ফুটবল তুমি কথা কও

শ্রীলঙ্কায় আগামী চারজাতি টুর্নামেন্টে খেলার কথা বাংলাদেশে ফুটবল দলের
প্রথম আলো ফাইল ছবি

চলছে কাতারে বিশ্বকাপ ফুটবল খেলা। কাতার এমন একটি সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে গিয়ে যে নানা কর্মে লিপ্ত হয়েছে, তা কি বিশ্ব জানে? জানলেও কতটুকু এবং সব সত্য কি কখনো জানা সম্ভব হবে? সম্ভব হলেও-বা কী? নতুন ঘটনাপ্রবাহর ঢেউ পুরোনো ঘটনাকে সময়ের সঙ্গে বিলীন করে দেবে। অনেক গরিব দেশের মানুষের জীবন নাশ হয়েছে এ বছরের বিশ্বকাপ ফুটবল আয়োজনে এবং তার মধ্যে বাংলাদেশের অনেক প্রাণ জড়িত। বহু বছর ধরে দেখছি, বাঙালি জাতির চেতনা ফুটবলের ওপর। এ চেতনা অন্যান্য দেশের তুলনায় কিছুটা ভিন্ন। শুধু সমর্থক হতেই নিজেদের মধ্যে মারামারি-খুনোখুনি করতেও আমরা দ্বিধাবোধ করি না। দ্বিমত পোষণ করা যাবে না, সবাইকে ব্রাজিল অথবা আর্জেন্টিনার সমর্থক হতে হবে অথবা জার্মান, তা না হলে গৃহযুদ্ধ। রাজনীতির ক্ষেত্রেও একই অবস্থা—হয় বিএনপি, না নয় আওয়ামী লীগ, এর বাইরে জগৎ বলে কিছু যে থাকতে পারে, সেটা কেউ বিশ্বাস করতেও চায় না। ধর্মের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা, কিন্তু কেন? মত-দ্বিমতে কেন এত জ্বালা! যা-ই হোক, ফিরে আসি ফুটবলে। জার্মানের সমর্থকও মনপ্রাণে চান, এবার বিশ্বকাপ আর্জেন্টিনা জিতুক। বাংলার অলিগলিতে ৩৬ বছর ধরে ঘুরে বেড়ানো অতৃপ্ত আত্মাগুলোর হাহাকার তবু থামুক। লাখো দীর্ঘশ্বাসে ঢাকার বায়ুতে যোগ হওয়া দূষণের মাত্রা তবু কমুক। আমার আর্তনাদ—কিন্তু অভাগা বাংলাদেশের কী হবে? কবে আমরা ফুটবলের মাঠে লাল-সবুজের পতাকা দেখব!

দেশের জন্য যুদ্ধে প্রাণ দেওয়া অনেক বড় ও মহৎ কাজ। তবে এটা সবার জন্য নয়। আমার মতে, কারও কারও দায়িত্ব হচ্ছে প্রাণ দেওয়া এবং কারও দায়িত্ব হচ্ছে বেঁচে থেকে বিজয় নিশ্চিত করা।

এখন আমরা স্বাধীন দেশের নাগরিক। ‘স্বাধীনতা’ আসলে কী? ধরুন আমরা কোনো সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছি বা কোনো কাজ করতে যাচ্ছি। সেই সিদ্ধান্ত বা কাজে যদি স্বার্থ, লোভ, হিংসা, খারাপ উদ্দেশ্য বা এ-জাতীয় কোনো কিছু মিশ্রিত থাকে, তখন আসলে আমরা আমাদের স্বাধীনতাকে স্বার্থ লোভ, হিংসা বা খারাপ উদ্দেশ্যের কাছে হারিয়ে সেই সিদ্ধান্ত বা কাজ করছি। আমার দৃষ্টিতে স্বাধীনতা হচ্ছে কোনো পরম ইচ্ছা পূরণ করতে সিদ্ধান্ত নেওয়া বা কাজ করার ক্ষমতা, যাতে কোনো স্বার্থ, লোভ, হিংসা বা এ-জাতীয় কোনো খারাপ উদ্দেশ্য মিশ্রিত থাকবে না।

