অন্য রকম জন্মদিন

‘দূর পরবাস’-এ জীবনের গল্প, নানা আয়োজনের খবর, ভিডিও, ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]

ছবি: লেখকের পাঠানো

আজ তোমার জন্মদিন। সাফল্যে বিনম্র হও, মহৎ হয়ে আকাশ ছোঁও, সবার ভালোবাসা কুড়িয়ে যাও—এ প্রার্থনা আমার। তুমি কাছে নাই তো, তাই চলে যাওয়া জন্মদিনগুলোর কথা ভাবছি। ঈসা খাঁর রাজধানী সোনারগাঁয় সারা দিনের হইচই করে কাটানো জন্মদিন। জাদুঘর বন্ধ ছিল। তবে প্রাঙ্গণে রাখা জয়নুল আবেদিনের মহৎ শিল্পকীর্তি অবাক চোখে দেখেছিলে তোমরা।

আরেক জন্মদিনে তোমার মেজমামি ব্ল্যাক ফরেস্ট কেক নিয়ে হঠাৎ উদয় হয়ে কী আনন্দিত যে করেছিল তোমাদের। জন্মদিনে আসত আনন্দ আর উপহার নিয়ে।

তবে সেই জন্মদিনটার কথা বেশি মনে রাখার মতো। তোমার সেই জন্মদিনের কদিন আগে তোমার খেলার সাথি পাখি এল আমাদের বাড়ি। মিরপুর নাকি মোহাম্মদপুর থাকত সে। মা ছিল বিহারি। বাবা নিখোঁজ। ফরসা, ভাসা ভাসা চোখ, গোলগাল গড়নের শান্তশিষ্ট পাখিকে আমাদের বাড়ির সবার ভালো লাগল খুব। এবার তোমার জন্মদিনে তুমি পাখিকে কিছু উপহার দিতে চাও বললে তুমি। ক্লিপ, ফিতা না জামা? কী দেওয়া যায় ওকে? যা হোক, শেষে তোমাকে সঙ্গে নিয়ে পাখির জন্য জামা কিনে আনলাম। তবে পাখিকে তা জানতে দেওয়া হলো না।

জন্মদিনের ভোরে তুমি উঠে পাখির কাছে গেলে। এক হাতে জামা ধরে অন্য হাতে ঝাঁকিয়ে ওর ঘুম ভাঙালে। ও চোখ কচলে উঠে বসতেই ওর কোলের ওপর জামা রেখে বললে, ‘পাখি দেখ তোমার নতুন জামা!’ পাখি তো অবাক। ওর চোখে আনন্দের যে দ্যুতি ছড়াল, তা মনে রাখার মতো।

তার পর থেকে পরিবারে রেওয়াজ হয়ে গেল বাচ্চারা তাদের জন্মদিনে বাড়ির কাজ যাঁরা করতেন, তাঁদের জন্য উপহার কিনে দিয়ে তাঁদের খুশি করত। মুরুব্বিরাও ছোটদের এই উপহার কেনায়, সে উপহারটি লুকিয়ে রাখায় উৎসাহ নিয়ে সহযোগিতা করতেন। বিশাল বা বিরাট কোনো কিছু নয়। হয়তো একজোড়া স্যান্ডেল বা ইমিটেশনের কানের দুল, চুড়ি বা শীতের দিন হলে গায়ের চাদর, মুখে মাখার ক্রিম ইত্যাদি।

উপহার নিয়ে এবার মজার এক ঘটনা মনে পড়ল। একবার তোমার নানুর বাসার গৃহকর্মী মাখন কিংবা রাশি টেলিভিশনের বিজ্ঞাপনে ফেয়ার অ্যান্ড লাভলি (এখন নাম ফেয়ার অ্যান্ড গ্লো) ক্রিম দেখে বলল, ‘অহন থাইকা বকশিশের টাকা জমাবানে, তারপর ওইরম একখান ক্রিম কিনবানে।’ সেবার যার জন্মদিন প্রথম এল সে তোমার এক জ্ঞাতি বোন। সে ঘোষণা করল এবার গৃহকর্মীদের জন্য ফেয়ার অ্যান্ড লাভলি ক্রিম কিনে দিতে হবে। ক্রিম কেনা হলো, লুকিয়েও রাখা হলো। ওই দিন যখন তোমার নানুর ঘরের মেঝেতে গৃহকর্মীরা সবাই বসে টিভি দেখছে, তখন তাদের দুজনকে উপহার দুটো দেওয়া হলো আর বলা হলো, আপু উপহার কিনেছে, আপুর আজ জন্মদিন, ওর জন্য দোয়া করো। উপহার পেয়ে আনন্দে আত্মহারা ওরা। অবাক কাণ্ড, সহজ–সরল একটু বোকাসোকা রাশি উঠে বাচ্চা থেকে বুড়ো সবাইকে পায়ে হাত দিয়ে সালাম করতে শুরু করল। তখন তোমার নানু বলে উঠলেন,

ছবি: লেখকের পাঠানো

‘আরে আরে তুই করিস কী! দোয়া করবি, তা না করে ছোটবড় সবাইকে পায়ে হাত দিয়ে সালাম করছিস। এইটা কোন রীতি?’

রাশি চাঁদের হাসি মুখে ছড়িয়ে বলছিল, ‘নানু আমি এভাবেই দোয়া করি।’ আমরা সবাই হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়েছিলাম।

আজও হয়তো দূরে বাংলাদেশে তোমার জ্ঞাতি ভাই বা বোনেরা কোন পারুলী, ডালিম, মারুফা বা অন্য নামের ঘরের কাজে সাহায্যকারী কাউকে উপহার দিয়ে জন্মদিনের আননন্দ ভাগ করে নিচ্ছে।

তোমার কাজের মানুষ নাই, গাড়িচালকও তুমি নিজে। কাকে দাও জন্মদিনে উপহার? ইউনিসেফ নাকি ডক্টরস উইদাউট বোর্ডারস? যারা হতদরিদ্র ও যুদ্ধপীড়িতদের মাঝে কাজ করে।