বিশ্ব ফুটবলের মঞ্চে বাংলাদেশের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ দেখতে চাই

চলছে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ। বসে খেলা দেখছি জার্মানির সঙ্গে হাঙ্গেরির (জার্মানি জিতেছে), ঠিক তখনই মনে পড়ে গেল বাংলাদেশের কথা, মনে পড়ে গেল ফুটবলের কথা, মনে পড়ে গেল বাঙালি জাতির কৃতিত্বের কথা। বাংলাদেশের ১৭ কোটি মানুষের হৃদয়ে ফুটবলের প্রতি অগাধ ভালোবাসা। সেই ভালোবাসা নিয়ে আজও ফুটবল খেলার মাঠে ছুটছে হাজারো তরুণ। তবু কেন আমরা বিশ্বমঞ্চে ফুটবলে নিজেদের স্থান করে নিতে পারছি না? এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে আমরা অনেক সমস্যার মুখোমুখি হই, তবে সমস্যার সমাধানও আমাদের হাতেই রয়েছে।
খেলাধুলার প্রতি বাঙালির ভালোবাসা

বাঙালিরা খেলাধুলা ভালোবাসে, তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। গ্রাম থেকে শহর, স্কুল থেকে কলেজ, পাড়া-মহল্লায় ফুটবল খেলার দৃশ্য চোখে পড়ে। ছোটদের মধ্যে ফুটবলের প্রতি আগ্রহ এবং উন্মাদনা বিশেষভাবে লক্ষণীয়। তাদের চোখে স্বপ্ন, তাদের মনোভাব উৎসাহব্যঞ্জক। কিন্তু প্রতিভা ও আগ্রহের জায়গা থেকেও আমরা বিশ্বমঞ্চে তেমন ভালো করতে পারছি না। এর পেছনে রয়েছে দুর্নীতি, অবকাঠামোর অভাব এবং যথাযথ পরিকল্পনার অভাব।

দুর্নীতি আমাদের খেলাধুলার একটি বড় বাধা। যেখানেই প্রতিভা বিকাশের সুযোগ, সেখানে কিছু মানুষ নিজেদের স্বার্থে তা নষ্ট করে ফেলে। খেলোয়াড় নির্বাচন থেকে শুরু করে প্রতিযোগিতার আয়োজন—সবখানেই দুর্নীতি আমাদের পিছু ছাড়ে না। এটি বন্ধ করার জন্য দরকার কড়া পদক্ষেপ, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি। খেলাধুলার প্রতিটি ধাপে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে।

ফুটবলের উন্নতির জন্য অবকাঠামোগত উন্নয়ন অপরিহার্য। দেশের প্রতিটি অঞ্চলে ভালো মানের খেলার মাঠ, প্রশিক্ষণকেন্দ্র ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সরবরাহ করতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফুটবলের জন্য বিশেষ সুযোগ-সুবিধা থাকতে হবে, যাতে খেলোয়াড়েরা তাদের দক্ষতা বাড়াতে পারে।

ফুটবল খেলার উন্নতির জন্য সঠিক প্রশিক্ষণ অপরিহার্য। দেশি–বিদেশি অভিজ্ঞ কোচদের মাধ্যমে খেলোয়াড়দের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। তাদের আধুনিক খেলার কৌশল সম্পর্কে অবহিত করতে হবে।

জাতির প্রতিটি স্তর থেকে ফুটবলারদের জন্য উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা জরুরি। পরিবারের সদস্যদের উচিত তাদের সন্তানদের খেলাধুলায় উৎসাহিত করা। পাশাপাশি সরকারি–বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে এবং স্পনসরশিপের মাধ্যমে খেলোয়াড়দের আর্থিক সহায়তা দিতে হবে।

খেলাধুলার উন্নয়নে জনগণের সমর্থন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্টেডিয়ামে খেলা দেখা, টেলিভিশনে খেলা উপভোগ করা ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে খেলোয়াড়দের উৎসাহিত করা উচিত। এতে খেলোয়াড়েরা আরও অনুপ্রাণিত হবে এবং ভালো খেলার জন্য উদ্যমী হবে।

বাংলাদেশের মাটিতে জন্ম নেওয়া প্রতিটি ফুটবলারের চোখে একদিন বিশ্বমঞ্চে খেলার স্বপ্ন জ্বলজ্বল করে। সেই স্বপ্ন পূরণের পথে আমরা যদি একসঙ্গে কাজ করি, তাহলে কোনো বাধাই আমাদের থামাতে পারবে না। দুর্নীতি, অবকাঠামোর অভাব, সঠিক দিকনির্দেশনার অভাব—সবকিছুকে পেছনে ফেলে গড়ে তুলব একটি নতুন বাংলাদেশ, যেখানে ফুটবলে আমরাও বিশ্বমঞ্চে স্থান করে নেব।

এগিয়ে চলো, বাংলাদেশ! ফুটবলের বিশ্বমঞ্চে তোমারও রয়েছে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ!
এখনই সময় আমাদের উঠে দাঁড়ানোর, আমাদের স্বপ্নকে বাস্তবায়নের। একদিন নিশ্চয়ই বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশের পতাকা উড়বে আর সেই দিনের জন্য আমাদের কাজ শুরু করতে হবে আজ থেকেই।

*লেখক: রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন