ফিলিপাইনে সিম্পোজিয়াম ও সাংস্কৃতিক আয়োজনে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন
ম্যানিলার বাংলাদেশ দূতাবাস উদ্যোগে এ বছর ব্যতিক্রমধর্মী আয়োজনের মাধ্যমে ফিলিপাইনে ‘শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ২০২৪’ পালিত হয়েছে। দেশটির শীর্ষস্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ফিলিপাইন বিশ্ববিদ্যালয় ও জাতিসংঘ ফিলিপাইন অফিসের সঙ্গে সম্মিলিতভাবে দূতাবাস একটি সিম্পোজিয়াম ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করে। ফিলিপাইন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিষয়ের অনুষদ, বিভিন্ন দূতাবাসের কূটনীতিক, আন্তর্জাতিক ও বহুজাতিক সংস্থার প্রতিনিধি, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী, মিডিয়া কর্মীসহ প্রায় আড়াই শ অতিথি ওই সিম্পোজিয়ামে অংশগ্রহণ করেন।
আজ বুধবার স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় ফিলিপাইন বিশ্ববিদ্যালয়ের দিলিমান ক্যাম্পাসের নিসমেড অডিটরিয়ামে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ‘Multilingual Education: An Essential Strategy for Transforming Education Systems’শীর্ষক সিম্পোজিয়ামের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের দিলিমান ক্যাম্পাস উপাচার্য এডগারদো কার্লো ভিসতান; সমাজবিজ্ঞান ও দর্শন অনুষদের ডিন রুথ লুস্টেরো রিকো; ফিলিপাইনে নিযুক্ত জাতিসংঘ আবাসিক সমন্বয়ক গুস্তাভ গঞ্জালেস এবং ফিলিপাইনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এফ এম বোরহান উদ্দিন। সিম্পোজিয়ামে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ফিলিপাইন বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ অক এডুকেশনের প্রধান ডিনা জোয়ানা ওকাম্পো। সিম্পোজিয়াম শেষে ধন্যবাদ বক্তব্য প্রদান করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাতত্ত্ব বিভাগের প্রধান সহযোগী অধ্যাপক মারিয়া ক্রিস্টিনা।
রাষ্ট্রদূত এফ এম বোরহান উদ্দিন তাঁর বক্তব্যে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনে বাংলাদেশের নেতৃত্ব দেওয়ার ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন এবং এর তাৎপর্য বর্ণনা করেন।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপক ডিনা ওকাম্পো তাঁর প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে বলেন, বহুভাষাবাদ সবার জন্য উন্মুক্ত এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক একটি সমাজ তৈরি করে। তাঁর বক্তব্য সমর্থনে বেশ কিছু গবেষণাপত্রের সূত্র উল্লেখ করে তিনি পরিবার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিশুদের জন্য অভিন্ন ভাষা ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ভাষা ও সংস্কৃতি সংরক্ষণের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দেশের অর্থনীতি, সমাজ ও শিক্ষানীতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে তিনি উল্লেখ করেন।
গুস্তাভ গঞ্জালেস তাঁর বার্তায় বলেন, বহুভাষাভিত্তিক এবং বহুসাংস্কৃতিক সমাজ সুসংরক্ষিত ভাষা কর্তৃক নানা প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়। সবাইকে সমান সুযোগ নিশ্চিতকরণ ও সমতাভিত্তিক শিক্ষার জন্য মাতৃভাষা ও বহুভাষাবাদ একটি ভিত্তিপ্রস্তরস্বরূপ।
উপাচার্য এডগারদো কার্লো ভিসতান তাঁর শুভেচ্ছা বক্তব্যে বলেন, একুশে ফেব্রুয়ারিকে জাতিসংঘ কর্তৃক আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি প্রদানের মাধ্যমে বাংলাদেশের সাধারণ জনগণের মনের আবেগ প্রতিফলিত হয়েছে। তিনি বাংলাদেশ দূতাবাস, জাতিসংঘ অফিস এবং ফিলিপাইন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাতত্ত্ব বিভাগকে যৌথভাবে এ ধরনের সিম্পোজিয়াম আয়োজনের জন্য সাধুবাদ জানান।
সিম্পোজিয়াম শেষে একটি মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক পরিবেশনা অনুষ্ঠিত হয়। প্রথমেই বিভিন্ন দেশের শিল্পীদের ১২টি ভাষায় সমবেতভাবে গাওয়া একুশের অমর গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ প্রদর্শিত হয়। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের জনপ্রিয় নাচের দল স্থানীয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও আঞ্চলিক ভাষায় পরিবেশিত গানের তালে তালে মনোমুগ্ধকর নৃত্য পরিবেশনা করে। অনুষ্ঠান শেষে অতিথিদের সম্মানে বাংলাদেশি খাবারের এক বিশেষ মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন করা হয়।
এর আগে সকাল সাতটায় বাংলাদেশ হাউসে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও অর্ধনমিত করেন রাষ্ট্রদূত এফ এম বোরহান উদ্দিন। দূতাবাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন। এরপর এক মিনিট নীরবতা পালনের মাধ্যমে মহান ভাষা আন্দোলনের শহীদদের আত্মত্যাগের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়। নীরবতা পালন শেষে রাষ্ট্রদূত এফ এম বোরহান উদ্দিনের নেতৃত্বে বাংলাদেশ হাউস প্রাঙ্গণে স্থাপিত অস্থায়ী শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে উপস্থিত সবাই ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। এরপর দিবসটি উপলক্ষে দেওয়া রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বাণী পাঠ করা হয়। বিজ্ঞপ্তি