নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির তিন দশকের সাফল্য উদ্‌যাপনে এনএসইউ অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন অস্ট্রেলিয়ার আয়োজন ‘সেলিব্রেশন সোইরি'

৮ জুন মেলবোর্নের সেইন্ট কিলডা টাউন হলে হয়ে গেল এক জমকালো নৈশভোজ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান—‘সেলিব্রেশন সোইরি’। এনএসইউ অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন অস্ট্রেলিয়া (NSUAAA) নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির তিন দশকের সাফল্যকে উদ্‌যাপনের জন্যই প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের এ আয়োজন।

বর্তমানে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি (NSU) ইন্টারন্যাশনাল র‍্যাঙ্কিং যেমন ‘টাইমস হায়ার এডুকেশন ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি র‍্যাঙ্কিং ২০২৪’–এ এবং ‘কিউএস ইউনিভার্সিটি র‍্যাঙ্কিং ২০২৪-এ’ নিজের অবস্থান নিশ্চিত করেছে। ১৯৯৩ সালে বাংলাদেশের প্রথম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে প্রতিষ্ঠার পর থেকে NSU-এর স্নাতকেরা গত তিন দশকে শীর্ষস্থানীয় আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে নিজেদের অবস্থান সুনিশ্চিত করেছেন এবং দেশের উন্নয়নে অবদান রেখে আসছেন। নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির তিন দশকের কৃতিত্বকে সম্মান জানিয়ে এবং এর প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীদের কৃতিত্বকে উদ্‌যাপন করতে, NSUAAA অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসকারী নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির প্রাক্তন ছাত্র–ছাত্রী, শিক্ষক এবং কর্মীদের জন্য বিনোদন এবং নস্টালজিয়ায় পরিপূর্ণ একটি অবিস্মরণীয় সন্ধ্যা সফলভাবে উপহার দিয়েছে।

অনুষ্ঠানটির পর্দা উন্মোচন হয় অস্ট্রেলিয়ার প্রাচীন জনগোষ্ঠী অ্যাবঅরিজিনাল এবং টরেস স্ট্রেইট দ্বীপবাসীর (অস্ট্রেলিয়ার প্রথম জনগোষ্ঠী) প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে। এ জনগোষ্ঠীর প্রবীণ ব্যক্তি (সম্প্রদায়ের নেতা) অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেব উপস্থিত থেকে তার বক্তব্য দেন। এরপর বিভিন্ন সাংস্কৃতিক নৃত্যের সঙ্গে তাঁরা তাদের ঐতিহ্যবাহী অ্যাবঅরিজিনাল আনুষ্ঠানিকতা মঞ্চায়ন করেন।

অনুষ্ঠানের মূল আকর্ষণ ছিল বাংলাদেশ থেকে অস্ট্রেলিয়ায় যাওয়া ‘এভয়েড রাফা’ ব্যান্ডের রক স্টার রায়েফ আল হাসান-রাফা; গায়িকা এবং এনএসইউর প্রাক্তন ছাত্রী এলিটা করিম এবং বাংলাদেশে স্ট্যান্ড-আপ কমেডির পথিকৃৎ নাভিদ মাহবুব। অনুষ্ঠানটিতে অংশগ্রহণ করতে পেরে রোমাঞ্চিত এলিটা করিম উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন এবং জানান এ অনুষ্ঠানে ‌অংশগ্রহণ তাঁকে নস্টালজিক করে তুলছে পুরানো সেই ইউনিভার্সিটি জীবনের কথা মনে করিয়ে দিয়ে। সক্রিয়ভাবে আয়োজিত নান্দনিক কালচারাল অনুষ্ঠান, মন্চনাটক এবং বিভিন্ন ক্লাবের সম্পৃক্ততায় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের কথাও জানান।

নাভিদ মাহবুব এনএসইউ–এর সঙ্গে সম্পৃক্ততার কথা বলেন এবং এ ধরনের অনুষ্ঠান নিয়ে পুরোনো দিনের স্মৃতিচারণা করেন। তাঁরা দুজন এনএসইউএএএ–এর এ উদ্যোগ এবং সকল কর্মকাণ্ডকে সাধুবাদ জানান।

এদিকে রাফা এনএসইউর সঙ্গে তার প্রাতিষ্ঠানিক সম্পৃক্ততা না থাকা সত্ত্বেও অনুষ্ঠান নিয়ে উদ্দীপনা প্রকাশের পাশাপাশি এ-ও বলেন, তাঁর ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও সংগীতের ওপরে কোনো প্রাতিষ্ঠানিক উচ্চশিক্ষা বাংলাদেশ থেকে অর্জন করতে পারেননি কেননা বাংলাদেশে সংগীতের ওপর উচ্চশিক্ষার কোনো সুযোগ নেই। এনএসইউর তিন দশকের সাফল্যকে অভিনন্দন জানিয়ে রাফা আশা প্রকাশ করেন, এনএসইউ আর অন্য বিষয়ের মতো খুব শিগগিরই সংগীতের ওপর উচ্চশিক্ষার অনুষদ সংযোজন করবে।

এই তিন জনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত অতিথিদের মনোমুগ্ধকর পরিবেশনায় আকৃষ্ট করে অনুষ্ঠানটিকে উচ্চমাত্রায় নিয়ে যায়। এ ছাড়া অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসকারী NSU-এর প্রাক্তন ছাত্রছাত্রী এবং শিল্পী সিমিন, বিশাল, সানি, বীথি, সারিতা ও নাবিল মঞ্চে এসে নস্টালজিয়া এবং বন্ধুত্বের ছোঁয়া যোগ করেন। তাঁদের সঙ্গে বাদ্যযন্ত্রে ছিল রেদওয়ান, রাফায়েল, সাইফ ও ফাহিম। পুরো অনুষ্ঠানটি অসাধারণ সঞ্চালনার মাধ্যমে সকলের মনোরঞ্জন করে প্রাক্তন ছাত্র মোম মাজিদ ও ছাত্রী সাবা ইসলাম।

