ব্রাগানসা ও অতৃপ্ত হৃদয়ের অসম্পূর্ণ ভালোবাসার গল্প-২

অলংকরণ: আরাফাত করিম

এই প্রথমবার তার মুখখানার দর্শন পেলাম। প্রথম দেখায় তার প্রেমে পড়ে গেলাম। পূর্ণিমার চাঁদ যেনও তার রূপের কাছে হার মানে। তার থেকে কোনোভাবে চোখ সরাতে পারছিলাম না। সোনালি চুলের সঙ্গে কচি সবুজ ঘাসের মতো সতেজ তার মুখ, কিউটের ডিব্বা বললেও কম হয়ে যায়। চশমার ফাঁক দিয়ে তার চোখ দুটিকে দেখছিলাম। মনে পড়ছিল পল্লীকবি জসীমউদ্‌দীনের বিখ্যাত কবিতা ‘নিমন্ত্রণ’–এর সেই লাইন, ‘কালো জল তার মাজিয়াছে কেবা কাকের চক্ষু নিয়া।’

এত সুন্দর চোখ জীবনে খুব কম দেখেছি। পলিনার সুন্দর চোখ দুটি বারবার আমার অন্তরের সব পঙ্কিলতাকে মুছে দিচ্ছিল। কাকের চোখের মতো স্বচ্ছ ও সুন্দর তার দুখানি চোখ। বাঁশের পাতার মতো সরু ও উঁচু নাকটিও যেনও সৃষ্টিকর্তার নিপুণ হাতের ছাঁচে পূর্ণতা পেয়েছে।

কোনো ধরনের অ্যালকোহল কিংবা মাদকদ্রব্য মনে হয় মানুষের মধ্যে এ ধরনের মাদকতা তৈরি করতে পারে না, আমার মধ্যে সেদিন ঠিক যে ধরনের মাদকতার তৈরি হয়েছিল। বারবার মনে হচ্ছিল, এই বুঝি স্বর্গলোক থেকে দেবী আফ্রোদিতি ব্রাগানসার বুকে নেমে এসেছে। সৃষ্টিকর্তা একজন মানুষকে এত সুন্দরভাবে বানাতে পারে, সেটা তাকে না দেখলে কোনো দিনও বিশ্বাস হতো না। ছিপছিপে শারীরিক গড়ন কিংবা উচ্চতা সব দিক বিবেচনায় একেবারে অ্যাবসুলেট পারফেক্ট বললেও ভুল কিছু বলা হবে না।

যার সাম্রাজ্যের কোনো একজন রানী কিংবা রাজকুমারীর সঙ্গে রূপলাবণ্য ও সৌন্দর্যের দিক থেকে সে অনায়াসে পাল্লা দিতে পারবে। তার চেহারার মধ্যেও রাশিয়ান, বেলারুশিয়ান কিংবা ইউক্রেনিয়ান অর্থাৎ, স্লাভিক ছাপ স্পষ্ট।

আমার মধ্যে ভয় কাজ করছিল, বারবার কথা আটকে যাচ্ছিল। তবুও মনের ভেতরে সাহস সঞ্চার করে বললাম, ‘মার্তা আমাকে ক্লাসের অন্যান্য শিক্ষার্থীদের নিয়ে হোয়াটসঅ্যাপে একটি গ্রুপ খোলার পরামর্শ দিয়েছেন। এখনো আমি গ্রুপ খুলতে পারিনি, তবে গ্রুপ খুলতে গেলে তোমার হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরের প্রয়োজন হবে।’

আমাকে কোনো কিছু জিজ্ঞেস না করে সে তার মুঠোফোনে ইনস্টল করা হোয়াটসঅ্যাপ থেকে কিউআর কোড বের করে দিল। আমি আমার আইফোনের হোয়াটসঅ্যাপ থেকে সে কিউআর কোডটিকে স্ক্যান করলাম। আমার ফোনের স্ক্রিনে তার নাম ভেসে উঠল। এ প্রথম জানতে পারলাম যে তার নাম পলিনা।

