আগামীর বাংলাদেশে রাষ্ট্র সংস্কারে প্রবাসী শিক্ষার্থীর ভাবনা-১
শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ সরকারের বিদায়ের মধ্য দিয়ে নতুন পথে হাঁটছে বাংলাদেশ। প্রায় সাড়ে ১৫ বছরের রাষ্ট্র পরিচালনা করা শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এ দেশের ছাত্রসমাজ থেকে শুরু করে আপামর জনতার গণ-আন্দোলনকে অনেকে বিশ্বের অনেক বিপ্লবের সঙ্গে তুলনা করছেন। ৫ আগস্ট বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মুক্তিকামী মানুষের কাছে যুগ যুগ ধরে দিনটি হয়ে থাকবে এক অনুপ্রেরণার প্রতিশব্দ। শেখ হাসিনার মতো একজন ক্ষমতাধর সরকারপ্রধানকে এক বিপ্লবের মধ্য দিয়ে এভাবে ক্ষমতাচ্যুত করাটা ছিল ইতিহাসের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের মধ্যে একটি।
শেখ হাসিনা ২০০৯ সালে জয়ের পর দেশ শাসনের ভার পান। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের পর থেকে শুরু করে ক্ষমতা ছেড়ে যাওয়ার আগপর্যন্ত পুরো দেশকে একক হাতে তিনি শাসন করেছেন। পুরো সরকারব্যবস্থা ও প্রশাসন ছিল এক ব্যক্তিনির্ভর। এ কারণে কলাবাগানের তেঁতুলতলার খেলার মাঠে নির্মাণকাজ বন্ধ করতে সৈয়দা রত্না ও তাঁর কিশোর ছেলে যখন আন্দোলন চালাচ্ছিলেন, তখন তাঁদের সম্পূর্ণরূপে তাকিয়ে থাকতে হয়েছিল শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তের প্রতি। অথচ এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেওয়ার এখতিয়ার ছিল সম্পূর্ণভাবে সিটি করপোরেশনের বা বড়জোর স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের। গত ১৫ বছরে ক্যানসার সেলের মতো দুর্নীতি দেশের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছেয়ে গিয়েছিল। সংসদ সদস্য, মন্ত্রী এমনকি ইউনিয়ন পর্যায়ের অনেক রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে সরকারি কর্মকর্তা, কর্মচারী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অনেকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দেশে সম্পদের পাহাড় গড়ার অভিযোগ আছে।
আওয়ামী লীগের নেতারা দাবি করেন, তাঁদের রাজনৈতিক আদর্শ দাঁড়িয়ে আছে গণতন্ত্র, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সুবিচার, বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও ধর্মনিরপেক্ষতা—এ চারের ওপর ভিত্তি করে। অথচ গত সাড়ে ১৫ বছর যেভাবে আমাদের দেশ পরিচালিত হয়েছে, সেখানে কী এ চারটি বিষয়ের কোনোটির সত্যিকার প্রতিফলন দেখেছি? এ ছাড়া এ সময়ে যে পরিমাণ গুম, খুন ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ আছে, সেটাও নজিরবিহীন। ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের মাধ্যমে আমাদের কণ্ঠ রোধ করে রাখা হয়েছিল। সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের যে উন্নয়নের গল্প শোনানো হতো, সেখানেও শুভংকরের ফাঁকি ছিল। আমার দৃষ্টিতে তাই শেখ হাসিনা এমন একজন রাষ্ট্রপ্রধান ছিলেন, যাকে হিটলার, মুসোলিনি, নিকোলেই চসেস্কু বা এনভার হোক্সার তুলনা দেওয়া যায় না। শেখ হাসিনার শাসনকালকে বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করার জন্য আরও একাডেমিক গবেষণা প্রয়োজন।
সাড়ে ১৫ বছর এক হযবরল কায়দায় আমাদের রাষ্ট্র পরিচালিত হয়েছে, যেখান থেকে বের হয়ে আসতে হলে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রয়োজন। রক্তের মধ্য দিয়ে এক বিপ্লব সূচিত হয়েছে ঠিকই, তবে পাল্টা বিপ্লব হলে আমাদের সবার আশা ও আকাঙ্ক্ষাকে নিমেষে ধূলিসাৎ করে দিতে পারে। বাইরের বিভিন্ন দেশের লোলুপ দৃষ্টিও পড়তে পারে আমাদের ওপর, অথচ বিষয়টিকে আমরা গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছি না। পদত্যাগ করে শেখ হাসিনা চলে যাওয়ার পর থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতির অবনতি দেখেছি। বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা হয়েছে। অনেক মানুষের মৃত্যু ঘটেছে। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় থানা থেকে লুট হয়েছে আগ্নেয়াস্ত্র। এটাও ঠিক যে মানুষের ভেতর জমে থাকা পুঞ্জীভূত ক্ষোভকে কোনোভাবে অস্বীকার করার সুযোগ নেই। তারপরও এ পরিস্থিতি কোনোভাবে আকাঙ্ক্ষিত নয়।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হয়েছেন, যা আমাদের জন্য গর্বের। এই অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ কত দিন থাকবে, সেটা নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলছেন। ২০০১ সাল থেকে শুরু করে ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকার শাসনকার্য পরিচালনা করেছে। এ সরকারেরও বিভিন্ন ব্যর্থতা ছিল। এ ছাড়া গত কয়েক দিনে স্থানীয় পর্যায়ে বিরোধী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অনেক নেতা-কর্মী ও অতি উৎসাহী সমর্থকদের মধ্যে আমরা যে ধরনের কার্যকলাপ লক্ষ করেছি, একে ঘিরেও জনমানুষের মধ্যে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে যে সত্যি কি এ বিপ্লব আমাদের মধ্যে দীর্ঘ মেয়াদে আশার প্রতীক হয়ে থাকতে সমর্থ হবে কি না।
আমার অভিমত হচ্ছে, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে সরকার প্রাথমিক পর্যায়ে ছয় মাস ক্ষমতায় থাকতে পারে। এ মুহূর্তে রাষ্ট্র সংস্কার না করা হলে কোনোভাবে এ বিপ্লব আমাদের মধ্যে সফলতা বয়ে আনবে না। বিএনপি, জামায়াতে ইসলামি বা অন্য যেসব রাজনৈতিক দল এ মুহূর্তে মাঠের রাজনীতিতে রয়েছে, তারা এ মুহূর্তে রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য কতটুকু সক্ষমতার পরিচয় দেবে, সেটা নিয়ে আমার প্রশ্ন রয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে ছয় মাস অতিক্রম করার পর ড. ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের অন্য সদস্য ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক, এমনকি এ দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পরামর্শের ভিত্তিতে হ্যাঁ/না ভোটের আয়োজন করতে পারেন এবং তাঁর সরকারের মেয়াদকে দুই বছর বাড়িয়ে নিতে পারেন। এতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের সুসংগঠিত করার সুযোগ পাবে এবং মানুষের কাছে ভবিষ্যতের বাংলাদেশ নিয়ে তাদের পরিকল্পনা তুলে ধরতে পারবে। এরপর নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গণতান্ত্রিক যে কেউ ক্ষমতায় আসতে পারে জনগণের রায়ের ভিত্তিতে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর অভ্যন্তরে গণতন্ত্র নিশ্চিত করা প্রয়োজন এবং দুই থেকে আড়াই বছর তাঁরা নিজেদের দলকে পুনর্গঠনের জন্য কাজ করতে পারে। গত ১৫ বছর দেশের কোনো রাজনৈতিক দল স্বাভাবিক ধারায় রাজনীতি করতে পারেনি। এ লম্বা সময় নির্বাচন না হওয়ায় আমরা জানি না বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে বিদ্যমান রাজনৈতিক দলগুলো নিয়ে কী ধরনের মনোভাব রয়েছে। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে গণতন্ত্রকে সমুন্নত রাখতে একটি শক্তিশালী বিরোধী দলের প্রয়োজন। এসব কারণে আমি মনে করি, তিন থেকে ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন করার চেয়ে বেশি ভালো হয়, অন্তত দুই বছর অপেক্ষা করলে, যাতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের মধ্যে গণতান্ত্রিক কাঠামোকে সুসংহত করতে পারে। ডিজিটাল যুগে সরকারের পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলো আরও স্মার্ট হবে। তারা সোশ্যাল মিডিয়াকে জনগণের কাছাকাছি পৌঁছানোর একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ব্যবহার করতে পারে।
গত সাড়ে ১৫ বছর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সরকার থেকে যাঁরা বিভিন্নভাবে সুবিধা নিয়েছেন বা ওয়ান-ইলেভেন সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কাউকে অন্তর্বর্তী সরকারের অন্তর্ভুক্ত করা যাবে না। আমার মতে, বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি একটি তত্ত্বাবধায়ক বা নির্বাচনকালীন সরকার বেশি প্রয়োজন। এ সরকারকে হতে হবে নির্দলীয়। এ সরকারের ফরম্যাট নিয়ে এ মুহূর্তে আলোচনা জরুরি।
আরও একটি বিষয়, যদি অন্তর্বর্তী সরকার দীর্ঘমেয়াদি না হয় এবং আগামী তিন থেকে ছয় মাসের মধ্যে যদি নির্বাচনের আয়োজন করা হয়, তাহলে বর্তমান প্রশাসনে যাঁরা আছেন, তাঁদের অনেকে ভাবতে পারেন যে নির্বাচনের মাধ্যমে কয়েক মাস পর একটি নির্দিষ্ট দল ক্ষমতায় আসবে এবং তাদের আনুকূল্য পাওয়ার জন্য সেই দলের রাজনৈতিক নেতাদের পছন্দ অনুযায়ী লোক প্রশাসনে নিয়োগ দেওয়া উচিত। এতে করে ১৫ বছর ধরে প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে থাকা জঞ্জালের সাফ হবে না। শুধু একটি দলের থেকে অন্য আরেকটি দলের হাতে ক্ষমতার পরিবর্তন ছাড়া আর কোনো কিছু অর্জিত হবে না।
সংবিধানের সংশোধন করা এ মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। প্রায় ১৯ কোটি মানুষের দেশ বাংলাদেশ। এত জনবহুল একটি দেশে কীভাবে এককেন্দ্রিক শাসনব্যবস্থা চলতে পারে, সেটা আমার মাথায় আসে না। জনসংখ্যার বণ্টন ও নাগরিক সুবিধাপ্রাপ্তির বিষয়কে সামনে রেখে বাংলাদেশকে কয়েকটি প্রদেশে ভাগ করা প্রয়োজন। এসব প্রদেশ চাইলে ছোট পরিসরে পার্লামেন্ট রাখতে পারে এবং নাগরিকদের প্রয়োজনীয়তার ভিত্তিতে আইন পাস করতে পারে। স্থানীয় সরকারব্যবস্থাকে সাংবিধানিক ফ্রেমের ভেতর দিয়ে আরও শক্তিশালী করতে হবে। গ্রাম-সরকারব্যবস্থা আবার ফিরিয়ে আনতে হবে। কিছু মন্ত্রণালয় ও সরকারি কার্যালয়ের সদর দপ্তরকে ঢাকার বাইরে নিয়ে যেতে হবে। ঢাকার বাইরেও সব প্রয়োজনীয় নাগরিক সেবা বিকশিত করতে হবে।
অনেকে দাবি করেন যে মন্ত্রিপরিষদ-শাসিত সরকারের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্র বা ফ্রান্সের মতো রাষ্ট্রপতির শাসন আমাদের দেশের জন্য বেশি উপযোগী। আমার মতে, রাষ্ট্রপতির শাসনের চেয়ে সংসদীয় গণতন্ত্র বেশি কার্যকর। যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, কানাডা, জাপান, আয়ারল্যান্ড, নরওয়ে, সুইডেন, ভারত, ফিনল্যান্ডের মতো দেশগুলো তা অনুসরণ করে। এ ধরনের শাসনব্যবস্থায় সরকারের বিভিন্ন অংশের মধ্যে সমন্বয় সাধন করা সহজ হয়। তা ছাড়া মন্ত্রিপরিষদ তার কাজের জন্য আইনসভার কাছে দায়বদ্ধ থাকে বলে জবাবদিহি নিশ্চিত করা যায়। রাষ্ট্রপতি-শাসিত শাসনব্যবস্থায় অনেক সময় রাষ্ট্রপতি তাঁর কাজের জন্য আইনসভার কাছে দায়ী থাকেন না বলে অনেক সময় তিনি স্বেচ্ছাচারী হয়ে উঠতে পারেন। আইনসভার কাছে তিনি দায়বদ্ধ নন এবং অনেক সময় আইনসভার সদস্যদের সঙ্গে তাঁর মতের বিরোধ দেখা দেয়। ফলে কার্যত এ সরকার দুর্বল হয়ে উঠতে পারে। ওয়েস্টমিনিস্টর বা সিনেট যাকে আমরা অনুসরণ করি না কেন, মূল বিষয় হচ্ছে চেক অ্যান্ড ব্যালান্স নিশ্চিত করা। চেক অ্যান্ড ব্যালান্স নিশ্চিত না হলে একটি দেশের গণতন্ত্র ভঙ্গুর হয়ে পড়ে।
বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভা বেশি ফলপ্রসূ। এতে করে প্রথম ধাপে পাস হওয়া কোনো আইন যদি পরবর্তী সময় কোনো কারণে বাতিল অথবা সংশোধনের প্রয়োজন হয়, তাহলে দ্বিতীয় ধাপে এ আইন পাস হওয়ার আগে এ নিয়ে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা বিভিন্ন আঙ্গিকে আলোচনা করতে পারবেন। রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা আরও বৃদ্ধি করতে হবে। দুর্ভাগ্যবশত, কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু হওয়ার পর যখন আমাদের দেশে এক অচলাবস্থা তৈরি হয়েছিল, তখন আমরা রাষ্ট্রপতিকে সে অর্থে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে দেখিনি।
রাজনীতিতে পরিবারতন্ত্র নিয়ে আমার ব্যক্তিগতভাবে কোনো সমস্যা নেই। ভারতে কংগ্রেসের নেতৃত্ব নেহরু পরিবারের হাতে। পাকিস্তানে পিপলস পার্টির নেতৃত্ব জুলফিকার আলী ভুট্টো পরিবারের হাতে। উপমহাদেশের রাজনীতিতে পরিবারতন্ত্রের বড় প্রভাব রয়েছে। রাহুল গান্ধীর বর্তমান নেতৃত্ব নিয়ে কংগ্রেসের নেতা-কর্মী বা সমর্থকদের এ মুহূর্তে বড় কোনো প্রশ্ন নেই। মূল বিষয় হচ্ছে যোগ্যতা। একজন ব্যক্তি তিনবারের বেশি যাতে প্রধানমন্ত্রী ও চারবারের বেশি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হতে না পারেন, সে বিষয়ে আইন পাস করতে হবে।
একমুখী শিক্ষাব্যবস্থা
