যুক্তরাজ্য আড্ডার দুর্গাপূজা
আড্ডার দুর্গাপূজা পড়ল এবার পঞ্চম বছরে, যা হবে আগামী ২০ থেকে ২৩ অক্টোবর পর্যন্ত। আড্ডা যুক্তরাজ্যে প্রথম পূজা যা কলকাতার মতো প্যান্ডেলে হয়। লন্ডনের পশ্চিম শহরতলির ব্লাউ অঞ্চলে আড্ডার যাত্রা শুরু ২০১৩ সালে পাঁচজন অন্তরঙ্গ বন্ধুকে নিয়ে। তাঁরা প্রতি সপ্তাহান্তে ফুটবল খেলতে যেত। তাঁরা এর প্রযোজনীয়তা অনুভব করেন স্থানীয় বাঙালিদের মধ্য বাংলা ভাষা, সংস্কৃতি ও হিতৈষিতার স্বার্থে। ২০১৩ সালে আড্ডা প্রথমবার সরস্বতীপূজা, ২০১৬ সালে কালীপূজা ও ২০১৯ সাল থেকে দুর্গাপূজার আয়োজন করে আসছে।
প্যান্ডেল ছাড়াও আড্ডা বহির্বিশ্বে বাঙালির কৃষ্টি ও স্থাপত্য দেখানোর জন্য অভিনব উদ্যোগ নেয়, যাকে আড্ডা গেট অফ জয় বলা হয়। বাংলার শিল্পীরা দরজা বানান, যা বসানো হয় পূজার প্যান্ডেলের মুখে। এবারের আকর্ষণ থাকছে চন্দননগরের আলোকসজ্জা—বানাচ্ছেন চন্দননগরের শিল্পী অমিত সাউ, যা ইতিমধ্যেই স্থানীয় জনমানসে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
আড্ডার দুর্গাপূজা দুই বাংলার মিলনক্ষেত্র, যেখানে দুই বাংলার মানুষ একই সঙ্গে ও একই উদ্দীপনার সঙ্গে যোগ দেন। আড্ডার অন্যতম আকর্ষণ দুই বাংলার খাওয়াদাওয়া একই সঙ্গে পাওয়া।
পুরান ঢাকা থেকে স্বামী–স্ত্রী জুটি রাজীব আলিমুন ও নাসরিন সুপ্তির সংস্থা ‘It's Food Hall’ এবারে এনেছেন নানা লোভনীয় পদের সম্ভার। অন্যতম প্রধান আকর্ষণ ঢাকার কাচ্চি বিরিয়ানি, ইলিশ পোলাও, ভুনা মাংস, ঢাকার মোগলাই পরোটা। সঙ্গে থাকছে পদ্মার ইলিশের বিশাল আয়োজন। দর্শনার্থীরা চাইলে আস্ত ইলিশের শর্ষে বা ভাজার অর্ডার করতে পারেন যা তিন-চারজন মিলে খাওয়া যেতে পারে। বাঙাল–ঘটির মৎস্যপ্রীতির কথা মাথায় রেখে পাওয়া যাবে গলদা চিংড়ি, রুই, ভেটকি বা কোরাল, রূপচাঁদা ইত্যাদি মাছও থাকছে। এর সঙ্গে থাকবে বিশাল মিষ্টির সম্ভার। ময়মনসিংহের মুক্তগাছার মণ্ডা, টাঙ্গাইলের পাঁচানি বাজারের চমচম, যশোরের গুড়ের সন্দেশ। এর সঙ্গে থাকবে রসগোল্লা, পাটিসাপটা ও নলেন গুড়ের নানা মিষ্টি।
কলকাতার বাগবাজারের শর্মিষ্ঠা রায় থাকছেন পশ্চিমবঙ্গের খাবারদাবারের সম্ভার নিয়ে ‘Sharmis kitchen’–এ। তাঁর পরিবেশনায় থাকবে কলকাতার বিখ্যাত মাটন বিরিয়ানি। কলকাতার ‘street food’ চিকেন-মাটন রোল, মোগলাই পরোটা এবং চিকেন ভর্তা। এছাড়া থাকবে মাটন কষা, বাসন্তী পোলাও এবং লুচি-কড়াইশুঁটির কচুরি তরকারি। মিষ্টির ক্ষেত্রে থাকছে কলকাতার রাবড়ি, বর্ধমানের সীতাভোগ ও মিহিদানা, মালদহের ক্ষীরকদম ক্ষীরের পাটিসাপটা।
আড্ডা তার পূজায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্যও বিখ্যাত। বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলের লোকসংস্কৃতি এখানে দেখা যায়। সিলেটের রাধারমণ ও শাহ আবদুল করিমের গান, ময়মনসিংহ গীতিকা, ঢাকা-ফরিদপুর-বরিশালের ভাটিয়ালি, উত্তর বঙ্গের ভাওয়াইয়ার আসর বসে। পশ্চিমবঙ্গের বীরভূমের বাউল, মানভূমের ঝুমুর গান এবং লোকনৃত্য দর্শনার্থীদের আকর্ষণ করে। সব মিলিয়ে চার দিনের জমজমাট উৎসবে, খাদ্যে ও সংস্কৃতিতে মানুষ মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়।
আড্ডায় গতবছর ২০ হাজার মানুষ সমাগমের পর এ বছর আরও দর্শনার্থী আসছেন। কেবল যুক্তরাজ্যই নয়, পার্শ্ববর্তী নানা দেশ থেকেও। আড্ডার আরও একটি বিখ্যাত আকর্ষণ হলো বিজয়া সম্মিলনী যা বিজয়ার আড্ডা নামে খ্যাত। এবারে বিজয়ার আড্ডায় থাকছেন অনুপম রায় ও ব্যান্ড, যা অনুষ্ঠিত হবে ৪ নভেম্বর। যার সব টিকিট ইতিমধ্যেই বিক্রি হয়ে গেছে।
আড্ডা এ বাংলার ঐতিহ্য পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে বদ্ধপরিকর। ছোটদের জন্য নানা অনুষ্ঠান, যেমন বসে আঁকো প্রতিযোগিতা, ঢাক ও গান–নাচের আসর থাকে। এ বছরে শিশুদের জন্য থাকছে বাংলার গ্রামীণ মেলা; যেখানে থাকছে চড়কি, নাগরদোলা, ভাজাভুজি ও নানা জিনিস—যাতে ছোটদের জন্য পূজাকে চিত্তাকর্ষক ও স্মরণীয় করা যায়।
*লেখক: জেষ্ঠ্য পরিচালক, ইউপ্রো টেকনোলজি