ক্ষণস্থায়ী জীবনের নিঃশেষিত অধ্যায়

অলংকরণ: মাসুক হেলাল

চাঁদ থেকে স্পেসশিপের তোলা পৃথিবীর ছবিটা দেখে কয়েক দিন আগে বুকের ভেতরটা কেমন জানি বেশ কেঁপে উঠল। সেটা মাঝেমধ্যেই, এবং অনেকক্ষণ ধরে হলো!  চিন্তায় ডুব দিলে ভাবনায় নাড়া দিল—মহাকাশের বিশালতার মধ্যে এতো ছোট্ট এ পৃথিবীতে আমাদের কী ক্ষুদ্র অস্তিত্ব! গোলাকার এ পৃথিবীতেই বৈচিত্র্যময় ভিন্ন ভিন্ন সব জীবন। এখানে সবাই শুধু ছুটছি।

একদিন জীবন শেষ হয়ে যায়, তখন ছোটাছুটিও শেষ। আত্মীয়-পরিজন, শুভাকাঙ্ক্ষীরা সযত্নে মৃতকে মাটির নিচে চাপা দেন, আর এতেই জীবনের এ অধ্যায়টিও শেষ হয়। অন্যদিকে অগণিত মানুষের মৃত্যু অন্যদের কাছে অজানাই রয়ে যায়। কেউ নিখোঁজ, কেউ অপহৃত, কেউ গুম, কেউ পানিতে ডুবে, কেউ ভয়ানক চোরাবালিতে, কেউ মাটির নিচে গুহায়, কেউ অজানা বিষাক্ত গ্যাসের কবলে পড়ে—এ রকমটা ভিন্ন ভিন্ন কারণে আপনজনের অজান্তে চিরতরে হারিয়ে যান। নিস্তেজ দেহ মাটিতে মিশে হয় শেষের পরিসমাপ্তি। ক্ষণস্থায়ী জীবনের নিঃশেষিত অধ্যায়।

শিশুতে নতুন জীবন, আর কালের পরিক্রমায় অন্যরা একে একে মৃত। যে জননী আমাকে এই পৃথিবীতে এনেছেন, তাঁকে হারিয়েছি ঠিক ১৮ বছর আগে। আগস্ট মাস, ২০০৫। অবশ্য আমার সঙ্গে শেষ দেখাটা আরও দুই বছর আগে। আমি এই মৃত্যু দেখিনি, তিনি আমার কাছে জীবন্ত। হে আমার প্রতিপালক! আমার পিতা-মাতার প্রতি দয়া করো, যেমন তাঁরা দয়া–মায়া, মমতাসহ শৈশবে আমাকে প্রতিপালন করেছিলেন। মা শান্তিতে থাকুন।

সকল মাতা–পিতা শান্তিতে থাকুন।২০ বছর আগে দেশান্তরি হয়ে পৃথিবীর এক শহর থেকে অন্য শহরে দৌড়াদৌড়িতে মায়ার অনুভূতিগুলো আজ বেশ ভোঁতা হয়ে গেছে। স্মৃতির পাতায়ও বেশ ধুলা জমে যাচ্ছে।

আগের ভেজা চোখগুলো এখন শুকনা, আর স্মৃতির পাতায় বিশেষ দিনগুলো আবছা। দুঃখ বা সুখের বিশেষ দিনগুলো ভালো মনে থাকে না। হয়তো ভুলে থাকতে চাই বলে। এখন কি তবে আমাদের হারিয়ে যাবার সময়? হতে পারে। তবু থেমে যেতে নেই—জীবনের মানে সচল থাকা। ক্ষণস্থায়ী জীবনের নিঃশেষিত অধ্যায়ের জন্য বসে থাকতে নেই।