দুর্দান্ত এক জয়ের পরে ইরানের বাঁধভাঙা উল্লাস
ছবি: রয়টার্স

আমার উদ্দেশ্য শিক্ষা ও খেলাধুলার মাধ্যমে মানুষকে এ স্বাধীনতার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া। যখন মানুষ স্বাধীন হবে, তারপর আসবে মহত্ত্ব। মহত্ত্ব একটা খুবই সুস্বাদু বিষয়। আমরা এ স্বাদ গ্রহণ করতে পারি নিজের অন্তরে। স্বাধীনতা অর্জন করে, নিজের স্বার্থ বলি দিয়ে যখন অপরের কল্যাণে কিছু করতে শিখব, তখনই আমরা মহত্ত্বের স্বাদ গ্রহণ করতে পারব। আমার দৃষ্টিতে মহত্ত্ব একটা আসক্তি। একবার কেউ মহত্ত্বের স্বাদ গ্রহণ করতে পারলে সহজে সেটা ছাড়া যায় না। এটা স্বর্গের মতো অনুভূতি জাগায় মনের ভেতর। একবার এই স্বাদ পেলে বারবার সেই স্বাদ খুঁজতে মন চাইবে যে কীভাবে আরও পেতে পারি। আর কাকে বলব সোনার মানুষ তাদের ছাড়া, যারা এ মহত্ত্ব খোঁজে? এভাবে আমরা দেশের মানুষকে সঠিক মানুষে রূপান্তরের চেষ্টা করতে পারি। আর মানুষ সঠিক হলে তখন দেশ তো এমনিতেই সোনার বাংলা হয়ে যাবে। দেশের বাহ্যিক পরিকাঠামো ঠিক করতে হয়তো অনেক সময় লাগবে এবং সেগুলোর জন্যও অনেক অনেক পরিকল্পনার দরকার আছে। আমরা এ রকম মহৎ হতে শিখলে এই দুঃখ, দুর্দশা ও অনিশ্চয়তার দেশ মুহূর্তেই সুখ-শান্তি, হাসি-আনন্দের দেশে পরিণত হবে।

আর কী চাই? সোনার বাংলা গড়তে চাই। কীভাবে গঠিত হবে? সোনার বাংলা গঠিত হবে সুন্দর মানুষ দিয়ে। আমরা আদর্শবান না হলে বাংলা কোনো দিনও সোনার হবে না। আমারও লক্ষ্য যেহেতু বাংলাদেশকে সোনার বাংলায় রূপান্তর করা, তাহলে এ ক্ষেত্রে প্রাথমিক কাজ হচ্ছে সৎ মানুষে পরিণত করা। সেটা কীভাবে সম্ভব? আমাকে অনেকই বলে, বাঙালি জাতিকে ঠিক করা অসম্ভব। আমি ভেবেছি, এসব লোক বাঙালি জাতির সৃষ্টিকর্তা নন যে এত বড় ঔদ্ধত্যপূর্ণ কথা বলবে। এদের কোনো অধিকার নেই এটা বলার। চেষ্টা এবং সৃষ্টিকর্তা চাইলে অবশ্যই সম্ভব। যা-ই হোক, তাহলে আমরা কীভাবে এই দেশের মানুষকে সৎ মানুষে রূপান্তরের চেষ্টা করতে পারি? উত্তর হচ্ছে, সঠিক শিক্ষা ও খেলাধুলার মাধ্যমে।

এতক্ষণে যা লিখেছি, জানি না এগুলো শুধু স্বপ্ন কি না। তবে আমরা সবাই স্বপ্ন দেখি, ঘুমের ঘোরে স্বপ্ন দেখি আবার জেগে জেগে স্বপ্ন দেখি। জেগে জেগে যারা স্বপ্ন দেখে এবং সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপান্তরিত করতে শতভাগ চেষ্টা করে, তারাই জীবনে সার্থক হয়। আমি স্বপ্ন দেখি সোনার বাংলার, আমি বিশ্বাস করি ভিশনারি নতুন প্রজন্মদের।

অসাধারণ বাই সাইকেল কিকে রিচার্লিসনের দুই নম্বর গোল
রয়টার্স

একবার আমার সুইডিশ শাশুড়ি আমাকে বলেছিলেন, ‘তোমরা তো সাঁতার এবং ফুটবল খেলে বিশ্বকে চমকে দিতে পারো, কারণ বাংলাদেশ মানেই বর্ষা, আর বর্ষা মানেই সাঁতার কাটা আর ফুটবল খেলা, তারপরও এই খেলার প্রতি তোমাদের মমতা নেই কেন, কারণটি কী?’ আমার বলার কিছু ছিল না, তবে লেগেছিল হৃদয়ে সেদিন কথাটি আর সেই থেকে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছি কীভাবে খেলাধুলায় বাংলাকে বিশ্বদরবারে তুলে ধরা যায়!

একজন আগাগোড়া ফুটবলপ্রেমী হিসেবে আমার সবচেয়ে কষ্টের জায়গাটি হলো বাংলাদেশ ফুটবল। লজ্জাজনক হলেও সত্যি, গত দুই দশকে ফুটবল র‍্যাঙ্কিংয়ে আমাদের অবস্থান তলানিতে। অথচ এ ফুটবল নিয়ে আমাদের একটি স্বর্ণালি অতীত ছিল। একসময় বাঙালির রক্তের সঙ্গে মিশে ছিল ফুটবল। বৃহত্তর এশিয়া পর্যায়ে সফল না হলেও অন্তত দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবলে আমাদের দাপট ছিল। সাফ ফুটবল কিংবা দক্ষিণ এশিয়া গেমসে অন্তত শিরোপা জয় করার যোগ্যতা ছিল এবং জয়ও করেছি। তখন বাংলাদেশ ফুটবলে ছিল অসংখ্য তারকা খেলোয়াড়।

স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে বাঙালির একমাত্র বিনোদনের মাধ্যম ছিল ফুটবল। আর এই ফুটবলের গোড়াপত্তন করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধু নিজেও তরুণ বয়সে অসাধারণ ফুটবল খেলতেন। ১৯৭২ সালে ফুটবল ফেডারেশন গঠনের পর তিনি নিজে ব্যক্তিগত উদ্যোগে স্বাধীন বাংলায় প্রথম ফুটবল ম্যাচের আয়োজন করেন। তিনি নিজে সেই ম্যাচ মাঠে বসে থেকে উপভোগ করেছেন। এ ছাড়া বাংলাদেশের সঙ্গে ছোট-বড় সব দলের খেলা দেখতে মাঠে উপস্থিত থাকতেন। বাংলাদেশ দল কোনো আন্তর্জাতিক সফরে গেলে ধানমন্ডি ৩২-এ অবশ্যই বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করে যেতেন। শেষবার ১৯৭৫ সালে মালয়েশিয়ার মারদেকা ফুটবল টুর্নামেন্ট খেলতে যাওয়ার সময় জাতীয় দলের খেলোয়াড়দের বলেছিলেন, ‘ভালো করে খেলবি, স্বাধীন দেশের মানসম্মান যেন থাকে। আমি কিন্তু খেলাধুলার সব খবর রাখছি।’

বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে মাঠে নামছেন রোনালদো। ক্যারিয়ারের সায়াহ্নে থাকা এই ফুটবলারকে ঘিরেই বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন দেখছে পর্তুগাল। তাই পর্তুগালের পতাকার পাশাপাশি রাখা হয়েছে রোনালদোর ছবিও। যেখানে লেখা—কিংবদন্তি।
ছবি: এএফপি

ফুটবল নিয়ে আমাদের গৌরবোজ্জ্বল অতীত থাকলেও বর্তমান সময়ে পরিস্থিতি তার ঠিক বিপরীত। সবকিছু যেন কোথায় হারিয়ে গেছে। স্কুল পর্যায়ের ফুটবল থেকে শুরু করে জাতীয় পর্যায়ের ফুটবল—কোনো কিছুই যেন ঠিক নেই। মাঠ পর্যায় থেকে দক্ষ খেলোয়াড় বাছাই এবং তৈরি করার কোনো বালাই যেন। দেশসেরা ক্লাবগুলোর আগের মতো জৌলুশ নেই। নিম্নমানের খেলায় ফুটবল মাঠে দর্শকের কোনো উপস্থিতি নেই।

সত্যি বলতে, আমাদের ফুটবলপ্রতিষ্ঠান ‘বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন’-এ গলদ রয়েছে। অন্যদিকে, ঐতিহ্যবাহী ক্লাবগুলোর বেহাল দশার কথা বলতে লজ্জা হয়। যেখানে ফুটবল নিয়ে আলোচনা হবে, মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ হবে, পরিকল্পনা হবে, সেখানে অবৈধ ক্যাসিনো নিয়ে মত্ত থাকে। দুঃখের বিষয় এই যে বঙ্গবন্ধু যে ক্লাবের হয়ে ফুটবল মাঠ মাতিয়েছেন, সেই ঐতিহ্যবাহী ‘ওয়ান্ডারার্স ক্লাব’ অবৈধ কর্মকাণ্ড থেকে রেহাই পায়নি।

