বাংলাদেশকে নিয়ে আফসোসের একটা জায়গা সব সময় থেকে যায়

দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বৃহস্পতিবার সকালে শোভাযাত্রা বের করে নারায়ণগঞ্জ মহানগর ও জেলা বিএনপি। শহরের ২ নম্বর রেলগেট এলাকায় তাদের বাধা দেয় পুলিশ
ছবি: দিনার মাহমুদ

দল-বিরোধী দল, বিদ্রোহী দল, পক্ষ-বিপক্ষ—এসব সমাজসংসারে থাকে। আলোচনা-সমালোচনা এটা একটা ভূখণ্ডের অংশ। বইয়ের যেমন এপিঠ-ওপিঠ আছে, তেমনি সংসারে এ-দল ও-দল থাকে, থাকতে হয়। এসব শুধু সমাজরাষ্ট্রকে শুদ্ধ এবং সুন্দর রাখার জন্য। কিন্তু বাংলাদেশের বিষয়টা একটু আলাদা। একটু ভিন্ন।

বাংলাদেশে এ দল যদি একটা আলোচনা সমাবেশের আয়োজন করে, তাহলে ও দলের গা জ্বলে। আবার ও দল সমাবেশ করলে এ দলেরও গা জ্বলে। ফলে শুরু হয় সংঘাত। হয় রক্তপাত। আলোচনা শোনা হয় না। তার আগে অগ্নিপাত।

আলোচনা করে সমাধানের পথ খুঁজে বের করা অতি সহজ। সেই আলোচনা টুকু করা হয় না। এক দিকে ক্ষমতাসীন দলের তীক্ষ্ণ চোখ। আরেক দিকে বিরোধী দলের বিরোধিতা। সব মিলিয়ে ঘটে সহিংসতা। এ বলে মানি না, ও বলে মানব না। মাঝপথে অসহায় জনতা।

এই যে আন্দোলন করে মানুষ মরছে, আহত হচ্ছে, এ দায়ভার কে নেবে? কেউ নিচ্ছে কি? ক্ষমতার দাপটে যিনি চেয়ারে বসে আছেন, তিনি একবার তাকাচ্ছেন আহত, নিহত পরিবারের স্বজনদের দিকে। তাকাচ্ছে না! তাকাবেও না।

যার ক্ষতি হচ্ছে, যে জীবন দিচ্ছে, তার পরিবার বোঝে, তাদের কতটা কষ্ট, কতটা বেদনা। শাওন নামের একজন প্রাণ হারাল। তার প্রাঙ্গণে মির্জা ফখরুল সাহেব গিয়ে প্রতিবাদী কণ্ঠে বক্তব্য দিলেন, ইতিবাচক কথা বললেন, সে কথার মূল্য কি বাংলাদেশে আছে? আবার দেখা যাবে, ক্ষমতাসীন দলের আরেকজন তার উল্টোটা বলে উঠল, এভাবে আলোচনা-সমালোচনা চলতেই থাকবে, কিন্তু শাওন নামের মানুষটি জীবন নিথর হয়ে পড়ে থাকবে মাটির ভেতরে। আলোচনা সমাবেশ আবার হবে। আবার আরেকজন শাওনের মৃত্যু হবে। এভাবে চলতে থাকবে, সমাধান আর হবে না। যিনি চেয়ারে বসে আছেন, তিনি চেয়ারেই বসে থাকবেন। যিনি স্বজন হারানো বেদনায় অশ্রু ফেলছেন, তিনি ফেলতেই থাকবেন। বিচার কই! বিচারক কই। এই হলো আমাদের বাংলাদেশের পরিস্থিতি।

একজন মানুষ। শুরুতে একটা ছোট্ট বাচ্চা হয়ে মমতাময়ীর কোলজুড়ে আসে। কত সাধনা, কত স্বপ্ন, নিয়ে মমতাময়ী সন্তানকে মানুষ করে। কত ত্যাগের বিনিময়ে একটা ছোট্ট বাচ্চা বড় হয়ে ওঠে। হয়ে ওঠে একজন মানুষ। সেই মানুষটি রাষ্ট্রের দায়িত্ব নিতে গিয়ে রক্তপাত হয়, মারা যায়, সে কি মমতাময়ী মেনে নিতে পারে? পারে না। বাংলাদেশে আন্দোলন মানে রক্ত নিয়ে খেলা। এটা বোধ হয় একমাত্র বাংলাদেশে হয়ে থাকে। এটা যে কতটা নির্বোধের কাজ, কতটা অশনিসংকেত আগামী প্রজন্মের জন্য, সেটা কে ভাবে। এসব দৃশ্য দেখে প্রকৃতি কেবল নির্বাক।