চবি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন অব কানাডা ইনকের উদ্যোগে বিজয় দিবস ও বিশ্ববিদ্যালয় দিবস পালিত
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন অব কানাডা ইনকের উদ্যোগে বাংলাদেশের মহান বিজয় দিবস ও ৫৮তম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা ও মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়েছে। গত ১৭ ডিসেম্বর কানাডার প্রাণকেন্দ্র টরন্টো শহরের ডেনফোর্থে হোপ ইউনাইটেড চার্চে এ আয়োজন হয়।
ঘড়ির কাঁটা সন্ধ্যা ছয়টায় ছুঁই ছুঁই। এরই মধ্যে অনুষ্ঠান হল কানায় কানায় ভরে ওঠে। কেউবা অনেক দিনের পুরোনো সাথিকে খুঁজে পেয়ে খোশগল্পে মশগুল আর কেউ কেউ পাশের চায়ের স্টল থেকে চা কিনে আড্ডায় বিভোর। সব দিক দেখে সত্যিই মনে হচ্ছিল, এ যেন এক বিজয় উৎসব। বিজয় অন্যায়ের বিরুদ্ধে সত্যের, বিজয় সব অপশক্তির বিরুদ্ধে শুভ শক্তির। দূরদূরান্ত থেকে অনেকে এসেছেন।
সন্ধ্যা ঠিক সাড়ে ছয়টায় অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক খোরশেদ খান সভা শুরু করেন এবং অনুষ্ঠান সঞ্চালনার দায়িত্ব নেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শফিউদ্দিন আহমেদ। সভার শুরুতেই অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক তাপস ভট্টাচার্য ‘লেনথ অ্যাকনলেজমেন্ট’ পড়েন, এর পরপরই বাংলাদেশ ও কানাডার জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের প্রথম পর্ব শুরু হয়।
সভাপতি শফিউদ্দিন শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন। প্রধান আলোচক হিসেবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের সম্মানিত শিক্ষক অধ্যাপক শাহাদাত হোসেন তাঁর দীর্ঘদিনের গবেষণার অংশ হিসেবে ‘বাংলাদেশের বিজয় দিবসে আমেরিকার ভূমিকা’ নিয়ে খুবই চমৎকার ও গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করেন। অন্যদের মধ্যে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক সুজিত দত্ত, অ্যাসোসিয়েশনের কার্যনির্বাহী কমিটির সম্মানিত সদস্য শামসুদ্দিন খালেদ সেলিম।
সবশেষে অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ইলিয়াস মিয়া। অনুষ্ঠানে আগত অতিথিদের অভ্যর্থনায় সার্বিক সহযোগীতায় ছিলেন সংগঠনের অ্যাডভাইজরি কমিটির সম্মানিত সদস্য সরওয়ার সেলিম।
দ্বিতীয় পর্বে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৮তম দিবস উপলক্ষে সহকারী সম্পাদক হুমায়ুন কবিরের তত্ত্বাবধানে কার্যকরী কমিটির সদস্যরা কেক কাটার মাধ্যমে দিবসটি পালন করেন। সাধারণ সম্পাদক খোরশেদ খান সভার দ্বিতীয় পর্বের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।
তৃতীয় পর্বে, কার্যকরী কমিটির সদস্য অনুপ সেনগুপ্তের সংক্ষিপ্ত বক্তব্যের মাধ্যমে সাংস্কৃতিক সম্পাদক কাজী আবদুল বাসিত, সহসাধারণ সম্পাদক কানিজ ফাতেমার যৌথ পরিচালনায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুরু হয়।
এ পর্বে অংশগ্রহণ করেন অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য ও তাঁদের পরিবারের সদস্যরা। নৃত্যে অংশ নেন রাওমিলা চৌধুরী। একক ও যৌথভাবে অনেকগুলো দেশাত্মবোধক, বিজয়ের গান ও কবিতা আবৃত্তি করেন মুক্তা পাল, সেলিনা সরওয়ার, মাহমুদা খাতুন, মেহজাবিন বিনতে ওসমান, সীমা নাথ, শাহিদা জুলেখা, ফেরদৌসি সুলতানা, রওশন আখতার, জহিরুল হক চৗধুরী, সিরাজী খান, মুনিরা সুলতানা মিলি, তিথি ভট্টাচার্য, মারজিয়া চৌধুরী, অহনা চক্রবর্তী ভোর, আর্য নাথ, কানিজ ফাতেমা ও কাজী বাসিত। সবকিছু ছাপিয়ে উল্লেখযোগ্য ছিল আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম তিথি ভট্টাচার্যের গান, সঙ্গে তাঁকে তবলায় সংগত করে তারই ছোট ভাই সৌরভ ভট্টাচার্য, কবিতায় আরেক ছোটমণি অহনা চক্রবর্তী, গিটার এবং গানে আর্য নাথ, সঙ্গে ছোট্ট বিশাল পাল এবং আনান্দ চৌধুরী এসেছিল কপালে বাংলাদেশের পতাকা বেঁধে। এই সব দেখে সত্যিই অন্তর জুড়িয়ে গেছে দর্শক–শ্রোতাদের। তবলায় ছিলেন শ্রীবাস দে ও সাউন্ডে ছিলেন ক্যারি রোজারিও। পুরো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের গ্রন্থনা করেন বনানী বাবলী।
সন্ধ্যা থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি উপেক্ষা করে মানুষের উপচে পড়া ভিড় ছিল পুরো সময়ে। প্রায় ২৭৫ গ্র্যাজুয়েট ও তাঁদের পরিবারের উপস্তিতিতে পুরো হলটি কানায় কানায় ভরে ওঠে সন্ধ্যার আগেই। অনেকেই আসন না পেয়ে দাঁড়িয়ে থেকে পুরো অনুষ্ঠানটি উপভোগ করেন।
সাধারণ সম্পাদক খোরশেদ খান সবাইকে বসার জায়গা দিতে না পারায় অপারগতা স্বীকার করে ১৩ জানুয়ারি ২০২৪ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাসোসিয়েশন অব কানাডা ইনকের অভিষেক অনুষ্ঠানে সবাইকে আসার আমন্ত্রণ জানান এবং প্রায় ৭০০ লোকের বসার মতো বড় হল বুকিং দেওয়া হয়েছে বলে সবাইকে অবহিত করেন।
রাত সাড়ে ১০টায় অনুষ্ঠানের সভাপতি শফিউদ্দিন আহমেদ, মদিনা গ্রিলের সুস্বাদু ও মজাদার খাবার পরিবেশন ও অনুষ্ঠানকে সাফল্যমণ্ডিত করার পেছনে জড়িত সবাইকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানান হল ম্যানেজমেন্ট কমিটির অনুপ সেনগুপ্ত ও তাঁর দলকে।
ফুড ম্যানেজমেন্ট কমিটির সুধান রায়, সরোয়ার জামান ও গিয়াস উদ্দিনকে। তিনি আরও ধন্যবাদ জানান রাজীব ঘোষ, সেলিনা সরোয়ার, নাজমুল মুনশি, বাহাউদ্দিন বাহার, বিশ্বজিৎ পাল, আজম মিয়া, কানিজ ফাতেমা, হুমায়ন কবির, তানভীর ববি, দেবরাজ বিশ্বাস, জহিরুল হক, কামরুল আলম, নাসিমা বেগম, শাহিদা, রওশন, কাজী বাসিত, প্রতিমা রানী সরকার, বাহাউদ্দিন রতনসহ সব কার্যকরী কমিটি, উপদেস্টা কমিটি ও রিজিওনাল কমিটির সদস্যদের।