অলংকরণ: আরাফাত করিম

স্কুলজীবন থেকে রাশিয়ার ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি আমার আকর্ষণ ছিল। ইংরেজি কিংবা ফরাসি ভাষার সাহিত্যের মতো রুশ ভাষার সাহিত্যও অত্যন্ত সমৃদ্ধ। লিও তলস্তয়, ম্যাক্সিম গোর্কি,  সেতলানা আলিক্সিয়েভিচ, বরিস পাস্তেরনাক, নিকোলাই গুমিলিউভ, অসিপ মান্দেলস্তাম, সের্গেই ইয়েসেনিন, ভ্লাদিমির মায়াকোভস্কি ও ফিওদর দস্তয়েভস্কিসহ বিভিন্ন রুশ সাহিত্যিকের লেখা পড়ছি বিভিন্ন সময়ে। নিজের থেকে রুশ ভাষা শেখার চেষ্টা করেছি।

প্রথম দিকে আমি ভেবেছিলাম পলিনা হয়তো রাশিয়ান হবে। কেননা, ‘পলিনা’-এ নামটি রাশিয়াতে বেশ জনপ্রিয়। রাশিয়াতে ফেসবুক হিসেবে পরিচিত ভিকেতে অ্যাকাউন্ট খুললে এমন অনেক মেয়েকে খুঁজে পাওয়া যাবে, যাদের নাম পলিনা। তাই আমি তাকে তৎক্ষণাৎ জিজ্ঞেস করি—

‘আর ইউ ফ্রম রাশিয়া?’
পলিনা উত্তর দেয়, ‘বেলারুশ।’
আমি তখন তাকে রাশান ভাষায় জিজ্ঞেস করি—
‘তি গোভোরিশ পো রুস্কি?’
ইংরেজিতে অনুবাদ করলে দাঁড়ায়, ‘ডু ইউ স্পিক রাশান?’

পলিনা আমার কথা শুনে কোনো উত্তর দেয় না, শুধু হাসতে থাকে। এত সুন্দর হাসি আমি আগে খুব কম দেখেছি। ছোটবেলায় মনস্টারস ইনকরপোরেটেড নামক একটি অ্যানিমেটেড সিনেমা দেখেছিলাম। সিনেমায় বু নামক এক ছোট্ট শিশুকে দেখানো হয় যার হাসির মাধ্যমে জেমস সুলিভান ও মাইক নামক দুই মনস্টার তাঁদের শহর মনস্ট্রোপোলিসে বিপ্লব এনেছিল।

অতীতে ছোট্ট শিশুদের ভয়ের দেখানোর মাধ্যমে তাদের শহরে সমস্ত শক্তির চাহিদা পূরণ হতো, কিন্তু পরবর্তী সময়ে বাচ্চাদেরকে হাসানোর মধ্য দিয়ে এ শহর তার প্রয়োজনীয় শক্তির চাহিদা পূরণ করতে শুরু হয়। বু নামক ছোট্ট শিশুটি একদিকে এ দুই মনস্টারের মনে ভালোবাসা সৃষ্টি করেছিল, অন্যদিকে বু এর মিষ্টি হাসি মনস্ট্রোপোলিস শহরে বসবাস করা সব মনস্টারের মধ্যে একটি সত্যকে সামনে নিয়ে আসে যেকোনো বাচ্চাকে ভয় দেখানোর পরিবর্তে তাকে যদি হাসানো যায়, তাহলে সেটা সে হাসি যে পরিমাণ শক্তি উৎপন্ন হয়, সেটা পরিমাণগতভাবে অনেক বেশি। অর্থাৎ, ভালোবাসার শক্তি সব সময় সবকিছুর ঊর্ধ্বে।

পলিনার হাসি আমাকে বারবার বু–এর কথা মনে করিয়ে দিচ্ছিল। আমার মধ্যকার সব বিষাদ, হতাশা ও বেদনা তাঁর হাসির কাছে ক্ষণিকের জন্য পরাজয় বরণ করল। তাঁর সেই হাসিতে যেনও মুক্তো ঝরে।

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায় বলতে গেলে—

‘ফুল সে হাসিতে হাসিতে ঝরে
জোছনা হাসিয়া মিলায়ে যায়
হাসিতে হাসিতে আলোকসাগরে
আকাশের তারা তেয়াগে কায়।’

পলিনা আমার থেকে জানতে চাইল, ‘তুমি রাশান শিখলে কীভাবে?’ সে আমাকে ইংরেজিতে প্রশ্ন করল।

আমি তার কাছে রুশ ভাষা, সংস্কৃতি ও সাহিত্যের প্রতি আমার ভালোবাসার কথা তুলে ধরলাম। পলিনা আমার থেকে কয়কেজন রুশ সাহিত্যিকের কথা জানতে চাইল যাঁদের লেখা আমি পড়েছি। আমি লিও তলস্তয়, ম্যাক্সিম গোর্কি ও বরিস পাস্তেরনাকের কথা বললাম। পলিনা আমাকে জিজ্ঞেস করল- ‘লিও তলস্তয় কিংবা ম্যাক্সিম গোর্কির কোন কোন বই তুমি পড়ছ?’