অতিথিদের জন্য একটি আকর্ষণীয় নৈশভোজের ব্যবস্থা ছিল, যার সার্বিক দায়িত্বে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়েরই প্রাক্তন ছাত্র এবং স্থানীয় স্বনামধন্য রেস্তোরাঁর অন্যতম শেফ সাদিক মুহাম্মদ। তাঁর তত্ত্বাবধানে ইওর লিল কুক নৈশভোজটি উপস্থাপন করে। এদিকে বাবা-মায়েরা যেন অনুষ্ঠানটি সম্পূর্ণরূপে উপভোগ করতে পারেন, সে জন্য ছিল পেশাদার ও অভিজ্ঞ কেয়ারার দ্বারা শিশুদের দেখাশোনা এবং আনন্দের ব্যবস্থা। অনুষ্ঠানকে আরও উপভোগ্য করার জন্য আয়োজন করা হয় aarong.com/au–এর সৌজন্যে একটি রাফল ড্র।  

এ দিন অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন প্রদেশ থেকে আসা নর্থ সাউথের সর্বপ্রথম ব্যাচের পাঁচ জন প্রাক্তন শিক্ষার্থী আহমদ হুসাইন, যারা তানজিলা বারী, রাহাত আজিজ, হাসিবুল হাসান এবং উর্মি আহমেদের উপস্থিতি অনুষ্ঠানকে আরও অর্থপূর্ণ করে তোলে। কারণ নর্থ–সাউথ–এর তৃতীয় দশকে, তাঁদেরও এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির তৃতীয় দশক পূর্ণ হয়। প্রথম ব্যাচের এই পাঁচজনকে সম্মাননা পদক দেওয়া হয়।

সর্বোপরি অনুষ্ঠানটি শেষ হয় একটি সারপ্রাইসিং ফায়ার শোর মধ্য দিয়ে। নিয়াজ ওরফে নিনজা নিয়াজ বেশ কিছু বহুল সমাদৃত বাংলা সংগীতের তালে জ্বলন্ত তরবারি ও অন্য জ্বলন্ত প্রপ দিয়ে অ্যাক্রোবেটিক্স প্রদর্শন করে সবাইকে বিমোহিত করে অনুষ্ঠানের উপসংহার টানেন। এ অসামান্য অনুষ্ঠানটির টাইটেল স্পনসর ছিল ডিসিফার ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, আর ডিজেন একাডেমি ও aarong.com এসেছে সহ-স্পন্সর হিসেবে। ফ্যাশন পার্টনার ছিলো অনুপম ফ্যাশনের পথিকৃৎ Azure & Jade। ট্রাভেল পার্টনার ছিল শেয়ার ট্রিপ।

ভিক্টোরিয়া অস্ট্রেলিয়ার কনজ্যুমার অ্যাফেয়ার্সের নট-ফর-প্রফিট অ্যাসোসিয়েশন হিসাবে নিবন্ধিত NSUAAA পেশাভিত্তিক, শিক্ষামূলক এবং ব্যক্তিগত উন্নয়নমূলক বিভিন্ন কার্যক্রম চালায়। এ প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীরা বিভিন্ন পেশার অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের থেকে পেশাভিত্তিক জ্ঞান অর্জন থেকে শুরু করে তাদের কর্মস্থলে চাকরির ব্যবস্থা এবং পেশাদার প্রশিক্ষণ ও কোচিংয়ে তাদের দক্ষতা বাড়ানোর সুযোগ পেয়ে আসছেন। এ প্ল্যাটফর্মে সদ্য আসা NSU-এর প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীদের অস্ট্রেলিয়ায় আসার জন্য সার্বিক সহায়তা প্রদান করে, যার মধ্যে অন্যতম হলো বিমানবন্দরে পিক-আপ, বাসস্থান খুঁজতে এবং বিদেশের মাটিতে প্রথম চাকরিটি পেতে সহায়তা করা ইত্যাদি।

NSUAAA আয়োজিত ‘সেলিব্রেশন সোইরি’-তে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও নৈশভোজের মাধ্যমে একত্রিত হয়েছেন বিভিন্ন বয়সী প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীরা, যাঁরা বিভিন্ন পেশায় ও বাণিজ্যে নিয়োজিত অথবা অস্ট্রেলিয়ার কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষারত ছাত্রছাত্রী। এই মিলনমেলার উদ্দেশ্য শুধু যে চিত্তবিনোদন ছিল, তা নয়, এটি ছিলো হাস্যোচ্ছলতার মধ্য দিয়ে একে অপরের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়া, যেন পরবর্তীতে তাঁরাই একে অপরকে নিজ নিজ অবস্থানে থেকে সহযোগিতা করতে পারেন।  

‘সেলিব্রেশন সোইরি’ শুধু একটি অনুষ্ঠান নয়, এটি NSU–এর সব প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীদের সফরের গল্প, যা তাঁদের কৃতিত্বের এবং দৃঢ় বন্ধনের নিদর্শন। NSUAAA এই বন্ধনকে তার কর্মসূচির মাধ্যমে সাফল্যের উচ্চশিখরে পৌঁছে দেয়ার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

*দূর পরবাসে ছবি, লেখা ও ভিডিও পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]