ছুটি শেষে কেন বিষাদ নামে
পাশ্চাত্যে, বিশেষ করে সুইডেনে, মানুষ প্রতিবছর সাধারণত পাঁচ থেকে সাত সপ্তাহ ছুটি পান। পুরো বছরে সপ্তাহে পাঁচ দিন, প্রতিদিন প্রায় আট ঘণ্টা কাজ করতে হয়। শীতকাল অবশ্য কিছু কঠিন মুহূর্ত নিয়ে আসে, তবুও কাজ সময়মতো শেষ করতেই হয়।
গ্রীষ্মে, যখন দিন দীর্ঘ আর সূর্যের আলো বেশি সময় থাকে, তখন অনেকেই একসঙ্গে তিন–চার সপ্তাহের ছুটি নেন। ছুটি শুরুর আগে প্রত্যাশা থাকে—শান্তি, আনন্দ, নতুন অভিজ্ঞতা। কিন্তু বাস্তবতা অনেক সময় সেই প্রত্যাশার সঙ্গে মেলে না।
ছুটির আনন্দ কখনো বিষাদে পরিণত হয়—টাকা ফুরিয়ে যাওয়া, পরিকল্পনা ভেস্তে যাওয়া বা প্রত্যাশা পূরণ না হওয়া থেকে। এর ফলে মানসিক ক্লান্তি, হতাশা ও নেতিবাচক চিন্তা ফিরে আসে, যা আবার কাজে মনোযোগে প্রভাব ফেলে।
গবেষণায় দেখা গেছে, ছুটি-পরবর্তী হতাশা সাধারণত এক–দুই সপ্তাহ স্থায়ী হয়। প্রত্যাশা ও বাস্তবতার ব্যবধান যত বেশি, মানসিক প্রভাব তত গভীর হয়। অর্থনৈতিক চাপ এ অবস্থা আরও বাড়িয়ে দিতে পারে—যা মনোযোগ, উৎপাদনশীলতা ও সৃজনশীলতা কমিয়ে দেয় এবং আবার হতাশার চক্রে ফিরিয়ে আনে।
কেন ছুটির পর ক্লান্তি আসে
ঘুমের রুটিন ব্যাহত হওয়া, বিশ্রাম থেকে হঠাৎ দায়িত্বে ফেরা, কাজের প্রত্যাশার চাপ, শারীরিক কার্যকলাপের অভাব কিংবা অস্বাস্থ্যকর খাবার—সবই ছুটি শেষে উদ্যম কমিয়ে দেয়। দীর্ঘ বিশ্রামের পর মস্তিষ্ককে কাজে ফিরতে মানসিক পুনঃপ্রশিক্ষণ প্রয়োজন।
দূর পরবাসে জীবনের গল্প, নানা আয়োজনের খবর, ভিডিও, ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]
করণীয়
কাজ শুরু হওয়ার অন্তত এক–দুই দিন আগে ঘুম–জাগরণের স্বাভাবিক রুটিনে ফিরতে হবে। প্রথম দিনে ভারী কাজ না নিয়ে ছোট লক্ষ্য দিয়ে শুরু করা উচিত। হালকা ব্যায়াম, পুষ্টিকর খাবার, পর্যাপ্ত জলপান, সংক্ষিপ্ত বিরতি ও মাইন্ডফুলনেস ক্লান্তি কমায়। ছোট সৃজনশীল কাজ বা পরিবেশ পরিবর্তন মস্তিষ্ক সক্রিয় রাখে।
বাংলাদেশ–সুইডেন তুলনা
বাংলাদেশে নাগরিকদের ভ্রমণ ও অবকাশের সুযোগ এখনো সীমিত। বড় শহরে কিছু আধুনিক সড়ক ও পাবলিক ট্রান্সপোর্ট থাকলেও গ্রামীণ এলাকায় সুবিধা অপর্যাপ্ত। অর্থনৈতিক সামর্থ্যের অভাবে অনেকেই মাত্র কয়েক দিনের ছুটি নিতে পারেন, যেখানে সুইডেনে নাগরিকেরা আগে থেকেই পরিকল্পিত দীর্ঘ ছুটি কাটাতে পারেন।
অবকাশকেন্দ্র, পর্যটন স্থান ও সামাজিক অনুষ্ঠান সুইডেনে সহজলভ্য; বাংলাদেশে তা সীমিত। রাষ্ট্রের পরিকল্পনাকারীরা অবকাঠামো বিনিয়োগ, পর্যটন উন্নয়ন ও সামাজিক নীতির উদ্যোগ নিচ্ছেন, তবে সুইডেনের মতো ছুটির সংস্কৃতি গড়তে সময় লাগবে।
সম্ভাবনা ও অগ্রগতির পথ
যদিও কিছু ভাগ্যবান নাগরিক বাংলাদেশে ছুটি উপভোগের সুযোগ পান, তবু সীমিত সময়। অপর্যাপ্ত পরিবহন ও অর্থনৈতিক চাপের কারণে অধিকাংশ মানুষের জন্য তা চ্যালেঞ্জিং।
এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রয়োজন রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবায় বিনিয়োগ, শিল্প-কারখানার উন্নয়ন এবং শহর–গ্রামের পরিবহন নেটওয়ার্ক আধুনিকায়ন। পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে নিরাপত্তা ও সেবার মান বাড়াতে হবে।
সবচেয়ে জরুরি হলো সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাত, নাগরিক সমাজ ও সাধারণ মানুষের সম্মিলিত অংশগ্রহণ। একটি দেশ তখনই টেকসই উন্নয়নের পথে এগোতে পারে, যখন নাগরিকেরা নিজেকে সেই উন্নয়নের অংশীদার মনে করেন। আর তখনই ছুটি বা অবকাশের আনন্দ শুধু একটি শ্রেণির জন্য নয়, সবার জন্য সমানভাবে উপভোগ্য হবে।