গ্লোবাল বাংলাদেশ সাপোর্ট নেটওয়ার্ক: বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ স্থিতিশীলতায় প্রবাসীদের ভূমিকা

মধ্যপ্রাচ্যে প্রবাসী কর্মীদের প্রচণ্ড তাপের মধ্যে কাজ করতে হয় বলে মস্তিষ্ক থেকে শুরু করে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হয়প্রতীকী ছবি: রয়টার্স

সম্প্রতি বাংলাদেশে সংঘটিত ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে। গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে দেশের জনগণ ঐক্যবদ্ধভাবে যে আন্দোলন করেছেন, তা তাঁদের রক্ত, আত্মত্যাগ এবং সাহসিকতার উজ্জ্বল উদাহরণ। নোবেল বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জনগণের বিশাল সমর্থন পেয়েছে। ইতিমধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নতুন তিনজন উপদেষ্টা শপথ গ্রহণের পর ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে পক্ষে থাকা ছাত্র-জনতা মধ্যে কিছু বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে দেশের জনগণের পাশাপাশি প্রবাসী বাংলাদেশিদের সুসংগঠিত সমর্থন ও পরামর্শ দেশের অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

লাখো প্রবাসী বাংলাদেশি মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ, আমেরিকা, কানাডা, অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশে বসবাস করেন এবং দেশের অর্থনীতি, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেন। তাঁদের পাঠানো প্রবাসী আয় দেশের অর্থনীতির ভিত্তিকে শক্তিশালী করে তোলে এবং তাঁদের বৈশ্বিক সংযোগ দেশের ভাবমূর্তি উন্নত করতে সহায়ক। দেশের স্থিতিশীলতা ও গণতান্ত্রিক কাঠামো রক্ষা করার লক্ষ্যে ‘গ্লোবাল বাংলাদেশ সাপোর্ট নেটওয়ার্ক’ গঠন সময়োপযোগী এবং অত্যন্ত প্রয়োজনীয় বলে মনে করি, যা বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জন্য বিবেচনাযোগ্য।

আরও পড়ুন

গ্লোবাল বাংলাদেশ সাপোর্ট নেটওয়ার্কের প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব

প্রবাসী বাংলাদেশিরা শুধু অর্থনৈতিক সহযোগিতায় সীমাবদ্ধ থাকেন না বরং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে দেশের সুনাম এবং মানবাধিকার রক্ষার পক্ষে নিজেদের কণ্ঠ তুলে ধরেন। তাঁদের মধ্যে সমন্বয় গড়ে তোলা এবং সংগঠিতভাবে দেশের স্বার্থে কাজ করার জন্য একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গঠন করা হলে দেশের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে।

বাংলাদেশের বর্তমান উপদেষ্টা পরিষদে মন্ত্রীর পদমর্যাদা রয়েছে, ‘গ্লোবাল বাংলাদেশ সাপোর্ট নেটওয়ার্ক’ মন্ত্রী পদ ছাড়া এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শুধু পরামর্শক হিসেবে কাজ করলেও দেশের জন্য এটি অমূল্য অবদান রাখতে পারবে।

গ্লোবাল বাংলাদেশ সাপোর্ট নেটওয়ার্কের কাঠামো গঠনপ্রক্রিয়া—

১. সংগঠিত কেন্দ্রীয় পরিষদ: গ্লোবাল বাংলাদেশ সাপোর্ট নেটওয়ার্ক একটি সংগঠিত কেন্দ্রীয় কাঠামোয় স্থাপন করা যেতে পারে, যেখানে বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা থাকবেন। এ পরিষদ কার্যক্রম তদারক ও সমন্বয়ের মাধ্যমে অভিন্ন লক্ষ্য অর্জনে কাজ করবে।

২. বিভিন্ন কমিটি ও কার্যকর শাখা: নেটওয়ার্কে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, মানবাধিকার ইত্যাদি বিষয়ে বিশেষায়িত কমিটি থাকতে পারে। প্রতিটি কমিটি নির্দিষ্ট বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ ও পরামর্শ প্রস্তুত করে সরকারের কাছে প্রেরণ করবে।

