নিদ্রাহারা রাত
চোখ বন্ধ করলেই ভেতরে এক অদ্ভুত পর্দা নড়ে ওঠে,
সেখানে সিনেমার মতো চলে—
বিচ্ছিন্ন, বেখাপ্পা দৃশ্য।
একবার দেখি—আমি হাঁটছি শূন্য স্টেশনে,
ট্রেন নেই, লোক নেই, শুধু হুইসেলের শব্দ—
দূর কোথা থেকে যেন ভেসে আসছে।
তারপরই ঝাঁপিয়ে পড়ে অন্য এক ছবি—
অথচ সেটা আমার নয়—
কারও বিয়ে, সাজানো গেট, রঙিন কাগজের ঝালরের বাহার,
ধুমধাম খাওয়াদাওয়া, বেলুনে বাচ্চাদের চিৎকার,
কিন্তু সেখানে আমার মুখ নেই,
আমার কণ্ঠস্বর নেই।
চাদরটা বারবার গুটিয়ে যায় পায়ের নিচে,
বালিশে মাথা রাখি, যেন জ্যান্ত জংলি গাছের কাঁটা,
মাথা সরালেই মনে হয় আগুন।
এপাশ-ওপাশ ঘোরাই—
কখনো শরীর হয়ে যায় নদীর ঢেউ,
কখনো পাথরের দেয়াল,
যেখানে কোনো ফাঁক নেই, বাতাস ঢোকে না।
ঘড়ির কাঁটা একটার পর একটা গিলে খায় সময়কে—
দুটো বাজে, তিনটে, চারটে...
কিন্তু রাত একই রকম নীরব, নিথর।
জানালার কাচে ভোরের আলো পড়ে না,
শুধু আসে নিঃশব্দ নিশ্বাস,
যেন ঘন অন্ধকারটা কী আরামের ঘুম ঘুমোচ্ছে!
আমি নই।
হঠাৎ মনে পড়ে যায়—
কেউ আমাকে ডাকছে, নাম ধরে,
কিন্তু ঘুরে দেখি—কেউ নেই।
মনে পড়ে— ফেলে আসা ভুলগুলো,
অপ্রকাশিত ভালোবাসা,
অকারণ ভয়,
মাহবুবের কাছে লিখে না-ফেলা একখানা চিঠি।
রাত তখন হয়ে ওঠে আয়নার মতো,
যেখানে আমি নিজেকে দেখি না,
শুধু দেখি আমার প্রতিবিম্ব—
চোখে আলো নেই, মুখে ভাষা নেই,
তবু আমাকে তাড়া করে, কে যেন।
আমার জন্য এই নিদ্রাহারা রাত
আসলে এক যুদ্ধক্ষেত্র—
শত্রু নেই, মিত্র নেই,
আমি একাই ছটফট করছি,
সমস্ত শক্তি দিয়ে বালিশের সাথে লড়াকু সৈনিকের মতো লড়ছি।
এলোমেলো ভাবছি, অসংলগ্ন যত সব ভাবনা।
এর মাঝেই এক ফাঁকে এঁকে ফেলেছি একখানা রাঙা ছবি, যা বোঝা যায় না,
আরও লিখেছি একটা ভাঙা কবিতা, কিন্তু সেটাও পড়া যায় না—
সব মিলিয়ে নিদ্রাহারা রাতটা কেবল এক আশাহীন অশান্তি।
‘দূর পরবাস’-এ জীবনের গল্প, নানা আয়োজনের খবর, ভিডিও, ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]