দেশের সব নাগরিকের জন্য একমুখী শিক্ষাব্যবস্থা চালু করতে হবে। একাডেমিক শিক্ষার পাশাপাশি কারিগরি শিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে। শুধু থিওরির দিকে মনোনিবেশ না করে অর্জিত শিক্ষা ও অভিজ্ঞতাকে কীভাবে ব্যবহারিক ক্ষেত্রে কাজে লাগানো যায়, সেদিকে সচেষ্ট হতে হবে। এইচএসসি পাসের পর নারী ও পুরুষ সবাইকে বাধ্যতামূলকভাবে এক বছর সামরিক প্রশিক্ষণ নিতে হবে। রাষ্ট্রের সব নাগরিককে বাধ্যতামূলকভাবে ইংরেজি শিখতে হবে। ইংরেজির সঙ্গে ফরাসি, আরবি, জার্মান, রুশ, কোরিয়ান, চাইনিজ, জাপানিজ, ইতালিয়ান, স্প্যানিশ, ডাচ, পর্তুগিজ ও ইতালিয়ানের মতো একটি ভাষা শিখতে হবে। একই সঙ্গে কম্পিউটার রিলেটেড কোনো একটি বিষয় যেমন প্রোগ্রামিং, ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্ট, থ্রি-ডি মডেলিং, গ্রাফিকস ডিজাইন, ডেটাবেজের মতো কোনো একটি বিষয় শেখা বাধ্যতামূলক করতে হবে। ঢাকা বা চট্টগ্রামের অভিজাত পাড়ার শিক্ষার্থীরা যে ধরনের শিক্ষা-সুবিধা লাভ করে, দূরবর্তী উপজেলা ভূরুঙ্গামারীর একজন শিক্ষার্থীও যাতে ওই শিক্ষা লাভ করতে পারে, সেদিকে রাষ্ট্রের মনোযোগী হতে হবে। শিক্ষার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের বৈষম্য চলবে না। শিক্ষার্থীদের মধ্যে সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে হবে। আমি মনে করি, দেশের প্রত্যেক নাগরিকের একটি নির্দিষ্ট পর্যায়ে ইতিহাস, বিজ্ঞান ও গণিতের জ্ঞান থাকতে হবে।
প্রশাসন থেকে শুরু করে রাষ্ট্রের সব ক্ষেত্রে স্বচ্ছ ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। দুর্নীতির প্রতি জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করতে হবে। প্রয়োজন বোধে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
বাংলাদেশের অর্থনীতিকে সংস্কার করতে হবে। এআই ও ন্যানোটেকনোলজির এ যুগে সময়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে ঢেলে সাজানো খুবই জরুরি। আমরা এখনো আমদানি-নির্ভর রাষ্ট্র। বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা আসে তৈরি পোশাক, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স ও বিভিন্ন কৃষিপণ্য থেকে। রপ্তানি খাতকে আরও প্রসারিত করতে হবে। দেশে বৈদেশিক বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। নতুন করে আরও শিল্পকারখানা স্থাপন করতে হবে। দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব প্রদান করতে হবে। ইউরোপ ও লাতিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশে আমাদের শ্রমবাজার সম্প্রসারণ করতে হবে। বিমানবন্দরে প্রবাসীদের ভিআইপি মর্যাদা দিতে হবে। দূতাবাসগুলোর কর্মদক্ষতা বাড়াতে হবে এবং তারা যাতে যথার্থভাবে প্রবাসীদের বিভিন্ন সেবা দিতে পারেন, সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।
মুদ্রাস্ফীতির হার কমিয়ে আনতে হবে। নিয়মিত বাজার মনিটরিং করতে হবে। কৃষকেরা যেন পণ্যের ন্যায্য দাম পান, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। বিভিন্ন সিন্ডিকেট যাতে বাজার নিয়ন্ত্রণে প্রতিবন্ধক না হয়, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। চলমান বেকার সমস্যা দূর করার জন্য কর্মসংস্থান বাড়ানো প্রয়োজন। গণপরিবহন থেকে শুরু করে দেশের রাস্তাঘাট ও যোগাযোগব্যবস্থার উন্নতি সাধন করা অত্যাবশ্যক। চলবে...
*লেখক: রাকিব হাসান রাফি, শিক্ষার্থী, ইউনিভার্সিটি অব নোভা গোরিছা, স্লোভেনিয়া
*দূর পরবাসে ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]