জেনারেশন এক্স টু জির স্বপ্নভার ড. ইউনূসের ওপর ন্যস্ত
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ক্ষুদ্রঋণ ও গ্রামীণ ব্যাংকের ওপর বিশদভাবে পড়তে হয়েছিল। জেনেছি, তিনি কীভাবে হাটহাজারীর জোবরা গ্রাম থেকে যাত্রা শুরু করে গ্রামীণ ব্যাংককে বিশ্বের দরবারে নিয়ে গেছেন। তখন থেকেই মানুষটির প্রতি শ্রদ্ধা জন্মেছিল। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন। যদিও আমরা ওনাকে পাইনি। আমি তারও অনেক পরের শিক্ষার্থী।
ড. ইউনূস ২০০৬ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পান। বাংলাদেশকে ভিন্ন একটি মর্যাদার জায়গায় প্রতিষ্ঠিত করেন। ওনার অবদান ও প্রাপ্তি সম্পর্কে আমাদের অনেকেরই যথার্থ জ্ঞানের অভাব আছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বিশ্বনন্দিত এ ব্যক্তিকে বিভিন্ন বৈরী আচরণের সম্মুখীন হতে হয়!
জেন-জিদের নেতৃত্বে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সফলতার হাত ধরে ড. মুহাম্মদ ইউনূস তত্ত্বাধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন। বাংলাদেশে একটি নতুন ইতিহাসের সূচনা ঘটল।
অভিনন্দন ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও তাঁর সরকারকে। এত দূরে বসেও সেই নতুন আনন্দের সুবাতাসের ছোঁয়া পাচ্ছি। ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে এ অর্জন সাধারণ জনগণের দোড়গোড়ায় পৌঁছাবে সেই প্রত্যাশা।
বাংলাদেশে জেন-জিদের নেতৃত্বাধীন ছাত্র-জনতার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন যেমন ছাপিয়ে গেছে জেন-এক্স ও জেন-ওয়াই বা মিলিনিয়ালসকে, তেমনি ছুঁয়ে গেছে জেনারেশন আলফাকেও। এই আন্দোলনে জেন–আলফাকেও প্রাণ দিতে হয়েছে। বাদ যায়নি প্রবাসে থাকা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত জেন-আলফাদের অনুভূতি।
আমার ১৩ বছর বয়সী কন্যা ৩ আগস্ট ছবিসহ একটা প্রতিবাদ বা মতামত লিখেছিল। আমি সেটি পরে আবিষ্কার করেছি। শুধু তা–ই না, বড়জনের দেখাদেখি ছয় বছর বয়সী ছোটজন কী বুঝেছে জানি না। সে বাংলাদেশসহ কয়েকটি দেশের পতাকার ছবি এঁকে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছে—‘Which one would you pick?’
এই প্রশ্ন কি প্রবাসীদের উদ্দেশে? এমন বাংলাদেশ কি আমরা সামনে দেখব, যেখানে প্রবাসীরা নিঃসন্দেহে দেশে স্থায়ীভাবে ফিরে যাওয়ার স্বপ্ন দেখতে পারবেন। অনেক প্রবাসীর সুপ্ত বাসনা বাস্তবে রূপ নেবে সেই স্বপ্ন আমরা বুনতেই পারি!
নিঃসন্দেহে জেন-জিরা এই গণ–অভ্যুত্থানের দাবীদার। এই গণ–অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে জেন-জির বৈশিষ্ট্য খুব পরিষ্কার ও প্রকটভাবে সামনে এসেছে, যা বিশেষভাবে পরিলক্ষিত ও কল্পনাতীত। কয়েক জেনারেশনের আবেগ ও চাওয়াকে বাস্তবে রূপান্তর করেছে এই জেন-জি।
সেই সঙ্গে এটা সর্বসম্মতভাবে স্বীকৃত যে এ আন্দোলনের দুর্দান্ত সাহস ও উৎসাহ জুগিয়েছেন রংপুরের আবু সাঈদ। তিনি দুহাত প্রশস্ত করে বুক পেতে দিয়ে জীবনের বিনিময়ে যে ইতিহাস প্রতিষ্ঠিত করেছেন, তা বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করার জন্যে যথেষ্ট। সাহসী সেই ছবি তারুণ্যের উদ্যমতা ও শক্তির প্রতীক। এই প্রতীকী ছবি বা লোগো দিয়ে আমাদের নতুন বাংলাদেশকে ইতিবাচকভাবে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরতে পারি।
এখন কয়েক জেনারেশনের স্বপ্নভার ন্যস্ত হলো ড. মুহাম্মদ ইউনূস তথা নতুন তত্বাবধায়ক সরকারের ওপর। কাজটি মোটেও সহজ নয়। এই দুর্নীতি জরাগ্রস্ত সরকারকাঠামো, ভঙ্গুর অর্থনীতি, দেশি-বিদেশি সুবিধাবাদী বিভিন্ন গোষ্ঠীর চাপ—সব মিলিয়ে দুঃসাধ্য এই কাজ কীভাবে সাধ্য ও আয়ত্তের মধ্যে নিয়ে আসবেন, সেটাই দেখার বিষয়।
আমরা শুনছি আপনার কথা। চার জেনারেশনের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনতা আপনার সঙ্গে আছে। আপনি এগিয়ে চলুন।
*লেখক: সুরাইয়া সিদ্দিকী, টেক্সাস, যুক্তরাষ্ট্র
দূর পরবাসে ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]