অস্ট্রেলিয়ার ভিসায় আসছে পরিবর্তন
নতুন বছরের শুরুতে অস্ট্রেলিয়ার অভিবাসন আইনে আসতে চলেছে বেশ কয়েকটি পরিবর্তন। করোনাভাইরাসের প্রভাবে গত ২০২১ সালের অভিবাসনে আসা বিভিন্ন পরিবর্তন ছিল উত্থান-পতনের। বিধিনিষেধ আর সীমান্ত বন্ধের কারণে গত দুই বছর কেটেছে ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞার মধ্য দিয়েই। তবে নতুন বছর একটি পরিকল্পিত অভিবাসন প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন করতে চায় দেশটির সরকার।
অস্ট্রেলিয়ার সীমান্ত বন্ধের পর সবচেয়ে বড় ধাক্কা লেগেছে আন্তর্জাতিক শিক্ষা অঙ্গনে। সরকারি তথ্য বলছে, সাম্প্রতিক সময়ে সীমান্ত খোলার পর প্রায় ৪৩ হাজার শিক্ষার্থী অস্ট্রেলিয়ায় প্রবেশ করলেও প্রবেশের অপেক্ষায় আছেন প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার বিদেশি শিক্ষার্থী। এ ছাড়া ঘাটতি দেখা দিয়েছে দক্ষ কর্মীরও। দক্ষ কর্মীর ভিসায় অস্ট্রেলিয়ায় এসেছেন মাত্র ৮ হাজার জন আর ওয়ার্কিং হলিডে ভিসায় ২২ হাজার জনের ভিসা মঞ্জুর হয়েছে। তবে প্রাধান্য পেয়েছে অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক ও স্থায়ী বাসিন্দাদের পরিবার। অস্ট্রেলিয়ায় এসেছে প্রায় ৬০ হাজার পরিবারের সদস্য। সব মিলিয়ে ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রায় ১ লাখ ৮০ হাজার ভিসাধারী অস্ট্রেলিয়ায় প্রবেশ করবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
অস্ট্রেলিয়ায় এখন যাঁরা আসতে পারবেন
গত ডিসেম্বরে অস্ট্রেলিয়ার সীমান্ত খোলার পর থেকে বিবেচ্য আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী, উচ্চ দক্ষতাসম্পন্নকর্মী, অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক ও স্থায়ী বাসিন্দা এবং তাঁদের পরিবারের সদস্যরাই কেবল অস্ট্রেলিয়ায় প্রবেশ করতে পারবেন। তবে, এ জন্য ভ্রমণকারীকে অবশ্যই সম্পূর্ণ টিকা গ্রহণ করা থাকতে হবে। শিগগিরই শরণার্থী এবং অস্থায়ী পরিবারের ভিসাও উন্মুক্ত করা হবে।
সুযোগ বাড়বে অস্থায়ী ভিসাধারীদের
সংকটকালে বহু অস্থায়ী ভিসাধারীরা কর্ম এবং সরকারি সহায়তার অভাবে অস্ট্রেলিয়া ত্যাগ করেছেন। তাই অস্থায়ী ভিসায় বাকি যাঁরা থেকে গেছেন, তাঁদের সহজে স্থায়ী বাসিন্দার ভিসা দেওয়ার একটা সুযোগের কথা রয়েছে অভিবাসন বিভাগের পক্ষ থেকে। এর মধ্যে কয়েকটি প্রক্রিয়ার ঘোষণাও চলে এসেছে। ধারণা করা হচ্ছে, অস্থায়ী স্কিল স্ট্রিমে প্রায় ৭৯ হাজার ৬০০টি ভিসা দেওয়া হবে।
স্বাস্থ্য ও হোটেল খাতের দক্ষ কর্মীদের জন্য স্থায়ী ভিসা