বাংলাদেশ ফুটবলের এই ক্রান্তিলগ্নে আমাদের কিছু অগ্রদূত প্রয়োজন। কিন্তু হতাশার বিষয় এই যে আমি এবং আমার বন্ধু যখন ফুটবল নিয়ে সংগ্রাম করছি, ঠিক তেমন একটি সময় অনেকে ফুটবল কর্মকাণ্ড নিয়ে হাসি-তামাশা এবং ট্রল করে পৈশাচিক আনন্দ উপভোগ করছে। কেউ যদি কোনো অন্যায় করে, তার জন্য যেমন সমালোচনার প্রয়োজন আছে; তেমনি ভালো কাজ করলে অবশ্যই সেটা প্রশংসার দাবিদার। যদি কারও কোনো ব্যক্তিগত ক্ষোভ থাকে, তাহলে হয়তো উৎসাহ না দিতে পারেন। কিন্তু দয়া করে আমাদের নিরুৎসাহিত করবেন না। আমরা ফুটবল নিয়ে যে কাজগুলো করছি, এসব কাজ লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে নয়, নিঃসন্দেহে এটা আমাদের ফুটবলের জন্য সামান্য হলেও উপকার বয়ে আনবে।

আমিও হুমায়ূন আহমেদের মতো বলতে চাই, ‘সবাই বলে আমাদের শারীরিক যোগ্যতা নেই। আমাদের দম থাকে না। তার মানে কী? ফুটবল খেলতে হলে দৈত্য হতে হবে? আর আমাদের দম না থাকলে কাদের থাকবে? সবাই বলে আমাদের খেলোয়াড়রা ফুটবলের আধুনিক কৌশল জানেন না। কৌশল জানেন না, শিখবেন। আমরা কি বেকুবের জাত যে শিখতেও পারব না?’

এবার আছে জমাটি ফুটবল মৌসুমের প্রতিশ্রুতি
ছবি: প্রথম আলো

মনে কি পড়ে সেদিনের কথা, আমি লিখেছি—আজও চোখে ভাসে সেদিনের স্মৃতি, আজও মনে পড়ে সেদিনের কথা। গায়েতা, ইতালির একটি ছোট্ট শহর। নিরিবিলি এ শহর ঘিরে আছে ফুল আর ফল, সঙ্গে তার চারপাশে সাগরের জলের স্পর্শ এবং কিছু পুরোনো ঐতিহ্য। যার আদলে তৈরি হয়েছে মনোরম এক মানববাসস্থান। সারা দিন ঘোরাঘুরি ও ছেলের টেনিস খেলার শেষে সাগরপাড়ে চলাফেরা সঙ্গে লবণাক্ত নীল জলে সাঁতরে বেড়িয়ে সত্যিই এক আনন্দদায়ক সময় কেটে যাচ্ছে ইতালির শহরতলি গায়েতায়।

প্রতিদিন সকালে আমার ছেলে টেনিস খেলোয়াড় জনাথনকে নিয়ে টেনিস কোটের দিকে যাওয়ার সময় সাগরপাড়ে কিশোর বয়সী একটি ছেলেকে ফুটবল নিয়ে তার ব্যস্ততার দৃশ্য দেখতে দেখতে যাই। যখন ফিরছি, তখনো তাকে ও তার সঙ্গে আরও বন্ধুর বল নিয়ে দৌড়াদৌড়িতে চোখ আটকে যায়! একদিন সন্ধ্যায় সাগরে সাঁতার কেটে ফেরার পথে এগিয়ে গেলাম। ছেলেটির সঙ্গে কথা হলো।

সে জানাল, তার নাম লুকা। বয়স ১৪ বছর। সারা দিন ফুটবল খেলছে সাগরপাড়ে মনের আনন্দে। নানা ধরনের টেকনিক স্কিলসের ওপর চলছে তার প্রশিক্ষণ ও শিক্ষা। যেন সেই ‘লার্নিং ফর্ম লার্নার কনসেপ্ট’-এর এক মনোরম দৃশ্য। লুকা এবং তার বন্ধুরা স্বপ্ন দেখছে একদিন বিশ্বকাপ ফুটবল খেলার, তাই প্রতিদিন তারা সাগরপাড়ে স্কুল শেষে ফুটবল খেলে।

লুকার এক বন্ধুকে এই শহরের সাগরপাড় থেকে এভাবে করেই খুঁজে পেয়েছিল ফুটবল জহুরিরা। এখন সে ইতালির জাতীয় দলে খেলছে। অনুশীলন ও অধ্যবসায় একটি মানুষকে নিখুঁত করে তোলে, জানায় এই লুকা ও তার বন্ধুরা। তারা তাদের স্বপ্নের সঙ্গে এমন গতিতে ছুটে চলছে, যেন স্বপ্ন আর স্বপ্ন থাকবে না, তা সত্যি হয়ে যাবে।