আমি লিও তলস্তয়ের লেখা উপন্যাস ‘ওয়ার অ্যান্ড পিস’ আর ম্যাক্সিম গোর্কির লেখা উপন্যাস ‘মাদার’ এর কথা বললাম। পলিনা আমার উত্তরের পরিপ্রেক্ষিতে বলল—

‘মনে হয় তুমি রাশান ভাষায় এখনো পুরোপুরি দক্ষ নয়, তারপরও এ বইগুলো কীভাবে পড়লে?’

আমি বললাম যে আমি এগুলোর অনুবাদ পড়েছি ইংরেজিতে। পলিনা আমার কথা শুনে বলল, রাশান ভাষায় এ বইগুলো শেষ করলে যে অনুভূতি আসত, সেটা কী ইংরেজি অনুবাদে পাওয়া সম্ভব?

আমি উত্তরে জানালাম, ‘অবশ্যই না। এ জন্য তোমার ভাষা আমি শিখতে চাই।’
এরপর পলিনাকে বললাম, ‘বেলারুশ ইজ এ গ্রেট কান্ট্রি। যতটুকু শুনেছি, একসময়ে সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত ছিল এমন দেশগুলোর মধ্যে বেলারুশের অধিবাসীরা নাকি সবচেয়ে বেশি  কাইন্ড হার্ডেট, অতিথিপরায়ণ এবং বিনয়ী। এ ছাড়া ইউরোপের মধ্যে সবচেয়ে পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্ন দেশগুলোর তালিকায় বেলারুশকে ওপরের দিকে রাখা হয়। এমনকি জার্মানিও বেলারুশের মতো এতটা পরিচ্ছন্ন নয়। আর বেলারুশের রাজধানী মিনস্ক হচ্ছে পূর্ব ইউরোপের সিলিকন ভ্যালি এবং একই সঙ্গে ফ্যাশননগরী হিসেবে গোটা বিশ্বে ব্যাপকভাবে সমাদৃত।’

অলংকরণ: আরাফাত করিম

পলিনা আমার কথা শুনে জিজ্ঞেস করল, ‘তুমি কীভাবে এ সব বিষয়ে এতটা নিশ্চিত হলে?’ তখন আমি তাকে ইংল্যান্ডের এক ইউটিউবারের ভিডিওয়ের কথা বললাম। পলিনা বলল, ‘হতে পারে, তবে এটা আমি জোর দিয়ে বলতে পারছি না, আদৌতে আমরা ঠিক কতটুকু কাইন্ড হার্টেড কিংবা আমরা ঠিক কতটুকু বিনয়ী।’

স্কুলজীবনে টেনিসের প্রতি আকর্ষণ ছিল। ভিক্টোরিয়া আজারেঙ্কা আমার সবচেয়ে পছন্দের টেনিস তারকাদের একজন। ভিক্টোরিয়া আজারেঙ্কার জন্ম হয়েছিল বেলারুশে। এ ছাড়া বর্তমান সময়ে সবচেয়ে জনপ্রিয় টেনিস তারকাদের মধ্যে আরিয়ানা সাবালেঙ্কার নামও বারবার উচ্চারিত হচ্ছে। কয়েক দিন আগে তিনি গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতে গোটা বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। আরিয়ানা সাবালেঙ্কার জন্মও বেলারুশে। পলিনাকে ভিক্টোরিয়া আজারেঙ্কা ও আরিয়ানা সাবালেঙ্কার কথা জিজ্ঞেস করলাম। এরপর তার থেকে জানতে চাইলাম,

‘ক্যান ইউ মেক দ্রানিকি?’
দ্রানিকি হচ্ছে একধরনের প্যান কেক, যা আলু দিয়ে তৈরি করা হয়। অনেকে একে পটেটো প্যানকেক হিসেবে অভিহিত করে থাকেন। পলিনা বলল—
‘আমার মা খুব ভালো দ্রানিকি বানায়।’