অস্ট্রেলিয়ার অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে দেশটির জরুরি খাতের দক্ষ কর্মীদের ভিসায় বাড়তি সুযোগ যুক্ত করবে অভিবাসন বিভাগ। গত নভেম্বরেই স্বাস্থ্য ও হোটেল-রেস্টুরেন্ট খাতের কর্মীদের ভিসায় আমূল পরিবর্তন আনা হয়। এর মধ্যে ছিল, যাঁরা এ খাতে ২০২০ সাল থেকে অস্ট্রেলিয়ায় কাজ করছিলেন, তাঁরা স্থায়ী বাসিন্দার জন্য আবেদন করতে পারবেন। এর মাধ্যমে দেশটির অন্যতম জনপ্রিয় ভিসা সাবক্লাস ৪৮২–এর শর্ট স্ট্রিমের ভিসাধারীদের সুবিধা বেড়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, এ সুযোগে প্রায় ২০ হাজার অস্থায়ী ভিসাধারী সুবিধা পাবে।
গ্র্যাজুয়েট ভিসা প্রক্রিয়ায় আসবে নতুনত্ব
ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞার কারণে অস্থায়ী গ্র্যাজুয়েট ভিসাধারীরা অস্ট্রেলিয়ায় প্রবেশ করতে পারছেন না। এমতাবস্থায় অনেকেরই ভিসার মেয়াদ চলে গেছে। সাধারণত দ্বিতীয়বার আবেদন করা যায় না এ ভিসায়। তবে এ ভিসায় পুনরায় আবেদন করার জন্য নতুন একটি ভিসা প্রক্রিয়া চালু হতে যাচ্ছে। ১ ফেব্রুয়ারি ২০২০ এর পর থেকে যেসব গ্র্যাজুয়েট ভিসার মেয়াদ চলে গেছে, তাঁরা নতুন ভিসায় আবেদন করে মেয়াদ বাড়িয়ে নিতে পারবেন। আগামী ১ জুলাই থেকে নতুন ভিসাটি চালুর কথা রয়েছে। এ ছাড়া গ্র্যাজুয়েট ভিসার মাস্টার্স স্ট্রিমের মেয়াদ দুই বছর থেকে তিন বছরে বাড়ানো হবে এবং গ্র্যাজুয়েট ওয়ার্ক স্ট্রিমের মেয়াদ ১৮ মাস থেকে বাড়িয়ে ২৪ মাস করা হবে।
অস্থায়ী স্কিলড রিজিওনাল ভিসার প্রক্রিয়া সহজতর করা হবে
তিন বছর পর্যন্ত ভিসার মেয়াদ বাড়বে বেশ কয়েকটি অস্থায়ী স্কিলড রিজিওনাল ভিসায়। এর মধ্যে সাবক্লাস ৪৮৯, ৪৯১ এবং ৪৯৪ রয়েছে। ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞার কারণে যাঁদের এ ভিসাগুলোর মেয়াদ চলে গেছে, তাঁরাই এ ভিসার মেয়াদ বাড়িয়ে নিতে পারবেন। অভিবাসন বিভাগ আশা করছে, বাড়তি এ সময়ের মধ্যে নতুন এবং পুরোনো সব ভিসাধারী অস্ট্রেলিয়ায় ফিরে বসবাস এবং কর্ম শুরু করতে পারবেন। এ ভিসায় প্রায় ১০ হাজার দক্ষ কর্মী আঞ্চলিক এলাকায় ফিরতে পারবেন বলে ধারণা করা যাচ্ছে।
স্থগিত থাকবে সেকশন ৪৮ বার আইন
ভিসা বাতিল বা নামঞ্জুর হলে অস্ট্রেলিয়া ত্যাগ না করে নতুন ভিসায় আবেদন করা যাবে না—এ সেকশন ৪৮ বারের স্থগিতাদেশ বহাল থাকছে। এর আগে যেকোনো কারণে ভিসা বাতিল কিংবা নামঞ্জুর হলে আবেদনকারীকে অবশ্যই অস্ট্রেলিয়া ত্যাগ করতে হতো। স্কিলড ওয়ার্ক রিজিওনাল সাবক্লাস ৪৯১ ভিসা, স্কিলড নমিনেটেড সাবক্লাস ১৯০ ভিসা, এমপ্লয়ার স্পনসর রিজিওনাল সাবক্লাস ৪৯৪ ভিসার ওপর থেকে সেকশন ৪৮ বার তুলে নেওয়া হয়েছে।
চলতি বছরের জুলাই মাস পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে অভিবাসন আইনের বিভিন্ন পরিবর্তন আসতে থাকবে। তবে নতুন করে সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়ার মতো কোনো পরিস্থিতি না হলে সব ধরনের অভিবাসীদেরই পুনরায় অস্ট্রেলিয়ায় প্রবেশ করতে দেওয়া হবে।
*কাউসার খান: অভিবাসন আইনজীবী, সিডনি, অস্ট্রেলিয়া।
ই-মেইল: [email protected]