অনাড়ম্বর, ছিমছাম ও মনোজ্ঞ এক অনুষ্ঠান

সাংস্কৃতিক সন্ধ্যায় কবিতা আবৃত্তি পর্ব
সাংস্কৃতিক সন্ধ্যায় কবিতা আবৃত্তি পর্ব

কবিতা আবৃত্তি, নৃত্য ও সংক্ষিপ্ত কৌতুকদীপ্ত নাটিকা নিয়ে বাংলাদেশি সাংস্কৃতিক সংগঠন অলিন্দ বর্ষা কবিতা ঝালমুড়ি নামে একটি মনোজ্ঞ সন্ধ্যা উপহার দিল নিউজার্সির রানিমিড উপশহরে। দর্শক সমাগম ছিল এক শর কাছাকাছি। অনুষ্ঠানের নামেও ছিল বিশিষ্টতা।

সময়টা অবশ্য বর্ষা নয়। মার্কিন মুলুকে সেরকম অবিরাম বর্ষণের আলাদা কোনো ঋতুও নেই। আয়োজকেরা বললেন, প্রবাস জীবনের নানান সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে অনুষ্ঠান হয়তো শরতের শেষেই অনুষ্ঠিত হলো। কিন্তু তাতে কি? চোখ বন্ধ করে কোনো বর্ষণমুখর বিকেল বা সন্ধ্যাবেলা কল্পনা করুন। ঝালমুড়ির সুবন্দোবস্তে অবশ্য আয়োজকেরা ফাঁকি দেননি। আর দর্শকেরাও দেখলাম গোগ্রাসে তার সদ্ব্যবহার করছেন। গত ৫ নভেম্বর শনিবার অলিন্দের এই সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানের শুরু হয় কবিতা দিয়ে। রবীন্দ্রনাথ, বুদ্ধদেব বসু ও জীবনানন্দের কবিতার পাশাপাশি ছিল শামসুর রাহমান এবং সদ্যপ্রয়াত দুই কবি সৈয়দ শামসুল হক ও শহীদ কাদরীর কবিতা। এই সব কবিদের ভাবনায় বর্ষা যে কত বিচিত্রভাবে ধরা দিয়েছে, তার একটা সুন্দর পরিচয় দর্শকেরা পেলেন।
আবহসংগীতের সুচিন্তিত ব্যবহার, বিশেষ করে গ্রন্থনায় অত্যন্ত সারগর্ভ ও সুলিখিত বর্ণনা সমগ্র কবিতাপাঠের পর্বটিকে অত্যন্ত মনোগ্রাহী করে তুলেছে।

নোবেল খ্যাতির বিড়ম্বনা নাটিকার একটি দৃশ্য
নোবেল খ্যাতির বিড়ম্বনা নাটিকার একটি দৃশ্য


মাঝখানে তিনটি সংক্ষিপ্ত নৃত্য পরিবেশনার পর নাটিকা-নোবেল খ্যাতির বিড়ম্বনা। বিষয় অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের নোবেল প্রাপ্তির পর পশ্চিমবঙ্গে মানুষের উচ্ছ্বাস। নাটকটি নবনীতা দেব সেনের হাস্যরসাত্মক রচনার ভিত্তিতে রচিত। এটি শ্রুতিনাটক হিসেবে প্রথম আটলান্টার সেবা লাইব্রেরির একটি অনুষ্ঠানে পরিবেশিত হয়। অমর্ত্য সেন নোবেল পাওয়ায় পশ্চিমবঙ্গের মানুষ উচ্ছ্বসিত হয়ে ওঠেন, কিন্তু এই উচ্ছ্বাসের প্রকাশ সব সময় প্রীতিকর ছিল না। নবনীতা অমর্ত্য সেনের প্রাক্তন স্ত্রী ও অত্যন্ত সূক্ষ্ম বুদ্ধিদীপ্ত তার পর্যবেক্ষণ। অমর্ত্য সেনের নোবেল খ্যাতি মানুষের ওপর যে তীব্র আলো ফেলল, তাতে মানুষের ক্ষুদ্রতা, দেখানোপনা আর আদিখ্যেতা বেশ পরিষ্কারভাবে ধরা পড়ল। এই নাট্যাংশে মানুষের সেই সীমাবদ্ধতা ফুটে উঠেছে। অলিন্দের প্রযোজনা ছিল ছিমছাম। অভিনয়ে যত্ন ও শৈলীর ছাপ ছিল। শব্দযোজনাও মানোত্তীর্ণ ছিল। ফলে নাটকটি শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত দর্শকদের মনোযোগ ধরে রাখতে সক্ষম হয়।
অবসরে অপেশাদার সংস্কৃতিকর্মীদের আয়োজনে সর্বক্ষেত্রে পেশাদার মান রক্ষিত হবে, এমন আশা হয়তো সংগত নয়। তারপরও অলিন্দর এই আয়োজনকে কয়েকটি কারণে বিশেষভাবে অভিনন্দিত করতে হয়। সচরাচর কবিতা আবৃত্তির প্রতি প্রবাসী বাঙালি দর্শক শ্রোতার আগ্রহ কম, তা ছাড়া এ দেশে বাংলা অনুষ্ঠানে প্রায়ই একটা ঢিলেঢালাভাব লক্ষ্য করা যায়। অনুষ্ঠান সময় মতো শুরু হয় না, দর্শকরাও সব সময় মনোযোগী নন।
অলিন্দর অনুষ্ঠান নির্ধারিত সময়ের খুব বেশি দেরিতে শুরু হয়নি এবং যেটা বিস্ময়ের, সমগ্র অনুষ্ঠানে দর্শকদের গভীর মনোযোগ। সুন্দর একটি অনুষ্ঠান উপহারের পাশাপাশি সুন্দরভাবে অনুষ্ঠান উপভোগের যেই অভ্যাস অলিন্দ তৈরি করছে, এটি সংগঠনটির একটি প্রশংসনীয় অর্জন।