আমি বললাম, ‘একটা বিষয়ে আমাকে সাহায্য করতে পারবে? আমার অনেক দিনের ইচ্ছা বেলারুশ ঘুরে দেখব। তবে আমাদের পাসপোর্টে বেলারুশ যেতে ভিসার প্রয়োজন হয়। তুমি যদি আমাকে ভিসার ব্যাপারে সহায়তা করতে পারো, তাহলে তোমার দেশে বেড়াতে যাব এবং তোমার মায়ের হাতে বানানো দ্রানিকির স্বাদ নেব।’

পলিনা আমার কথার পরিপ্রেক্ষিতে বলল, ‘ওকে! আই উইল সি। সত্যি তুমি আমাদের দেশ সম্পর্কে অনেক কিছু জানো।’

আমি বললাম, ‘আমি তোমাদের দেশ ও তোমার সংস্কৃতিকে ভালোবাসি, যদিও এখন পর্যন্ত আমার বেলারুশে যাওয়ার সৌভাগ্য হয়নি।’

পলিনাকে এরপর একসঙ্গে কফি পানের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম। সে অবশ্য ওই দিন আমার আমন্ত্রণকে গ্রহণ করেনি।

রাশিয়া, ইউক্রেন, বেলারুশ, পোল্যান্ড, রোমানিয়া, বুলগেরিয়া, সার্বিয়া, ক্রোয়েশিয়া, হাঙ্গেরি, আলবেনিয়া, মেসিডোনিয়া, চেক রিপাবলিক অর্থাৎ পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোর মেয়েরা জিনগতভাবে অনেক সুন্দর হয়ে থাকে। পোশাক-পরিচ্ছদ থেকে শুরু করে নেইল আর্ট, লিপস্টিক ও মেকাপ; অর্থাৎ, ফ্যাশন–সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয়ে তারা খুবই সচেতন। এমনকি এ সব দেশের মেয়েরা অনেক সময় বাসা থেকে বের হয়ে দুই মিনিট হাঁটার দূরত্বের কোনো জায়গায় গেলেও ফ্যাশন আইকন বা মডেলদের মতো নিজেদের সজ্জিত করতে ভুল করে না।

পলিনা সেদিক থেকে একবারে সাধারণ। তার মধ্যে ছিল না কোনো ধরনের মেকআপের ফুলঝুরি, পোশাকেও সে ছিল ভীষণ সাদামাটা। সৃষ্টিকর্তা পরম যত্নে পলিনাকে নিজ হাতে বানিয়েছেন, যাবতীয় সব সৌন্দর্যের সবটুকু তিনি কোনো ধরনের কার্পণ্য না করে সরাসরি পলিনার মধ্যে ঢেলে দিয়েছেন। তাই কোনো ধরনের মেকআপ বা সাজসজ্জা ছাড়াই পলিনা ছিল অপরূপ সৌন্দর্যের প্রতিচ্ছবি। লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি বেঁচে থাকলে মোনালিসার জায়গায় হয়তো পলিনার ছবি আঁকতেন।

পলিনার থেকে হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বার নেওয়ার পরেও বিভিন্ন কারণে গ্রুপ খুলতে আরও কয়েক দিন সময় লেগে যায়। গ্রুপ খোলার পর আলাদাভাবে পলিনাকে ম্যাসেজ দিই এবং গ্রুপের বিষয়ে তাকে অবহিত করি। এভাবে নিয়মিত তার সঙ্গে টেক্সটের আদান-প্রদান শুরু হয়। বিভিন্ন বিষয়ে তাকে প্রশ্ন করি এবং পলিনাও আন্তরিকতার সঙ্গে আমার সব প্রশ্নের উত্তর দিতে থাকে।

পলিনার বর্তমান বয়স ১৯ বছর, তবে জ্ঞান-গরিমার দিক থেকে হিসাব করলে তার বয়স ৩০–এর ওপরে। বিভিন্ন বিষয়ে তার অগাধ পাণ্ডিত্য রয়েছে। সেটা ইতিহাস, ঐতিহ্য কিংবা সংস্কৃতি হোক, অথবা বিশ্ব রাজনীতির যেকোনো বিষয়ে হোক। যতই দিন যেতে থাকে পলিনার প্রতি আমি তত দুর্বল হতে থাকি।