মালদ্বীপের আক্রমণের মুখে বেসামাল বাংলাদেশের অধিনায়ক মামুনুল ইসলাম। কাল এমন অগোছালো ফুটবল খেলেই মালদ্বীপের কাছে ৩-১ গোলে হেরেছে বাংলাদেশ। টানা দুই হারে বিদায়ঘণ্টাও বেজেছে মামুনুলদের
ছবি: সাফসুজুকিকাপ ওয়েবসাইট

সে আশাবাদী যে তাদেরও কপাল খুলে যাবে। সাগরের পাড়ে, নদীর ধারে, রাস্তায় চলতে চলতে খেলতে খেলতে কবে একদিন শোনা যাবে, লুকা নামের একটি রত্নের নাম, যা ছড়িয়ে পড়বে ফুটবল গ্যালারিজুড়ে, এমনকি দেশ ও দেশান্তরে।

এমনটিই ঘটে এবং ঘটেওছিল। সুইডেনের বিয়োন বোর্গ, ইব্রাহিমোভিচ, আর্জেন্টিনার মেসি, স্পেনের রাউল, আরও কত নাম, যাঁরা ভালোবেসেছিল তাঁদের হৃদয় দিয়ে এই খেলাকে এবং তাঁদের ধ্যানে, জ্ঞানে, মনে ও প্রাণে একটিই চিন্তা ছিল, তা হলো ফুটবল দিয়েই একদিন জয় করবেন বিশ্বকে, সত্যি করবেন বুনে চলা স্বপ্নকে।

পৃথিবীর সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানব বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবনী খুঁজলে একই শিক্ষা বা জ্বলন্ত উদাহরণ দেখতে পাই। তা হলো মা–বাবা ছাড়া সেই রাখাল বালকটি ভালোবাসার সেতু তৈরি করেছিলেন মহান স্রষ্টার সঙ্গে খুবই অল্প বয়সে। শেষে হলেন সারা বিশ্বের এক অনুকরণীয় ব্যক্তি মুসলিম নেতা এবং মহান আল্লাহর প্রেরিত রাসুল।

পৃথিবীর যা চিরকল্যাণকর, তার সবকিছুর মূলে যাঁরা রয়েছেন, তাঁদের কেউই রাজপরিবারের সন্তান ছিলেন না, তাঁরা সাধারণ পরিবারের সন্তান এবং তাঁরাই অসম্ভবকে সম্ভব করে দেখিয়েছেন। তাই আমি বিশ্বাস করি বাংলাদেশকে, বাংলার মানুষকে, তারাও করতে পারবে অসম্ভবকে সম্ভব।

মানুষ নিজের সবকিছু বিক্রয় করে দেয় ৫ দশমিক ৫ কিলোমিটার জার্মানির পতাকা বানাতে, যে দেশের মানুষ আর্জেন্টিনা আর ব্রাজিলের সমর্থনে মারামারি করে ১০ জন আহত হয় এবং এমনকি আর্জেন্টিনা দলের পরাজয়ের দুঃখে নিজের জীবনকে উৎসর্গ করতে পারে, সেই দেশ কেন বিশ্বকাপ ফুটবল খেলায় নিজেদের দল পাঠানোর স্বপ্ন দেখতে পারবে না?

আমাদের দেশের সন্তানেরা বিশ্বকাপ একবারে আনতে না পারলেও আমরা অংশগ্রহণ করে আশপাশের অনেক দেশের চেয়েও ভালো করতে পারব এবং মাথা উঁচু করতে পারব। পারব সোনার বাংলার পতাকাকে তুলে ধরতে সারা বিশ্বের মাঝে, যেন ‘বল বীর বল চির উন্নত মম শির...’।

বাংলাদেশ একদিন বিশ্বকাপ ফুটবলে অংশগ্রহণ করবে। খেলার শুরুতে সবাই জাতীয় সংগীত গাইতে থাকবে। তখন আনমনে আমি দাঁড়িয়ে যাব, গায়ের লোমগুলো হয়তো দাঁড়িয়ে যাবে, আমার দু’চোখ বেয়ে পড়বে শত আনন্দের অশ্রুধারা, বুকে হাত রেখে তাল মিলিয়ে গাইতে থাকব-‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি!’