আধুনিক পুঁজিবাদী রাষ্ট্র চলে মুক্তবাজারের নীতিতে। পণ্যের বিশ্বায়নই এর মূলকথা। বিশ্বজুড়ে বর্তমানে যে বাজার কাঠামো গড়ে উঠেছে, তার প্রবক্তা আমেরিকা। এ কাঠামো টিকে থাকে বেসরকারি খাতের সম্প্রসারণ ও সস্তা শ্রমের ওপর ভিত্তি করে। কিন্তু এখন বিশ্ব পুঁজির কেন্দ্র আমেরিকাতেই বেসরকারি খাত শঙ্কার মুখে পড়েছে।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শুরু থেকেই অভিবাসন সংকোচনের নীতি নিয়েছেন। ২০১৭ সালের এপ্রিলেই তিনি ‘বাই আমেরিকান অ্যান্ড হায়ার আমেরিকান’ শীর্ষক নির্বাহী আদেশে সই করেন। একে একে বৈধ অভিবাসীর সংখ্যা অর্ধেকে নামিয়ে আনা, ডাকা কর্মসূচি বাতিল, কর্মী ভিসা এইচ-ওয়ানবি ভিসার পরিসর সংকোচনসহ অনেকগুলো পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।
কিন্তু এই নীতিই এখন বুমেরাং হয়ে উঠছে আমেরিকার জন্য। ট্রাম্প-ঘোষিত ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতি বাস্তবায়নের পথকেই এ নীতি কঠিন করে তুলছে। আমেরিকার অর্থনীতির দিকে তাকালেই বিষয়টি পরিষ্কার হবে।
আমেরিকার অর্থনীতিতে প্রতিবছর ১৪ শতাংশের বেশি অবদান রাখেন অভিবাসীরা, জনসংখ্যার হিসাবে যাঁরা মাত্র ১৩ শতাংশ। আর খাত হিসেবে কঠোর অভিবাসননীতির প্রভাব বিশ্লেষণ করলে আঁতকে উঠতে হয়। ট্রাম্প প্রশাসনের নীতির কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে স্বাস্থ্য ও প্রযুক্তি খাত। আমেরিকান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের তথ্যমতে, মার্কিন স্বাস্থ্য খাতে কর্মরত চিকিৎসকদের মধ্যে ২৮ শতাংশ অভিবাসী। আর নার্স ও মনোবিদদের ক্ষেত্রে এ হার ২৪ শতাংশ। কিন্তু এখন কঠোর অভিবাসননীতির কারণে বহু হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যসেবাদাতা প্রতিষ্ঠান কর্মী-সংকটে ভুগছে। আর প্রযুক্তি খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো গত বছরই এ নীতির প্রভাব নিয়ে ব্যাপক আশঙ্কা প্রকাশ করেছিল। কারণ, মার্কিন প্রযুক্তি খাতের ২৫ শতাংশই অভিবাসী কর্মী। একইভাবে সংকটে রয়েছে হোটেল ও পর্যটনসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো।
শুধু তা-ই নয়, স্থানীয় আমেরিকান কর্মীদের তুলনায় অভিবাসী আমেরিকানদের মধ্যে ব্যবসায়িক উদ্যোগ গ্রহণের হারও বেশি। সে হিসাবে কর্মসংস্থান সৃষ্টির ক্ষেত্রেও অভিবাসীদের যথেষ্ট অবদান রয়েছে। ফলে কঠোর অভিবাসন দীর্ঘ মেয়াদে চাকরি ক্ষেত্রে শূন্যতার সৃষ্টি করবে। বিশেষত কম বেতনের চাকরি করার মতো লোক খুঁজে পাওয়া যাবে না। কারণ, স্থানীয় আমেরিকানরা এ ধরনের কাজে তেমন আগ্রহী নন। আবার দক্ষ শ্রমের ক্ষেত্রেও বড় ধরনের সংকট সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে ট্রাম্প-ঘোষিত ‘হায়ার আমেরিকান’ নীতির জয়জয়কার দেখা গেলেও, পরিণতিতে তা ‘শাট ডাউন আমেরিকা’র দিকে ধাবিত হতে পারে, যা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। সে বিপদ থেকে রক্ষা পেতে হলে এ নীতি থেকে সরে আসার কোনো বিকল্প নেই। আর সে রকম সিদ্ধান্তের দিকে ট্রাম্প প্রশাসনকে চালিত করতে হলে চাপ সৃষ্টি করতে হবে অভিবাসীদের তরফ থেকেই। প্রশাসনের একতরফা পরিসংখ্যানের বিপরীতে অর্থনীতিতে নিজেদের অবদানকে তুলে ধরতে হবে যথাযথভাবে।