পলিনা মার্ভেল সিনেমাটিক ইউনিভার্সের ভীষণ ভক্ত। নভেম্বরের ১০ তারিখে লিসবনে গিয়েছিলাম। মূলত পর্তুগালের রেসিডেন্ট পারমিটের জন্য আবেদন করতে সেবার লিসবনে যেতে হয়। বাসের সাহায্যে ব্রাগানসা থেকে লিসবনে পৌঁছাতে সাড়ে ছয় থেকে সাত ঘণ্টার মতো সময় লাগে। পর্তুগালে বর্ডার অ্যান্ড ইমিগ্রেশন সার্ভিসকে সেইফ বলা হয়।

পর্তুগালের বিভিন্ন স্থানে সেইফের অনেকগুলো ডেলিজগেশন সেন্টার রয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে পর্তুগালে পাড়ি জমানো অভিবাসীরা অ্যাপয়েন্টমেন্ট সাপেক্ষে এসব ডেলিগেশন সেন্টারের যেকোনো একটিতে গিয়ে রেসিডেন্ট পারমিটের আবেদন জমা দেন। আমার অ্যাপয়েন্টমেন্ট ছিল পরের দিন দুপুর আড়াইটায় ক্যাসকাইসে থাকা সেইফের ডেলিগেশন সেন্টারে।

লিসবনের মূল শহর থেকে বিশমাইল পশ্চিমে আটলান্টিক মহাসাগরের কোল ঘেঁষে কাসকাইসের অবস্থান। লিসবন থেকে কাসাকাইসে পৌঁছাতে প্রায় এক ঘণ্টার মতো সময় লাগে। লিসবনের কাইস দ্য সোদ্রের রেলওয়ে স্টেশন থেকে ট্রেনের সাহায্যে কাসাকাইসে পৌঁছানো যায়, আটলান্টিক মহাসাগরের কোল ঘেঁষে যখন ট্রেন যখন কাইস দ্য সোদ্রে থেকে কাসাকাইসের দিকে ছুটে চলে যখন মনের মধ্যে ভিন্ন একধরনের অনুভূতির সৃষ্টি হয়।

পুরো যাত্রাপথের সৌন্দর্য সত্যি মনে রাখার মতো। ইউরোপের একটি দেশের রাজধানী শহর হিসেবে লিসবন তেমন একটা পরিচ্ছন্ন নয়। লিসবন থেকে কাসকাইসের দূরত্ব খুব একটা বেশি নয়, তারপরও কাসকাইস বেশ পরিপাটি ও গোছালো। ছবির মতো সুন্দর এ ছোট শহরটির বর্ণনা এ মুহূর্তে আমার পক্ষে তুলে ধরা সম্ভব নয়। কাসকাইস আলাদা মিউনিসিপ্যালিটি।

বলা হয়ে থাকে, লিসবন কিংবা এর আশেপাশের অঞ্চলে যেসব উচ্চবিত্ত মানুষ রয়েছেন, তাঁদের বেশির ভাগের বসবাস নাকি কাসাকাইসে। গ্রীষ্মকালে কাসাকাইসে এত বেশি দর্শনার্থীর সমাগম হয় যে সেখানে তিলধারণের ঠাঁই পাওয়া যায় না। বিশেষ করে সার্ফারদের নিকট কাসকাইসের সমুদ্রসৈকত বেশ সমাদৃত।

সেইফের ডেলিগেশন সেন্টারে জমা দেওয়ার জন্য কিছু ডকুমেন্ট প্রিন্ট করতে কাসাকাইসের শপিংমলের ভেতরে থাকা একটি স্টেশনারি শপে গিয়েছিলাম। শপের ভেতর মার্ভেলের সুপার হিরোদের নিয়ে গড়া সংগঠন অ্যাভেনজার্সের লোগোসংবলিত একটা চাবির রিং দেখতে পেলাম। কোনো কিছু চিন্তা না করে সেটাকে কিনে ফেললাম, ভাবলাম এ চাবির রিংটি হাতে পেলে পলিনা ভীষণ খুশি হবে। চলবে...

লেখক: রাকিব হাসান রাফি, শিক্ষার্থী, ইউনিভার্সিটি অব নোভা গোরিছা, স্লোভেনিয়া

*দূর পরবাসে গল্প, ভ্রমণ কাহিনি, নিজের জীবনের গল্প পাঠাতে পারবেন [email protected]