৩. দায়িত্বশীল পর্যবেক্ষণ ও কার্যকর যোগাযোগ: গ্লোবাল বাংলাদেশ সাপোর্ট নেটওয়ার্ক নিজ নিজ অঞ্চলে বাংলাদেশ সম্পর্কিত প্রাসঙ্গিক বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ করবে এবং সরকারের প্রতি সমর্থন বা তদারক রাখার ক্ষেত্রে গঠনমূলক পরামর্শ প্রদান করবে।

গ্লোবাল বাংলাদেশ সাপোর্ট নেটওয়ার্ক কীভাবে কাজ করবে

১. আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও সুনাম বৃদ্ধি: প্রবাসী বাংলাদেশিরা তাঁদের অভিজ্ঞতা ও বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গি কাজে লাগিয়ে দেশের ইমেজ উন্নয়ন এবং বিদেশি সহযোগিতা আদায়ে সহায়তা করবেন। নেটওয়ার্ক গঠিত হলে তাঁরা আন্তর্জাতিক মঞ্চে বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষায় সক্রিয় ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবেন। এবং বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সব ধরনের অপপ্রচার রুখতে কার্যকর ভূমিকা রাখবেন।

২. গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও মানবাধিকার রক্ষায় সহায়তা: গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের বিষয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরতে প্রবাসীরা পরিচিতির মাধ্যমে সমর্থন আদায় করতে পারবেন। এ নেটওয়ার্ক সুশাসন প্রতিষ্ঠায় তদারক ও পরামর্শ দিয়ে সরকারকে সঠিক পথে এগিয়ে রাখতে ভূমিকা রাখবে।

৩. প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে সমন্বয়: পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে থাকা প্রবাসীদের মধ্যে যোগাযোগ, তথ্য আদান-প্রদান এবং একত্রভাবে কাজ করার মাধ্যমে একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা যাবে। এই নেটওয়ার্ক প্রবাসীদের মধ্যে একাত্মতা সৃষ্টি করবে এবং দেশের জন্য তাঁদের অবদান বাড়াবে।

৪. অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও বিনিয়োগে সহায়তা: নেটওয়ার্কের মাধ্যমে প্রবাসীদের মধ্যে বিনিয়োগ ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধির মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করা যাবে। নেটওয়ার্কের উদ্যোগে প্রবাসীদের দেশে বিনিয়োগে উৎসাহিত করা হবে, যা দেশের দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে সহায়তা করবে।

বর্তমান এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যেহেতু কোনো রাজনৈতিক সরকার নয় বরং একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হিসেবে নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি ও প্রয়োজনীয় সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়নে নিয়োজিত, তাই তারা ক্ষমতা জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে হস্তান্তর করতে অঙ্গীকারবদ্ধ। নির্বাচিত সরকার তৈরি হওয়া না পর্যন্ত এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রয়োজনীয় দায়িত্ব পালন করবে। তবে এটি একটি  সময় সাপেক্ষে ব্যাপার। এ প্রেক্ষাপটে, গ্লোবাল বাংলাদেশ সাপোর্ট নেটওয়ার্ক গঠন একটি কার্যকর পদক্ষেপ হতে পারে, যা কেবল প্রবাসী বাংলাদেশিদের পরামর্শ প্রদানের ভূমিকা নির্ধারণ করবে না বরং তাঁদের অভিজ্ঞতা, সম্পদ ও আন্তরিকতাকে কাজে লাগিয়ে দেশের উন্নয়ন ও গণতন্ত্র রক্ষায় সংগঠিত একটি শক্তিশালী কাঠামো গড়ে তুলবে।

বিশেষ করে, প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা ও তাঁদের নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাবনা এ নেটওয়ার্কের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অগ্রাধিকার হতে পারে। এ নেটওয়ার্ক প্রবাসীদের সংগঠিতভাবে দেশের গণতন্ত্র, উন্নয়ন এবং ভবিষ্যতের সংকট মোকাবিলায় অবদান রাখার সুযোগ করে দেবে। ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানের মতো ঐতিহাসিক পরিবর্তনে প্রবাসীদের অবদানের স্বীকৃতি ও তাঁদের সম্পৃক্ততাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে এবং ভোটাধিকারের মতো মৌলিক অধিকারে প্রবাসীদের অধিকার নিশ্চিত করতে গ্লোবাল বাংলাদেশ সাপোর্ট নেটওয়ার্ক একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। এবং আগামী দিনে জনগণের নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে কাজ করে তারা দেশের উন্নয়নকে গতিশীল রাখতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।