’

দ্য এবিসি পিচ প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ সম্পর্কে কোন ধারণা উপস্থাপন করেছিলেন—এ প্রশ্নের জবাবে নিবিড় বলেন, ‘আমার এক অস্ট্রেলিয়ার বন্ধুকে নিয়ে বাংলাদেশে ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলাম। সে বন্ধু প্রথমে রাজি থাকলেও পরে আমাকে জানায়, বাংলাদেশ ভ্রমণের জন্য নিরাপদ নয়, তাই সে যাবে না। মাতৃভূমি সম্পর্কে বন্ধুর এমন ধারণা খুব কষ্ট দিয়েছিল আমাকে। কারণ জানতে অস্ট্রেলিয়ার দেশভিত্তিক নিরাপত্তাসূচক ওয়েবসাইট স্মার্ট ট্রাভেলারে গিয়ে দেখি বাংলাদেশকে পাকিস্তান ও উত্তর কোরিয়ার অনিরাপত্তার সঙ্গে কোড অরেঞ্জ করে রাখা হয়েছে। জানতে পারলাম, বাংলাদেশে দুঃখজনক হোলি আর্টিজান হামলার কারণে কোড রেড জারি করা হয়েছে। তবে আমি মনেপ্রাণে জানতাম বাংলাদেশ আসলে কতটা নিরাপদ। এ ধারণাই আমি বিস্তারিত উপস্থাপন করি।’

সব সময় সংবাদ খোঁজার নতুন নতুন ধারণা নিয়ে কাজ করতে শুরু করেছিলেন নিবিড়। তেমন একটি অভিজ্ঞতার কথাও জানিয়েছেন তিনি। বলেন, ‘বাংলাদেশ নিয়ে প্রতিবেদন লেখার জন্য আমি তখন দিনরাত এবিসি নিউজের নিউজরুমেই ছোটাছুটি করছিলাম। এর মধ্যে হঠাৎ ঘটে যায় নিউজিল্যান্ডে কালোদিন ‘ক্রাইস্টচার্চ মসজিদে হামলা’। সে সময় নিউজিল্যান্ডে অবস্থানরত বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সঙ্গে ছিলেন ক্রিকেট খেলার খবরভিত্তিক ওয়েবসাইটের একজন প্রতিনিধি মোহাম্মদ ইসাম। তাঁর সঙ্গে একটি ছোট সম্পর্ক ছিল আমার। তৎক্ষণাৎ তাঁর একটি সাক্ষাৎকার গ্রহণের ব্যবস্থা করি। সে সাক্ষাৎকার ব্যাপক সাড়া ফেলে অস্ট্রেলিয়ার গণমাধ্যমে। এরপর বাংলাদেশে গিয়ে রোহিঙ্গা হিসেবে আশ্রিত মানুষের গল্পও লিখি অস্ট্রেলিয়ার সংবাদমাধ্যমে।’

১৯৯৬ সালে বাংলাদেশের ঢাকায় জন্ম নিবিড় মোস্তফা খানের। বাবা আবু মোস্তফা কামাল উদ্দিন এবং মা নাসেরা খাতুনের একমাত্র সন্তান তিনি। পরবর্তীকালে মা–বাবার সঙ্গে তিন বছর বয়স পর্যন্ত বাস অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে। এরপর চলে যান বাংলাদেশে। বেড়ে ওঠেন ঢাকায়। ঢাকার স্কলাস্টিকা থেকে ‘ও’ লেভেল এবং ‘এ’ লেভেল পড়েন। আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী হিসেবে প্রথমে ব্যাচেলর অব কমিউনিকেশন পড়তে আসেন কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে। পরে বিষয় পরিবর্তন করে সাংবাদিকতা বিষয়ে স্নাতক পাস করেছেন কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। তিনি বলেন, ‘সাংবাদিকতার মাধ্যমে আমি বহু মানুষের সঙ্গে পরিচিত হচ্ছি। এটা সাংবাদিকতার একটা বড় উপভোগের অংশ, তাই চাকরি করছি বলে মনেই হয় না কোনো দিন।’ বিখ্যাত একটা উক্তির কথা নতুনদের মনে করিয়ে দিয়ে বলেন, ‘এমন পেশা বেছে নিন, যা আপনি করতে ভালোবাসেন, তাহলে জীবনে কোনো দিন আর “কাজ” করতে হবে না আপনাকে।’